ছুটি কমছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পেছাচ্ছে পরীক্ষার তারিখ

বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের টানা অবরোধ-হরতালে লেখাপড়ার ক্ষতি পুষিয়ে নেয়ার চেষ্টায়

 

স্টাফ রিপোর্টার: মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের জন্য সরকারিভাবে নির্ধারিত গ্রীষ্মকালীন ছুটি কমছে। একই সাথে অর্ধবার্ষিক পরীক্ষার তারিখ পেছানো এবং সাপ্তাহিক ছুটির দিনেও ক্লাস-পরীক্ষা নেয়ার নির্দেশনা আসতে পারে। বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের টানা ৯২ দিনের অবরোধ-হরতালে লেখাপড়ার ক্ষতি পুষিয়ে নেয়ার চেষ্টায় শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নীতিনির্ধারণী মহলে এমন চিন্তাভাবনা চলছে। এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করতে রোববার ঢাকায় জরুরি সভা ডাকা হয়েছে। এতে দেশের বিভিন্ন এলাকার ২০ জন অধ্যক্ষ ও প্রধান শিক্ষক অংশ নেবেন বলে জানা গেছে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বশীল সূত্র জানায়, আন্দোলনে শিক্ষার ক্ষতি পুষিয়ে নিতে সাপ্তাহিক ও গ্রীষ্মকালীনসহ বিভিন্ন ধরনের ছুটি যদি কমেও পবিত্র রমজান মাসের ছুটি কমানো হবে না। সেটা যথারীতি ঘোষিত শিক্ষাপঞ্জি অনুযায়ী ঠিক রাখা হবে।

রোববারের সভাটি সমন্বয় করছেন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব রুহী রহমান এবং মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতরের (মাউশি) পরিচালক অধ্যাপক ড. শেখ মো. ওয়াহিদুজ্জামান। জানতে চাইলে তিনি বৃহস্পতিবার বিকালে বলেন, রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার কারণে শিক্ষা কার্যক্রমের যে ক্ষতি হয়েছে তা কীভাবে পুষিয়ে নেয়া যায় বা এর জন্য কে কোন পন্থায় কাজ করছে- তা জানার পাশাপাশি সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্য এ সভা ডাকা হয়েছে। এতে ঢাকার বাইরের বিভিন্ন এলাকার মোট ১০ জন কলেজ অধ্যক্ষ ও ১০ জন প্রধান শিক্ষক যোগ দেবেন। তাদের মতামত নিয়েই মন্ত্রণালয় সিদ্ধান্ত নেবে। কোনো কিছু চাপিয়ে দেয়া হবে না।

গত ডিসেম্বরে শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে নিম্ন মাধ্যমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ের স্কুল ও মাদ্রাসা এবং একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণির পাঠদানকারী কলেজ ও মাদরাসার জন্য পৃথক শিক্ষাপঞ্জি জারি করা হয়। সে অনুযায়ী কলেজ পর্যায়ে গত ১ মে শুরু হয়েছে গ্রীষ্মকালীন ছুটি। শেষ হবে ১৬ মে। আর মাধ্যমিক ও নিম্ন মাধ্যমিক পর্যায়ে গ্রীষ্মকালীন ছুটি ১৩ মে শুরু হয়ে শেষ হবে ২৮ মে। নাম প্রকাশ না করে একটি সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ বলেন, কলেজগুলোর ছুটি শুরু হলেও ঘোষণা ছাড়াই স্বয়ংক্রিয়ভাবে তা বাতিল হয়ে গেছে। শিক্ষকদের তা দেয়া হয়নি। কেউ কেউ ক্লাস নিচ্ছেন, আবার অনেকে এইচএসসি পরীক্ষায় দায়িত্ব পালন করছেন।

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা জানান, রাজনৈতিক কারণে দেশের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ৯২ দিন ধরে লেখাপড়া হয়নি। যদিও সব প্রতিষ্ঠানের পরিস্থিতি সমান ছিল না। এমন শহরও আছে যেখানে কোনো প্রভাব পড়েনি, কিন্তু অনেক গ্রামেও এমন পিকেটিং হয়েছে যে সেখানে স্কুল খোলা যায়নি। তবে এই কর্মসূচির সবচেয়ে বড় শিকার ছিল শহরাঞ্চল, বিশেষ করে রাজধানী এবং বিভাগীয় শহরের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছাত্রছাত্রীরা। বাংলা মাধ্যমের স্কুল মাঝে-মধ্যে খুললেও ইংরেজি মাধ্যমের স্কুল তো পুরোপুরিই বন্ধ ছিল। রোববারের বৈঠকে এসব বিষয়ে আমরা আমন্ত্রিত প্রধান শিক্ষক ও অধ্যক্ষদের অভিজ্ঞতা ও বক্তব্য শুনব।

তবে আরেকটি সূত্র জানায়, শিক্ষার ক্ষতি পুষিয়ে নিতে মন্ত্রণালয়ের দুজন যুগ্ম সচিবের সমন্বয়ে একটি দল পর্যালোচনা করে সারসংক্ষেপ ও প্রস্তাবনা তৈরি করেছে। ওই প্রস্তাবনায় মাধ্যমিকের গ্রীষ্মকালীন ছুটি ১৩ দিনের মধ্যে সর্বোচ্চ ৭ দিন এবং কলেজ পর্যায়ে ১৬ দিনের মধ্যে ৭ দিন কমানোর কথা বলা হয়েছে। আর মাধ্যমিকের অর্ধবার্ষিক পরীক্ষা প্রয়োজনে সর্বোচ্চ ১৫ দিন পেছানোর প্রস্তাব রয়েছে। এ বাড়তি সময়ে সব বিষয় না পারলেও বাংলা, ইংরেজি গণিতসহ গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের ক্লাস নিতে বলা হবে। তবে বিষয়টি অধ্যক্ষ ও প্রধান শিক্ষকদের মতামত নিয়েই চূড়ান্ত করা হবে।

এদিকে রাজনৈতিক কর্মসূচির কারণে সৃষ্ট ক্ষতি পোষাতে ইতিমধ্যে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নিজেদের পদ্ধতি গ্রহণ করেছে। মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল ও কলেজের অধ্যক্ষ ড. শাহানআরা বেগম বৃহস্পতিবার বলেন, ক্ষতি পোষাতে আমরা শনিবারেও ক্লাস নেয়া শুরু করেছি। এটা করে পঞ্চম ও দশম শ্রেণির সিলেবাস শেষ করা সম্ভব হয়েছে। বাকি শ্রেণির সিলেবাস শেষ করতে আমরা গ্রীষ্মকালীন ছুটি এক সপ্তাহ কম নেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।

অধ্যাপক ওয়াহিদুজ্জামান জানান, শুধু আইডিয়ালই নয়, বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নিজস্ব পদ্ধতি প্রয়োগ করেছে। আমরা তাদের কথা শুনেই পরবর্তী নির্দেশনা দেব।