মার্কিন সিনেটে এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চল সংক্রান্ত উপকমিটির চেয়ারম্যান ম্যাট সালমন
মাথাভাঙ্গা মনিটর: বাংলাদেশের রাজনৈতিক অচলাবস্থার নিরসনে আওয়ামী লীগ ও বিএনপিকে আলোচনার টেবিলে বসাতে যুক্তরাষ্ট্রকে অবশ্যই আরও সক্রিয় ভূমিকা পালন করতে হবে। মার্কিন কংগ্রেসের এশিয়া ও প্যাসিফিক সাব-কমিটির বৈদেশিক কমিটিতে ‘অস্থিভঙ্গ বাংলাদেশ রাজনৈতিক ও ধর্মীয় উগ্রতা’ শীর্ষক আলোচনায় একথা বলা হয়েছে। এতে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মধ্যকার বিরোধ মেটানোর উপযুক্ত উপায় খুঁজে বের করতে ভারতের সাথে আলোচনার ওপর বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে।
বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম থেকে জানা গেছে, শুনানিতে অংশগ্রহণকারী ৫ জন বিশেষজ্ঞ আলোচক বাংলাদেশের সঙ্কট নিরসনে নির্দিষ্টভাবে যুক্তরাজ্য, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, দক্ষিণ কোরিয়া ও জাপানকে সাথে নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রকে নিরপেক্ষ ভূমিকা রাখার পক্ষে সুপারিশ ব্যক্ত করেছেন। তারা সঙ্কট মেটাতে অবিলম্বে নতুন সাধারণ নির্বাচন চেয়েছেন। তাদের কথায় আওয়ামী লীগকে টিকিয়ে রাখলে ভারতের স্বার্থ বেশি রক্ষা পাবে মর্মে দিল্লি বর্তমান ধারণায় অদূরদর্শিতার ছাপ রয়েছে। তাদের আলোচনায় জামায়াত ও ছাত্রশিবিরকে বাংলাদেশ ও মার্কিন সরকারের দ্বারা সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে নিষিদ্ধ করার সুপারিশও এসেছে। তারা বলেছে, মিডিয়ার ওপর ক্রাকডাউন চলছে। তারা সতর্ক করেছেন যে, অচলাবস্থা দীর্ঘ হতে পারে আবার সহিংসতা তীব্রতর হলে ২০০৭ সালের মতো আরেকটি সামরিক অভ্যুত্থান ঘটতে পারে। এর মধ্যে বাস্তবে যেটিই ঘটুক আওয়ামী লীগ ও বিএনপি উভয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এছাড়া সহিংসতার কোনো কিনারা না হলে বাংলাদেশ উগ্র ধর্মীয় সহিংসতা ও জঙ্গিবাদের শিকার হতে পারে।
৩০ এপ্রিলের এ শুনানিতে সভাপতিত্ব করেন সাব-কমিটির রিপাবলিকান চেয়ারম্যান ম্যাট স্যালমন। মার্কিন সিনেটে এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চল সংক্রান্ত উপকমিটির চেয়ারম্যান ম্যাট সালমন বাংলাদেশকে একটি চরম বিশৃঙ্খল রাষ্ট্র হিসেবে অভিহিত করেছেন। তিনি বলেছেন, রাজনীতিতে বাংলাদেশ দীর্ঘদিন ধরেই বিভক্ত। ২০১৪ সালে অনুষ্ঠিত সংসদীয় নির্বাচন ঘিরে সহিংস প্রতিবাদ হয়েছে। ফলে রাজনীতির উভয়পক্ষের অনেক নিরীহ মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন। তিনি আরও বলেন, যদিও যথেষ্ট উদ্বেগ দেখা দেয়নি তবে দেশটিতে উগ্রপন্থি জঙ্গিদের সহিংসতার খবর পাওয়া গেছে।
