ব্রিটিশ পার্লামেন্ট নির্বাচন আজ : আলোচনায় ১১ বাঙালি প্রার্থী

মাথাভাঙ্গা মনিটর: ব্রিটিশ পার্লামেন্ট নির্বাচন আজ। এটি ৫৬তম পার্লামেন্ট নির্বাচন। আর দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ১৯৪৫ সাল থেকে শুরু করে এটি ১৮তম জাতীয় সংসদ নির্বাচন। প্রথা অনুযায়ী ৩০ মার্চ বর্তমান প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন রানী দ্বিতীয় এলিজাবেথের সাথে সাক্ষাৎ করে পার্লামেন্ট ভেঙে দেয়ার অনুমতি নেন। পরে ৭ মে নির্বাচনের তারিখ নির্ধারিত হয়। ৯ এপ্রিল ছিল মনোনয়ন জমাদান এবং প্রত্যাহারের শেষ দিন। আজ সকাল ৭টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত টানা ভোটগ্রহণ চলবে। পরে টাউন হলগুলোতে ভোট গণনা করা হবে। হাউস অব কমন্সের ৬৫০টি আসন। এবার এমপি প্রার্থী হয়েছেন ৩ হাজার ৯৬৩ জন। অধিকাংশ প্রার্থীই সাতটি রাজনৈতিক দলের নেতা ও কর্মী। প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের মধ্যে রয়েছে ক্ষমতাসীন কনজারভেটিভ পার্টি ও প্রধান বিরোধী দল লেবার পার্টি। এ ছাড়াও লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি, ইউকে ইনডিপেনডেন্ট পার্টি, গ্রিন পার্টি, স্কটিশ ন্যাশনাল পার্টি-এসএনপি ও পেইড কিমরু পার্টিও এ নির্বাচনে লড়ছে। এসব রাজনৈতিক দলের বাইরেও কিছু ছোট ছোট দল থেকে প্রার্থী হয়েছেন অনেকেই। স্বতন্ত্র থেকেও প্রার্থী আছে। একক কোনো দল ক্ষমতায় যেতে হলে তাদেরকে ৩২৬টি আসনে জয় লাভ করতে হবে। নির্বাচনী লড়াইয়ে এখন পর্যন্ত প্রধান দুটি রাজনৈতিক দল কনজারভেটিভ পার্টি ও লেবার পার্টি এগিয়ে রয়েছে। তৃতীয় স্থানে আছে লিবারেল ডেমোক্রেট পার্টি। এখন পর্যন্ত সবগুলো জরিপ বলছে, একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা এবারও কোনো দল পাবে না। ছোট দলগুলোর সঙ্গে কোয়ালিশন করে অধিকাংশ আসনে বিজয়ী দলকে সরকার গঠন করতে হবে। এটি ৫৬তম ব্রিটিশ পার্লামেন্ট নির্বাচন। আর দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ১৯৪৫ সাল থেকে শুরু করে এটি ১৮তম জাতীয় সংসদ নির্বাচন।

এবারের ২০১৫ সালের পার্লামেন্ট নির্বাচনে সবচেয়ে বেশি আলোচনা হচ্ছে বাংলাদেশী বংশদ্ভূত ১১ জন প্রার্থীকে নিয়ে। চলমান এই নির্বাচনে শুধু প্রবাসী বাংলাদেশীই নয়, খোদ ব্রিটিশদের মধ্যেও অন্যতম আলোচনায় ওঠে এসেছে এসব বাংলা ভাষাভাষী প্রার্থীদের নাম। বিশেষ করে সাবেক এমপি রুশনারা আলী ও টিউলিপ রেজওয়ানা সিদ্দিককে নিয়েই ভোটারদের আগ্রহ বেশি। ইতিমধ্যেই ভোটার জরিপে তাদের বিজয়ের ব্যাপারে ইতিবাচক ইঙ্গিতও পাওয়া গেছে। অন্যান্য অন্তত ৩টি আসনে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হবে বলেও অভিমত রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের।

তিনটি প্রধান রাজনৈতিক দল থেকে ১১ জন ব্রিটিশ বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত নির্বাচন করছেন। এর মধ্যে প্রধান বিরোধী দল লেবার পার্টি থেকে মনোনয়ন দেয়া হয়েছে সর্বোচ্চ ৭ জন বাঙালি প্রার্থীকে। ক্ষমতাসীন কনজারভেটিভ পার্টি থেকে মনোনয়ন পেয়েছেন একজন। আর তৃতীয় রাজনৈতিক শক্তি বলে পরিচিত লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি মনোনয়ন দিয়েছে ৩ জন বাঙালি প্রার্থীকে।

