নাশকতাকারীদের বিচার দ্রুত সম্পন্ন করতে হবে : প্রধানমন্ত্রী

প্রতি জেলায় বিশ্ববিদ্যালয় হবে

 

স্টাফ রিপোর্টার: দেশের প্রতিটি জেলায় একটি করে বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন করা হবে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এক্ষেত্রে বেসরকারি উদ্যোক্তাদের অগ্রাধিকার ভিত্তিতে সরকার সহযোগিতা করবে বলেও জানান তিনি। গতকাল সোমবার দুপুরে রাজশাহী ও খুলনা বিভাগের জেলাগুলোর উন্নয়ন সমন্বয় কমিটির এক সভায় প্রধানমন্ত্রী ভিডিও কনফারেন্সে এ কথা জানান।

সভা উপলক্ষে নড়াইল জেলা প্রশাসকের সম্মেলনকক্ষে জেলা প্রশাসক আব্দুল গাফফারের সভাপতিত্বে জেলা উন্নয়ন সমন্বয় কমিটির এক সভা অনুষ্ঠিত হয়। জেলা পরিষদ প্রশাসক অ্যাডভোকেট সুবাস চন্দ্র বোস, পুলিশ সুপার সরদার রকিবুল ইসলাম, ভারপ্রাপ্ত পৌরমেয়র মোস্তফা কামাল মোস্ত, লোহাগড়া উপজেলা চেয়ারম্যান সৈয়দ ফয়জুল আমীর লিটুসহ জেলা পর্যায়ের সব দপ্তরের প্রধান কর্মকর্তাসহ উপজেলা নির্বার্হী অফিসারগণ উপস্থিত ছিলেন।

এ সময় প্রধানমন্ত্রী পর্যায়ক্রমে বিভাগীয় কমিশনার, ডিআইজি, মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার এবং বিভিন্ন জেলার জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার, জেলা পরিষদের প্রশাসকসহ বিভিন্ন বিভাগের কর্মকর্তাদের সাথে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট জেলার উন্নয়ন, আইনশৃঙ্খলা, শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবা বিষয়ে সরাসরি খোঁজখবর নেন এবং করণীয় বিষয়ে দিকনির্দেশনা দেন।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নাশকতা-কারীদের বিরুদ্ধে দ্রুত চার্জশিট দিয়ে তাদের বিচার সম্পন্ন করতে প্রশাসন ও আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোকে নির্দেশ দিয়ে বলেছেন, সহিংসতা সৃষ্টিকারীদের কঠোর শাস্তি দিতে হবে, যাতে তারা ভবিষ্যতে এ ধরনের নৃশংস ঘটনা ঘটানোর সাহস না পায়।

গতকাল সোমবার সচিবালয়ে মন্ত্রিসভা কক্ষে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে বগুড়া ও সাতক্ষীরা জেলা উন্নয়ন সমন্বয় কমিটির সাথে মতবিনিময়কালে প্রধানমন্ত্রী এ কথা বলেন। এ ভিডিও কনফারেন্সে সংযুক্ত ছিলো রাজশাহী ও খুলনা বিভাগ এবং ঝিনাইদহ, নড়াইল, জয়পুরহাট ও সিরাজগঞ্জ জেলা উন্নয়ন সমন্বয় কমিটি।