উপকমিটির বৈঠকটি ওয়াশিংটন ডিসিতে রেবার্ন হাউস ভবনে অনুষ্ঠিত হয়। তিনি বলেন, জাতীয় সীমানা ছাড়িয়ে এ মুহূর্তে আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসী গ্রুপ তাদের নিয়োগ তৎপরতা বৃদ্ধি করছে। এ সময়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র দক্ষিণ এশিয়ায় আঞ্চলিক অংশীদারদের সাথে সহযোগিতা বৃদ্ধি করছে। আমাদের তাই ঘনবসতিপূর্ণ দেশটির গোটা পরিস্থিতি বোঝা প্রয়োজন।
শুনানিকালে উপস্থিত ছিলেন ডেভিস ইন্সটিটিউট ফর ন্যাশনাল সিকিউরিটি অ্যান্ড ফরেন পলিসির অধীন এশিয়ান স্টাডিজ সেন্টারের সিনিয়র রিসার্চ ফেলো লিজা কার্টিস, ইলিনোয়েস স্টেট ইউনিভার্সিটির চেয়ার অধ্যাপক ড. আলী রিয়াজ, গভর্নমেন্ট রিলেশনন্স হিন্দু আমেরিকান ফাউন্ডেশনের পরিচালক জয় কানসারা।
আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের ভূমিকা প্রসঙ্গে আলী রিয়াজ বলেন, যদিও নির্বাচনকে ঘিরে ২০১৩ সালের শেষ দিকে বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের অনেক দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে, তবুও নির্বাচনের পর আন্তরিক সংশ্লিষ্টতার অভাব রয়েছে। তিনি বলেন, ২০১৪ সাল তুলনামূলকভাবে শান্ত থাকলেও ক্ষমতাসীন দল ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এ সময়টায় গণতান্ত্রিক মূল্যবোধকে ঊর্ধ্বে তুলে ধরার সুযোগ বিনষ্ট করেছে।
তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় ২০১৫ সালের শুরুর দিকের রাজনৈতিক হানাহানির দায় এড়াতে পারে না। দেশ যখন দীর্ঘমেয়াদি সংঘাতের দিকে যাচ্ছে তখন আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় স্বাভাবিক কর্মকাণ্ড পরিচালনার পন্থা অব্যাহত রাখতে পারে না। একটি অস্থিতিশীল বাংলাদেশ প্রতিবেশী ভারতের জন্য অনেক বেশি বিপজ্জনক হয়ে উঠতে পারে।
অধ্যাপক আলী রিয়াজ বলেন, অংশগ্রহণমূলক জাতীয় নির্বাচন, রাজনৈতিক দলগুলোর জন্য আচরণবিধি, ভীতিমুক্ত জীবনযাপনে সাধারণ নাগরিকদের নিরাপত্তা রক্ষার লক্ষ্যে গণতান্ত্রিক কোনো ব্যক্তি কিংবা আন্তর্জাতিক অংশীদারদের মধ্যস্থতায় রাজনৈতিক দল ও সুশীল সমাজের সমন্বয়ে জাতীয় সংলাপ প্রয়োজন। তিনি বলেন, বর্তমানে খানেকটা অবসরে থাকা বিরোধী দল এবং সিটি নির্বাচনে ক্ষমতাসীন দলের সাফল্য অনেকটাই একদলীয় শাসনের নামান্তর। রাজনৈতিক নেতারা কোন পথে এগোবেন সেটা তাদের পছন্দের ব্যাপার। কিন্তু এ পরিস্থিতির সুযোগ না নিলে দেশকে দীর্ঘমেয়াদি ও অভাবনীয় এক সহিংসতায় ঠেলে দেয়া হতে পারে। আলী রিয়াজ বলেন, অস্থিতিশীলতার সুযোগ নিতে পারে আঞ্চলিক ও অঞ্চলের বাইরের জঙ্গি গ্রুপ। ফলে বাংলাদেশের রাজনৈতিক নেতাদের প্রতিষ্ঠানসমূহ গড়ে তোলার এটাই উপযুক্ত সময়।