গাংনী খাদ্যগুদামে প্রতিবস্তা গমে ৬৫ টাকা উৎকোচ!

গাংনী প্রতিনিধি: মেহেরপুর গাংনী খাদ্যগুদামে গম কেনার ক্ষেত্রে চাষিদের কাছ থেকে বস্তাপ্রতি ৬৫ টাকা করে কেটে নেয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এতে তীব্র ক্ষোভ বিরাজ করছে ভুক্তভোগী চাষিদের মাঝে। স্থানীয় কয়েকজন ব্যক্তি এ কাজের সাথে জড়িত বলে অভিযোগ চাষিদের।

গাংনীর শিশিরপাড়া গ্রামের চাষি মাজেদুল ইসলাম অভিযোগ করেন, গত মঙ্গলবার তিনি ৩ টন গম খাদ্যগুদামে বিক্রি করেন। গত বুধবার সন্ধ্যায় টাকা আনতে গেলে বস্তা প্রতি (৫০ কেজি ওজনের) ৬৫ টাকা করে কেটে নেন স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা শফি। একই কথা জানালেন বড় বামন্দী গ্রামের চাষি রেজাউল ইসলাম। তিনি আরো জানান, খাদ্যগুদামের কর্মকর্তাসহ প্রশাসনের লোকজনের খরচের জন্য টাকা নেয়া হচ্ছে বলে শফিসহ তার কয়েকজন সঙ্গী চাষিদের জানান। অনেক চাষি টাকা দিতে অপরাগতা প্রকাশ করলেও এক প্রকার জোরপূর্বক কেটে নেয়া হয়।

ভুক্তভোগী চাষীদের অভিযোগ, গম বিক্রির বিভিন্ন জটিলতার কারণে কয়েক দিন ধরে অনেক চাষি গুদামের সামনে গম রেখে পাহারা করছেন। এতে তাদের খরচ বৃদ্ধি পেয়েছে। এর মধ্যে ৬৫ টাকা করে কেটে নেয়ায় লাভের বদলে লোকসানের মুখে পড়েছেন চাষীরা। তাই ভুক্তভোগীদের বিরুদ্ধে তারা সরকারি বিভিন্ন দপ্তরে মৌখিকভাবে অভিযোগ করেছেন।

এদিকে অভিযোগের প্রেক্ষিতে বুধবার সন্ধ্যায় গাংনী থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা উপজেলা পরিষদ এলাকায় অভিযান পরিচালনা করেন। টাকা কর্তনকারীদের আটক করতে পুলিশের তৎপরতা শুরু হলে তারা গুদাম এলাকা ত্যাগ করে। খাদ্য কেনাকালে চাষি ছাড়া অন্য কেউ যদি গুদাম এলাকায় অবস্থান করে তাহলে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থানের হুঁশিয়ারি করেন তিনি। এর প্রেক্ষিতে গতকাল বৃহস্পতিবার অবশ্য গুদাম এলাকায় চাষি ছাড়া অন্য কেউ প্রবেশ করেননি।

এ প্রসঙ্গে গাংনী থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আকরাম হোসেন বলেন, অভিযোগ পেয়ে বুধবার সন্ধ্যায় ওই এলাকায় অভিযান চালানো হলে টাকা গ্রহণকারীরা পালিয়ে যায়। কর্তনকৃত টাকা ফেরত দিতে বলা হয়েছে। অন্যথায় জড়িতদের আইনের আওতায় আনা হবে। এর সাথে খাদ্য গুদামের কেউ জড়িত আছে কি-না তাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক ও খাদ্য গুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে এ বিষয়ে সতর্ক করা হয়েছে।

গাংনী খাদ্য গুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি এলএসডি) ফুল জামাত আলী টাকা কর্তনের অভিযোগ অস্বীকার করে জানান, এর সাথে গুদামের কেউ জড়িত নন। কেউ যদি তাদের নামে উৎকোচ গ্রহণ করে তাহলে তার দায় তাকেই নিতে হবে।

উল্লেখ্য, চলতি মরসুমে গাংনী খাদ্য গুদামে সরকারি খাদ্য কেনা কর্মসূচির আওতায় ৩ হাজার ৭৪ মেট্টিক টন গম কেনা হবে। গত মঙ্গলবার ৩৫ মেট্টিকটন গমসহ ১৫৮ দশমিক ৫ মেট্রিক টন গম কেনা হয়েছে। ইতোমধ্যে পাঁচ শতাধিক চাষি গম বিক্রির জন্য সিরিয়াল ভুক্ত হয়েছেন। পর্যায়ক্রমে ওই চাষিদের কাছ থেকে সর্বোচ্চ তিন মেট্রিক টন করে গম কেনা হবে। নানা নাটকীয় পরিস্থিতির পর অবশেষে কৃষকদের কাছ থেকে গম কেনা হয়।