লেবার পার্টির বাঙালি প্রার্থীদের মধ্যে পূর্ব লন্ডনের বেথনাল গ্রিন অ্যান্ড বো নির্বাচনী এলাকা থেকে মনোনয়ন পেয়েছেন সাবেক এমপি রুশনারা আলী। লন্ডনের হ্যাম্পস্টেড অ্যান্ড কিলবার্ন আসনে মনোনয়ন পেয়েছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নাতনি শেখ রেহানার মেয়ে টিউলিপ রেজওয়ানা সিদ্দিক। লন্ডনের ইলিং সেন্ট্রাল অ্যান্ড একটন আসনে লড়ছেন ড. রুপা আশা হক। বেকহাম আসন থেকে মনোনয়ন পেয়েছেন মেরিনা আহমদ। ওয়েলউইন অ্যান্ড হ্যাটফিলড আসনে ব্যারিস্টার আনওয়ার বাবুল মিয়া। রিগেইট অ্যান্ড বানস্টেড আসনে আলী আখলাকুল ইসলাম ও নর্থ-ইস্ট হ্যাম্পাশায়ার আসনে এমরান হোসাইন মনোনয়ন পেয়েছেন। লিবারেল ডেমোক্রেটেক পার্টি থেকে তিনজন বাঙালি মনোনয়ন পেয়েছেন। এদের মধ্যে নর্থ হ্যাম্পটন সাউথ আসনে প্রার্থী হয়েছেন প্রিন্স সাদিক চৌধুরী। লুটন সাউথ আসনে মনোনয়ন পেয়েছেন আশুক আহমদ এবং ওয়েলসের আর্ফন আসনে প্রার্থী হয়েছেন মোহাম্মদ সুলতান। ক্ষমতাসীন কনজারভেটিভ দল থেকে একজন মাত্র বাঙালি এবারের নির্বাচনে মনোনয়ন পেয়েছেন। তিনি হচ্ছেন মিনা রহমান। লড়ছেন লন্ডনের বার্কিং আসন থেকে। এছাড়া বেশ কিছু বাঙালি বিভিন্ন শহরে কাউন্সিলর পদের প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।

প্রতি ৫ বছর পর পর ব্রিটেনে জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। ১৯৭৪ সালে একই বছর দুবার জাতীয় সংসদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছিল। সংসদে সংখ্যাগরিষ্ঠতার সংকটে পড়লে ওই বছর ফেব্র“য়ারি এবং অক্টোবরে দুদফা নির্বাচন করতে হয়েছিল। পরপর তিনবার একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে লেবার পার্টি ১৯৯৭ সাল থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত ক্ষমতাসীন ছিল। ২০১০ সালে এসে তাদের সেই জনপ্রিয়তার চরম ভরাডুবি ঘটে। ইরাক যুদ্ধে অংশ গ্রহণই ছিল তাদের সেই ভরাডুবির প্রধান কারণ। আর আগে বেশ কয়েকটি নির্বাচনে লেবার পার্টি ভালো ফলাফল করে একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে সরকার গঠন করেছিল। ১৯৯৭ সালে লেবার পার্টি ৪১৯টি আসন পেয়ে সরকার গঠন করে। তখন প্রধান বিরোধী দল কনজারভেটিভ পার্টি ১৬৫টি আসন পায়। তৃতীয় রাজনৈতিক দল লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি আসন ছিল ৪৬টি। প্রধানমন্ত্রী হন নিউ লেবারের প্রবর্তক টনি ব্লেয়ার।

২০০১ সালের সাধারণ নির্বাচনে লেবার পার্টি ৪১৩টি আসন লাভ করে। কনজারভেটিভ পার্টি ১৬৬টি আসন পেয়ে দ্বিতীয় অবস্থানে থাকে। লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি আসন পেয়েছিল ৫২টি। সে বছরও লেবার পার্টি একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে ক্ষমতায় আসে। প্রধানমন্ত্রী হন আবারও টনি ব্লেয়ার। ২০০৫ সালে নির্বাচনে লেবার পার্টি আসন ছিল ৩৫৬টি। প্রধান বিরোধী দল কনজারভেটিভ পার্টি ১৯৮টি আসন লাভ করে। লিভারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি ৬২টি আসন পায়। এবারও সরকার গঠন করে লেবার পার্টি। প্রধানমন্ত্রী হন আবারও টনি ব্লেয়ার। ২০১০ সালে নির্বাচনে লেবার পার্টি ব্যাপক ভরাডুবি হয়। এ বছর সংসদে তারা আসন প্রায় ২৫৮টি। কনজারভেটিভ পার্টি ৩০৬টি আসনে লাভ করে। লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি পায় ৫৭টি আসন। পরে লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির সঙ্গে মিলে কনজারভেটিভ পার্টি কোয়ালিশন সরকার গঠন করে। কনজারভেটিভ পার্টির ডেভিড ক্যামেরন হন প্রধানমন্ত্রী, কোয়ালিশনের অপর শরিক দল লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির নিক ক্লেগ উপ-প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব নেন।