ছেলেরা ভেবেছে মা বোনের বাড়ি বোনেরা ভেবেছে মা বাড়িতেই আছে : অথচ এক সপ্তাহ আগেই বেওয়ারিশ লাশ হিসেবে দাফন

স্টাফ রিপোর্টার: যে মা সন্তানদের কতো যত্নে আগলে রাখেন, সেই মা প্রয়োজনে পথে বেরিয়ে মোটরসাইকেলের ধাক্কায় নিহত হয়ে বেওয়ারিশ লাশ হিসেবে দাফন হলেও খোঁজ রাখার সুযোগ পাননি ৪ সন্তানের একজনও। ঘটনার এক সপ্তাহ পর মায়ের খোঁজ করতে গিয়ে মাথাভাঙ্গা পত্রিকা হয়েছে তাদের সন্ধানদাতা।

চুয়াডাঙ্গা সরকারি কলেজের অদূরে গত ২৫ এপ্রিল মোটরসাইকেলের ধাক্কায় নিহত বৃদ্ধার পরিচয় সপ্তাকাল পর পাওয়ার পর চমকে উঠেছেন প্রায় সকলে। বৃদ্ধার বাড়ি চুয়াডাঙ্গা জেলা শহরেই শেখরাতলাপাড়ায়। শেখরাতলাপাড়া থেকে সরকারি কলেজের দূরত্ব টেনেটুনে দেড় কিলোমিটার। অতোটুকু দূরুত্বে দুর্ঘটনায় বৃদ্ধা গুরুতর জখম হয়ে হাসপাতালে মারা গেলেও তার হাদিস হয়নি। নিকজনদের তেমন কেউ খোঁজই করেনি। গত শুক্রবার যখন প্রয়োজন হয়েছে তখন খুঁজতে গিয়ে দৈনিক মাথাভাঙ্গা পত্রিকায় প্রকাশিত ছবি এবং পরনে থাকা শাড়ি বোরকার বর্ণনা পড়ে নিশ্চিত হন বৃদ্ধার ছোট ছেলে হাফিজুর রহমানসহ আপনজনেরা।

ঘটনার পর এতোদিন লাগলো কেন মাকে খোঁজ করতে? এ প্রশ্নের জবাবে হাফিজুরসহ পরিবারের সদস্যরা বলেছেন, দু ছেলে দু মেয়ের জননী ছিলেন রেনু বেগমন। বয়স হয়েছিলো ৬৫ বছর। দু ছেলে বাড়িতে থেকেই ব্যবসা-বাণিজ্য করে। এক মেয়ের বিয়ে হয়েছে দৌলাতদিয়াড়ে অপর মেয়ের নাগদায়। গত ২৫ এপ্রিল সকালে নাগদহের জামাইয়ের সাথে দেখা করার জন্য সকালেই হাতে কিছু খাবার নিয়ে চুয়াডাঙ্গা জেলা শহরেরই শান্তিপাড়ায় যান তিনি। সেখানে জামাইকে খাওয়ানোর পর পায়ে হেঁটেই ফিরছিলেন রেনু বেগম। পথিমধ্যে সরকারি কলেজের নিকট ঘটে দুর্ঘটনা। বেপরোয়াগতির মোটরসাইকেল তাকে ধাক্কা দিলে আছড়ে পড়ে মাথায় গুরুতর জখম হন। জ্ঞান হারান। রিকশাচালক উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করান। চিকিৎসার এক পর্যায়ে তিনি মারা যান। মৃতদেহ অজ্ঞত পরিচয়ের হিসেবেই রাখা হয়। পরদিন ২৬ এপ্রিল আঞ্জুমান মফিদুল ইসলাম কমিটির দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তিরা বেওয়ারিশ লাশ হিসেবে জান্নাতুল মওলা কবরস্থানে দাফন করেন। এদিকে তার ছেলে-মেয়েরা বুঝতেই পারেননি। ছেলেরা বলেছেন, মা বোনের বাড়িতে গিয়ে রয়েছে বলে ধারণা করেছি। বোনেরা ভেবেছে মা বাড়িতেই আছে। এরকম ভেবেই মূলত মাকে আর খোঁজই রাখা হয়নি।