দীর্ঘ ছয়মাসেও উদঘাটন হয়নি মহেশপুরের সেনা সদস্যের মৃত্যুর রহস্য

 

স্টাফ রিপোর্টার: ঝিনাইদহের মহেশপুর উপজেলার বাসিন্দা এক সেনা সদস্য কর্মস্থল থেকে ছুটিতে বাড়ি যাওয়ার পথে নিখোঁজ হন। এরপর পাবনা থেকে তার লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। বিগত ছয় মাস পেরিয়ে গেলেও তার মৃত্যুর রহস্য জানা যায়নি। নিহত সেনা সদস্যের নাম ওবায়দুল হক (৩৪)।

ওবায়দুল হকের বাড়ি ঝিনাইদহ জেলার মহেশপুর থানার সাহাবাজপুর গ্রামে। তিনি বগুড়ার মাঝিরা সেনানিবাসে কর্মরত ছিলেন। গত বছরের ২ অক্টোবর ঈদের ছুটিতে বাড়ি যাওয়ার উদ্দেশে তিনি সেনানিবাস থেকে রওনা হন। ওই দিন সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টার দিকে ফোন করে নাটোর পর্যন্ত এসেছেন বলে বাড়িতে জানান। এরপরে তিনি পাবনার দাশুড়িয়ার মোড় থেকে কুষ্টিয়ার বাস ধরবেন বলেও জানান। কিন্তু সন্ধ্যা সাতটার পর থেকে আর তার সাথে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।

নিহতের ছোট ভাই লিমন জানান, ওই দিন সন্ধ্যায় সর্বশেষ তার পরিবারের সাথে ওবায়দুলের কথা হয়। এরপর আর তার সাথে যোগাযোগ করা যায়নি। এর ১৩ দিন পর ১৫ অক্টোবর পাবনা জেলার মাজিদপুর গ্রামে মেন রোডের পাশের একটি ডোবা থেকে তার লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।

তিনি জানান, নিখোঁজের ঘটনা তার কর্মস্থলে জানানোর পর ৪ অক্টোবর সন্ধ্যায় সিনিয়র ওয়ারেন্ট অফিসার বগুড়া সেনানিবাসের ওয়ারেন্ট অফিসার আসগর আলী বগুড়ার শাজাহানপুর থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন। তার লাশ উদ্ধারের পর ১৬ অক্টোবর তিনি একটি মামলা দায়ের করেন। প্রথমে মামলাটি পাবনা সদর থানায় এসআই অরবিন্দ তদন্ত করলেও পরবর্তীতে পাবনার সিআইডিকে মামলাটি তদন্তের দায়িত্ব দেয়া হয়। বর্তমানে সিআইডি কর্মকর্তা (পরিদর্শক) আব্দুল আজিজ মামলাটি তদন্ত করছেন।

তদন্তের অগ্রগতির বিষয়ে সিআইডি কর্মকর্তা (পরিদর্শক) আব্দুল আজিজ জানান, নিখোঁজের ১৩ দিন পর তার গলিত লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। ময়নাতদন্তের রিপোর্টে মৃত্যুর উল্লেখযোগ্য কোনো কারণ দেখানো হয়নি। পুলিশকে তদন্ত করে বের করতে বলা হয়ছে। ভিসেরা রিপোর্টের জন্য ঢাকায় পাঠানো হয়েছে।

তিনি আরো বলেন, নিহতের ব্যবহৃত মোবাইলফোনটির আইএমই নম্বর পুলিশ সদর দফতরে পাঠানো হয়েছে। যদি মোবাইলফোনটি ব্যবহৃত হয়, তাহলে হয়তো কোনো কিছু বের হতে পারে। এছাড়া কোনো অগ্রগতি নেই।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ধারণা নিহত ওবায়দুল ঘটনার দিন বিআরটিসি বাসযোগে কালীগঞ্জ বাজার পর্যন্ত এসেছিলেন। বিআরটিসি বাসের এক হেলপার ৱ্যাবকে এ তথ্য জানায়। কিন্তু কালীগঞ্জ আসার পর কীভাবে তিনি নিখোঁজ হলেন এ ব্যাপারে ৱ্যাব বা পুলিশ তথ্য দিতে পারেনি। এছাড়া পরিবারের দাবি, সুরতহাল রিপোর্টও তাদের জাননো হয়নি।

এদিকে মৃত্যুর দীর্ঘ ছয় মাস পেরিয়ে গেলেও মৃত্যু রহস্য উদঘাটন না হওয়ায় আতঙ্ক এবং বিচার না পাওয়ার অনিশ্চয়তার মধ্যে দিন কাটছে পরিবারের। কারও সাথে ওবায়দুলের কোনো শত্রুতা আছে কি-না এ ব্যাপারে জানতে চাইলে পরিবারের সদস্যরা জানান, নিহতের সাথে কারও কোনো শত্রুতা ছিলো না।

এদিকে নিহত ওবায়দুল হকের মৃত্যুর রহস্য উদঘাটন না হওয়ায় পরিবারে মধ্যে ক্ষোভ ও হতাশা বাড়ছে। ওবায়দুল হক একজন সেনা সদস্য হওয়ার পরও কেন তার মৃত্যু রহস্য উদঘাটন করতে পারছে না আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তা নিয়েও তারা প্রশ্ন তোলেন।