বাজেট বাস্তবায়নে সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা জরুরি

 

এটা বলার অপেক্ষা রাখে না যে, বেশ কয়েক বছর ধরে ঝুঁকি নিয়ে চলছে দেশের অর্থনীতি। এছাড়া একের পর এক রাজনৈতিক সহিংসতায় চ্যালেঞ্জে পড়েছে সামষ্টিক অর্থনীতিও। বিভিন্ন সংস্থার তথ্য অনুযায়ী বর্তমানে বেসরকারি বিনিয়োগও শূন্যের কোটায়। রপ্তানি আয়, রাজস্ব, ব্যাংকিং খাত, পণ্যসেবা, শেয়ারবাজার, বৈদেশিক সহায়তাসহ কোনো খাতের চিত্রই সুখকর নয়। এ অবস্থায় আগামী জুনে ২০১৫-১৬ অর্থবছরের জন্য বাজেট ঘোষণা করতে যাচ্ছে সরকার। আর জানা যাচ্ছে যে, এবারের বাজেট প্রায় তিন লাখ কোটি টাকার, যা হবে দেশের ইতিহাসে সর্ববৃহৎ বাজেট।

আমরা বলতে চাই, অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড একটি ধারাবাহিক প্রক্রিয়া। ফলে আগের বছরের ভিত্তি থেকেই পরবর্তী বছরের ভিত রচিত হয়। তাই যদি বাজেট নির্ধারণ করে তার যথাযথ বাস্তবায়ন ঘটানো সম্ভব হয় তবে তা দেশ ও মানুষের স্বার্থে সার্বিকভাবেই ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে। কিন্তু আশঙ্কাজনক হলেও সত্য যে, আয় নিয়ে ঝুঁকি থাকলে এবং বাস্তবতার সাথে সঙ্গতিপূর্ণ বাজেট না হলে তার যথার্থ বাস্তবায়নও অনিশ্চিত হয়ে পড়ে। আর বিশাল অঙ্কের বাজেট হলেও যদি তার পরিপ্রেক্ষিতে বাস্তবায়ন অনিশ্চিত হয়ে পড়ে তবে সে ক্ষেত্রে জনস্বার্থই বিঘ্নিত হবে। অর্থনীতিবিদরা এ বিশাল অঙ্কের বাজেটের পরিপ্রেক্ষিতে বলছেন, ২০১৪-১৫ বা তার আগের অর্থবছরের বাজেটের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ ও অর্জনে বড় ধরনের পার্থক্য রয়েছে। অধিকাংশ ক্ষেত্রে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে অনেক পেছনে রয়েছে দেশ। এ ছাড়া বছরের পর বছর লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত না হওয়ায় বাজেটের প্রতি মানুষের বিশ্বাসযোগ্যতাও কমে যেতে পারে। বাজেট বিষয়টিকেই মানুষ হালকাভাবে নিতে শুরু করতে পারে, এমন আশঙ্কাকেও এড়িয়ে যাওয়া যায় না। এর আগেও আমরা দেখেছি যে, আগের বছরের চেয়ে পরের বছরে বাজেটের আকার বাড়ে। কিন্তু আমরা মনে করি, বাজেটের অঙ্ক কতোটা তার চেয়ে জরুরি হলো বাস্তবায়ন। সঙ্গত কারণে আয়-ব্যয়ের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ বাজেট হবে এমনটি প্রত্যাশিত। এটা মনে রাখা দরকার, বাংলাদেশ একটি উন্নয়নশীল দেশ। ফলে এখানে সম্পদের সীমাবদ্ধতা যেমন রয়েছে, তেমনি জনসংখ্যাবহুল সমস্যার ভিত্তিতে নানা রকম সঙ্কটও বিদ্যমান। তাই এটা নিশ্চিত করেই বলা যায় যে, বাজেট বরাদ্দের ক্ষেত্রে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য কিংবা আবেগের চেয়ে যুক্তিকে গুরুত্ব দিলে সেক্ষেত্রে বেশি সুফল ভোগ করবে এ দেশের মানুষ।

পত্রিকায় প্রকাশিত বাজেট-সংক্রান্ত প্রতিবেদন ও অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ সূত্রে জানা যাচ্ছে, আগামী অর্থবছরের বাজেট প্রণয়নের কাজ পুরোদমে এগিয়ে চলেছে। বর্তমান হিসাবে আগামী অর্থবছরে বাজেটের আকার গিয়ে ঠেকছে ২ লাখ ৮৯ হাজার কোটি টাকায়। একই বছরের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) হবে ৯২ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরে যা ছিলো ৮০ হাজার ৩১৫ কোটি টাকা। তবে পরিস্থিতি অনুযায়ী বাজেটের আকার ২ লাখ ৯৫ হাজার কোটি টাকায় পেঁৗছাতে পারে। এমনকি স্বয়ং অর্থমন্ত্রীও আগামী বাজেটের আকার ৩ লাখ কোটি টাকা হওয়ার ইঙ্গিত দিয়েছেন। এটা উল্লেখ্য, আগামী বাজেটে বাস্তবায়নের সক্ষমতা না থাকলেও লোক দেখানো অসংখ্য প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে বলেও জানা যাচ্ছে। বিশেষজ্ঞরাও বলছেন, আগামী বাজেটে আয়-ব্যয়ের যে হিসাব করা হচ্ছে, তা বাস্তবসম্মত নয়। এ ক্ষেত্রে বাস্তবতাকে পাশ কাটিয়ে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যকেই বেশি গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। আমরা মনে করি, বাজেট প্রণয়নের ক্ষেত্রে উঠে আসা এসব বিষয়কে আমলে নেয়া প্রয়োজন।
আমরা বলতে চাই, একটি রাষ্ট্রকে উন্নয়নের ধারায় এগিয়ে নিতে ও সার্বিক ক্ষেত্রে স্বাভাবিক গতিশীলতা বজায় রাখতে হলে বাজেট প্রণয়নই শেষ কথা নয়, এর যথাযথ বাস্তবায়নই বেশি জরুরি। জাতীয় আয়ের ক্ষেত্রে যেসব খাত উল্লেখ করা হচ্ছে, বর্তমানে সেসব খাতের প্রবৃদ্ধি হতাশাজনক। চলতি অর্থবছরে সরকার রাজস্বের যে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে, স্বাভাবিক সময়েই তা আদায় করা কঠিন। একই সাথে আগামী বছরে যে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হচ্ছে, তা আদায়ও অবাস্তব বলে মনে করছে বিভিন্ন মহল। ফলে সার্বিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে আগামী বাজেট নির্ধারণ হোক এবং তা বাস্তবায়নে সরকার সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা জারি রাখুক এমনটি আমাদের প্রত্যাশা।

Leave a comment