সিটি করপোরেশন নির্বাচন এবং স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন

যে জয়ে দাগ থাকে, গৌরবে থাকে কলঙ্কের ছায়া সেই জয়-গৌরব অবশ্যই অতোটা তৃপ্তির নয়- যতোটা তৃপ্তি স্বচ্ছতায়। ঢাকার দুটি ও চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের নির্বাচন কতোটা স্বচ্ছ হয়েছে, কতোটা অবাধ নিরপেক্ষ হয়েছে তা নিয়ে তর্ক রয়েছে। পাল্টাপাল্টি রাজনৈতিক বক্তব্যে ধোঁয়াশা ছড়ালেও আমজনতার কাছে বিষয়টি খুব একটা অস্পষ্ট থাকে না।

জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিকমহল স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে তদন্তের গুরুত্ব দিয়েছে। ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারনেশনাল বাংলাদেশ টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেছেন, রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় ও পেশিশক্তির প্রয়োগে ব্যাপক অনিয়ম সংঘটিত হওয়ায় সদ্য-সমাপ্ত তিনটি সিটি করপোরেশন নির্বাচনের গ্রহণযোগ্যতা প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে। এক বিবৃতিতে তিনি এ কথা বলেন। এ অবস্থায় সকল রাজনৈতিক দলকে সংযত, সহনশীল ও গণতান্ত্রিক চর্চার প্রতি শ্রদ্ধাশীল হওয়ারও আহ্বান জানানো হয়েছে। অবশ্য প্রধান নির্বাচন কমিশনার জোর দিয়েই বলেছেন, অবাধ, সুষ্ঠু ও উৎসবমুখর পরিবেশে ভোটগ্রহণ হয়েছে। নির্বাচনে ভোটগ্রহণের কয়েক ঘণ্টার মাথায় নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দেয়া দলটির তরফে তোলা হয়েছে নানা অনিয়মের অভিযোগ। তিন সিটি নির্বাচন বাতিল ও নির্বাচন কমিশনের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের পদত্যাগ দাবি জানিয়েছে বিএনপির সিটি নির্বাচন পরিচালনায় গঠিত সংগঠন আদর্শ ঢাকা আন্দোলন। গতকাল বুধবার বিকালে জাতীয় প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনটির আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. এমাজউদ্দীন আহমদ এ দাবি জানান। অবাক হলেও সত্য যে, ভোটের দিন ভোট বর্জনকারী দলের সমর্থিত ১৮টি ওয়ার্ড কাউন্সিলর বেসরকারিভাবে নির্বাচিত হয়েছেন। কয়েকটি ওয়ার্ডে জামায়াত সমর্থিত প্রার্থীও নির্বাচিত হয়েছেন বলে সংবাদমাধ্যমে তুলে ধরা হয়েছে। এরই মাঝে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ভোটে কারচুপি হয়নি। তিনি প্রশ্ন তুলে বলেছেন, সিটি নির্বাচনে কারচুপি হলে বিএনপি সমর্থিত প্রার্থিরা এতো ভোট কেমন করে পান? আগের নির্বাচনের চেয়ে এবারের তিন সিটি নির্বাচন শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন হয়েছে বলে দাবি করেছেন তিনি।

সকল পক্ষের কথা বলার সুযোগ যেমন গণতন্ত্র চর্চারই অংশ, তেমনই অবাধ সুষ্ঠু ও দায়িত্বশীলদের নিরপেক্ষ দায়িত্বপালনের মধ্যদিয়ে গ্রহণযোগ্য নির্বাচন গণতন্ত্রের অন্যতম শর্ত। নির্বাচনে গোপন ব্যালটের মাধ্যমেই সাধারণ মানুষ রায় দেয়। সেই রায় দেয়ার অধিকার যতোটা অবাধ করা যাবে সমাজের জন্য ততোটাই কল্যাণ। এ দায়িত্ব সরকারের ওপরই বর্তায় বটে।

Leave a comment