জাতিসংঘ ও যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিক্রিয়া

জাতিসংঘ, যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য তিন সিটি নির্বাচন-পরবর্তী সময়ে যে প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে, তা আমলযোগ্য। নির্বাচন-পরবর্তী পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে আলোচনার জন্য জাতিসংঘের মহাসচিব বান কি মুন সংস্থাটির সহকারী মহাসচিব অস্কার ফার্নান্দেজকে দায়িত্ব দিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ফোন করে মহাসচিব তার এ উদ্যোগের কথা জানিয়েছেনও। নির্বাচনে বিএনপির অংশগ্রহণকে ‘স্বস্তিকর’ আখ্যা দিলেও জাতিসংঘ মহাসচিব মাঝপথে তাদের সরে দাঁড়ানোকে ‘দুঃখজনক’ হিসেবে অভিহিত করেছেন। তিনি নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ঘটিত সব অনিয়মের বিরুদ্ধে নিরপেক্ষ তদন্তেরও আহ্বান জানিয়েছেন।

যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দফতরের আন্ডার সেক্রেটারি ওয়েন্ডি শারম্যান বলেছেন, বর্তমান সরকারকে নির্বাচনে সংঘটিত সব অনিয়মের তদন্তের বিষয়ে জোর দিতে হবে, যাতে ভবিষ্যতের নির্বাচনে এর সুফল পাওয়া যায়। যুক্তরাজ্যের পক্ষ থেকেও প্রায় একই ধরনের বক্তব্য দেয়া হয়েছে। এটা মনে করার যথেষ্ট কারণ রয়েছে যে, সিটি নির্বাচনে উল্লেখ করার মতো অনিয়ম ও কারচুপি হয়েছে। ঢাকা ও চট্টগ্রামের সব কেন্দ্রেই যে অনিয়ম হয়েছে তা নয়, তবে উল্লেখযোগ্যসংখ্যক কেন্দ্রে যে অনিয়ম হয়েছে, তা স্পষ্ট। তবে এটাও ঠিক, তিন নির্বাচনেই গ্রাহ্য করার মতো সহিংসতা হয়নি। অবশ্য এর মানে এই নয় যে, নির্বাচন তিনটিকে প্রশ্নাতীতভাবে গ্রহণ করা যেতে পারে। স্বয়ং প্রধানমন্ত্রীও বলেছেন, অনিয়মের তদন্ত করা হবে। তিনি যেহেতু বলেছেন অনিয়মের তদন্ত হবে, সেহেতু ধরেই নেয়া যায় যে, তিনি প্রকারান্তরে স্বীকার করেছেন নির্বাচন ত্রুটিমুক্ত ছিলো না। আমরা এখন চাইবো, প্রধানমন্ত্রী অনিয়মের তদন্ত প্রশ্নে আন্তরিক থাকবেন। ওয়েন্ডি শারম্যানের কথাটি এ ক্ষেত্রে প্রণিধানযোগ্য। ভবিষ্যতের নির্বাচনে সুফল পাওয়ার জন্যই অনিয়মের সুষ্ঠু তদন্ত প্রয়োজন। সত্য কথা, তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোর নির্বাচনে শতভাগ নিয়ম ও শৃঙ্খলা বজায় থাকে না। রাজনীতির দ্বন্দ্ব-সংঘাত নির্বাচন পর্যন্ত বিস্তৃত হয়। তবে মোটামুটি শৃঙ্খলাবদ্ধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠান করা খুবই সম্ভব। ১৯৯১, ১৯৯৬, ২০০১ ও ২০০৮’র নির্বাচনে যে একদমই অনিয়ম হয়নি, তা বলা যাবে না। ছোটখাটো অনিয়ম সত্ত্বেও সেসব নির্বাচন দেশের মানুষ ও বিশ্ববাসীও মেনে নিয়েছে। দুঃখজনক হলো, তিন সিটি নির্বাচন তেমনভাবে সাধারণ মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্য হতে পারেনি। নিরপেক্ষ তদন্তের প্রশ্নটা এসেছে সে কারণেই।

বলা বাহুল্য, সিটি নির্বাচনের পর নির্বাচন কমিশনের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ হয়েছে, কমেছে এর গ্রহণযোগ্যতা। নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘনের ক্ষেত্রে কমিশন যেমন তার দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হয়েছে, তেমনি ভোট গ্রহণ চলাকালে বিভিন্ন কেন্দ্রে সংঘটিত অনিয়ম ও কারচুপির ব্যাপারেও কার্যকর ভূমিকা নেয়নি। স্বভাবতই বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোটের কাছে এ কমিশনের আর কোনো বিশ্বাসযোগ্যতা থাকবে না। পরবর্তী নির্বাচন কমিশন কীভাবে গঠিত হবে, সেটাও এখন বড় প্রশ্ন। সবচেয়ে বড় কথা, তদন্তের মাধ্যমে সিটি নির্বাচনের অনিয়ম ও কারচুপির একটি স্বচ্ছ চিত্র তুলে ধরা না গেলে দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের সুষ্ঠুতা নিয়ে বিএনপি যে প্রশ্ন তুলেছে, সেটাই প্রতিষ্ঠা পাবে।