৪টি পরিবার হারিয়েছে মাথাগোজার ঠাঁই : ভিটেই চরছে ঘুঘু

দামুড়হুদার জয়রামপুরের মন্টু হত্যার ১ বছর পূর্ণ : আহত মোফা এখন পথের ভিখেরি

 

বখতিয়ার হোসেন বকুল: দামুড়হুদার জয়রামপুর দোহার ধারে সরকারি খাসজমিতে বসবাসকারী মন্টু হত্যার ঘটনা গতকাল ৬ মে বুধবার ১ বছর পূর্ণ হয়েছে। গত ২০১৪ সালের ৬ মে রাত ১২টার দিকে জয়রামপুর জলাশয়ের নৈশপ্রহরী মন্টুকে এলাকার দুর্বৃত্তরা জবাই করে হত্যা করে। নিহত মন্টুর মা হাজেরা বেগম বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা ৫-৬ জনের নামে দামুড়হুদা থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। এর আগে ২২ এপ্রিল রাতে দুর্বৃত্তরা ঘুমন্ত অবস্থায় কুপিয়ে খুন করে জয়রামপুর চৌধুরীপাড়ার বাসিন্দা আমজাদকে (৫২)। এরপর ২৪ এপ্রিল রাত ৯টার দিকে একই পাড়ার দোকানি আবুল কাশেমকে কুপিয়ে জখম করা হয় এবং পরদিন ২৫ এপ্রিল রাতে জয়রামপুর বারুইপাড়ার ভাজা বিক্রেতা বুদো ও তার স্ত্রী রহিদাকে ঘুমন্ত অবস্থায় কুপিয়ে রক্তাক্ত জখম করে দুর্বৃত্তরা। এরপর ৪ মে রাতে জয়রামপুর ডাক্তারপাড়ার ভাজা বিক্রেতা হতদরিদ্র মোফা ও তার শিশুকন্যা খাদিজাকে নিজ ঘরের বিছানায় ঘুমিয়ে থাকা অবস্থায় ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে ক্ষত-বিক্ষত করে দুর্বৃত্তরা এবং সর্বশেষ একই সালের ৬ মে রাত ১২টার দিকে জয়রামপুর চৌধুরীপাড়ার জলাশয়ের নৈশপ্রহরী মন্টুকে কুপিয়ে ও গলাকেটে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। দুর্বৃত্তরা মাত্র ১৫ দিনের মধ্যে একই কায়দায় কুপিয়ে দুজনকে খুনসহ রক্তাক্ত জখম করে তিনজনকে। একর পর এক হত্যার ঘটনায় গোটা জয়রামপুর জুড়ে শুরু হয় খুন আতঙ্ক। ঘটনার সাথে জড়িতদের ধরতে মডেল থানার ওসি সিকদার মশিউর রহমানের নেতৃত্বে জয়রামপুর গ্রামে অভিযান পরিচালিত হয় এবং মন্টু হত্যার প্রধান আসামি জয়রামপুর ডাক্তারপাড়ার আলমগীরসহ ৫ জনকে গ্রেফতার করে থানা পুলিশ। তাদের স্বীকারোক্তি মোতাবেক পুলিশ আসানের বাড়ি থেকে ২টি ডাসা, ৩টি ভুজালি ১টি চাকু এবং জাহিদ ও বাবুর বাড়ি থেকে একটি করে হেসো উদ্ধার করে।

আটক ৫ জনকেই আদালতে সোপার্দ করলে আদালতের বিজ্ঞ বিচারক জেলহাজতে প্রেরণের আদেশ দেন। মামলার অন্য আসামিরা হলো- জয়রামপুর মল্লিকপাড়ার আব্দুস সাত্তারের ছেলে জাহিদ (২৮), একই গ্রামের ডাক্তারপাড়ার লালচাঁদ মণ্ডলের ছেলে বাবু (৩৫) ও বারুই পাড়ার মৃত রবিউল ইসলামের ছেলে আসান ওরফে তোতাকে (৩৫)। গতকাল বুধবার মন্টু হত্যার ঘটনা ১ বছরের মাথায় দুর্বৃত্তদের ধারালো অস্ত্রের কোপে রক্তাক্ত জখমরাকে কেমন আছেন তা জানতে যাওয়া হয় সরেজমিন।

মন্টু হত্যার দু মাসের মাথায় স্ত্রী মনোয়ারা (২৮) তার ৬ বছর বয়সী ছেলে মাহফুজকে দাদির কাছে রেখে ঢাকায় পাড়ি জমিয়েছে। এরপর থেকেই নিহত মন্টুর বৃদ্ধ মা হাজেরা বেগম তার ৬ বছর বয়সী নাতিকে সাথে নিয়ে অন্যের বাড়িতে বসবাস করছেন। দোহারধার এলাকায় সরকারি খাসজমিতে বসবাসরত মৃত রমজান মণ্ডলের ছেলে শাহাবদ্দিন ওরফে বদ্দিন, অপর বাসিন্দা তুলা শ্রমিক মৌসুমীর নানি রাবেয়া খাতুন ও নিহত মন্টুর মা হাজেরা বেগম, স্ত্রী মনোয়ারা খাতুন সন্তানসহ সকলেই খুন আতঙ্কে নিজ নিজ পরিবার নিয়ে এলাকা ত্যাগ করেন। বর্তমানে ওই ভিটেই ঘুঘু চরছে। দুর্বৃত্তদের ধারালো অস্ত্রের কোপে রক্তাক্ত জখম জয়রামপুর ডাক্তারপাড়ার বাসিন্দা মোফা এখন ভিক্ষা করে জীবিকা নির্বাহ করে। দিন কাটাচ্ছেন নিদারুন কষ্টে। বারুই পাড়ার বাসিন্দা স্কুলে স্কুলে ঝাল মুড়ি বিক্রেতা বুদো পড়েছে অথৈই সাগরে। স্ত্রী রহিদা খাতুন দিনমজুর করে কোনোমতে সংসার চালাচ্ছেন। দুর্বৃত্তদের ধারালো অস্ত্রের কোপে রক্তাক্ত জখম জয়রামপুর চৌধুরীপাড়ার বাসিন্দা কাশেম হারিয়েছেন কাজ করার সক্ষমতা। আর জয়রামপুর চৌধুরী পাড়ার আমজাদ হত্যার ঘটনায় দায়েরকৃত মামলার বাদী স্ত্রী সুফিয়া আসামি পক্ষের সাথে প্রায় সাম পাঁচেক আগে ১ লাখ ১০ হাজার টাকায় আপস-মীমাংসা করেছেন। এদিকে মামলার প্রধান আসামি আলমগীর এখনও পর্যন্ত জেলহাজতে থাকলেও অন্য ৪ আসামি হাইকোর্ট থেকে জামিনে মুক্ত হয়ে এলাকায় ফিরেছে। এরমধ্যে আসামি আসান জামিনের পরপরই ভারতে পাড়ি জমিয়েছে বলে এলাকাসূত্রে জানা গেছে। এ মামলায় আলমগীরসহ ওই ৫ জনের নামে চার্জশিট দেয়া হয়েছে বলে তদন্তকারী কর্মকর্তা দামুড়হুদা মডেল থানার ওসি (তদন্ত) ফকির আজিজুর রহমান জানান।