শেখ হাসিনা বলেন, যারা পেট্রোলবোমা ছুঁড়ে মানুষ পুড়িয়ে হত্যা করেছে, বাস, ট্রাক ও অন্যান্য যানবাহন জ্বালিয়েছে তাদের গ্রেফতার করা ও তাদের বিরুদ্ধে মামলা দায়েরই যথেষ্ট নয়। তাদের বিরুদ্ধে দ্রুত চার্জশিট দিয়ে বিচার সম্পন্ন করতে সংশ্লিষ্ট সবার যথোপযুক্ত পদক্ষেপ নিতে হবে। এ ব্যবস্থা করা না হলে দুষ্কৃতিকারীরা আদালত থেকে জামিন নেয়ার পর আবারো এ ধরনের নৃশংস কর্মকাণ্ড চালাবে। শেখ হাসিনা সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে যৌথ অভিযান ও মোবাইলকোর্ট পরিচালনার ওপর গুরুত্বারোপ করে বলেন, জনগণের জীবনের নিরাপত্তা দেয়া হচ্ছে সবচেয়ে বড় দায়িত্ব। যারা জীবন্ত মানুষ পুড়িয়ে হত্যা করেছে তাদের অবশ্যই শাস্তি দিতে হবে। এজন্য জনগণের জীবন নিরাপদ না হওয়া পর্যন্ত যৌথ অভিযান অব্যাহত রাখতে হবে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, তার সরকার ৫ জানুয়ারি নির্বাচনের পর সন্ত্রাসীদের দমনে বেশি নজর দিতে পারেনি। কারণ ওই সময় সরকার উন্নয়নের ওপর অধিক গুরুত্ব দিয়েছে। এজন্য চলতি বছরের ৫ জানুয়ারি থেকে আমাদের খেসারত দিতে হয়েছে। সে সময় আমরা দেখেছি বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের অবিরাম হরতাল ও অবরোধ এবং বিএনপি-জামায়াত চক্রের মানুষ হত্যা ও নির্যাতন। শেখ হাসিনা বলেন, এসব কিছু দেখে আমি মনে করি নাশকতাকারীদের বিরুদ্ধে যৌথ অভিযান ও মোবাইলকোর্ট পরিচালনা অব্যাহত রাখতে হবে।

উন্নয়ন কাজে গতি আনার পাশাপাশি বাজেটে বরাদ্দ প্রকল্পগুলো দ্রুত শেষ করতে স্থানীয় প্রশাসনকে তাগিদ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, গৃহায়ন তহবিল ছাড়াও কর্মসংস্থান ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে যাতে তরুণরা স্থানীয়ভাবে উদ্যোগ গড়ে তুলতে পারে, সেজন্য উত্সাহ সৃষ্টি করতে হবে। এছাড়া স্থানীয় পর্যায়ে পণ্য উত্পাদন বাড়ানো, পণ্যের বহুমুখিকরণ এবং রপ্তানি বাড়ানোর জন্য প্রক্রিয়াজাতকরণের ওপর গুরুত্ব দেয়ার নির্দেশনা দেন প্রধানমন্ত্রী। খেলাধুলার বিষয়ে আগ্রহের কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, প্রত্যেক উপজেলায় একটি করে মিনি স্টেডিয়াম গড়ে তোলা হবে। এ জন্য স্কুল-কলেজের মাঠের বাইরে আলাদা জায়গা নির্দিষ্ট করার জন্য নির্দেশ দেন তিনি। সাতক্ষীরা ও বগুড়ার স্থানীয় কয়েকটি প্রকল্পের কাজের অগ্রগতির বিষয়েও প্রধানমন্ত্রী খোঁজ-খবর নেন। উন্নয়ন সমন্বয় কমিটির প্রতিনিধিরা তাদের জেলায় আরও উন্নয়ন প্রকল্প নেয়ার দাবি জানালে তা বিবেচনার আশ্বাস দেন প্রধানমন্ত্রী।

পল্লি উন্নয়ন একাডেমি আইনের খসড়া চূড়ান্ত অনুমোদন: এর আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভার বৈঠকে বাংলাদেশ পল্লি উন্নয়ন একাডেমি আইন-২০১৫’র খসড়া চূড়ান্ত অনুমোদন লাভ করে। বৈঠক শেষে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ মোশাররাফ হোসাইন ভূইঞা প্রেস ব্রিফিংয়ে বলেন, বাংলাদেশ পল্লি উন্নয়ন একাডেমি ১৯৮৬ সালের একটি অধ্যাদেশ বলে পরিচালিত হচ্ছে। এ আইনটি সামরিক শাসনামলে জারি করা হয়েছে। আদালতের রায় অনুযায়ী দুটি সামরিক শাসনামলে জারি করা সকল অধ্যাদেশ অবৈধ। তবে জনগুরুত্বপূর্ণ আইনগুলোর বৈধতা দিতে এগুলো যুগোপযোগী করে মন্ত্রিসভায় উপস্থাপনের সিদ্ধান্ত রয়েছে। এজন্য এ আইনটি মন্ত্রিসভায় নিয়ে এসেছে পল্লি উন্নয়ন ও সমবায় বিভাগ। এর আগে গত বছরের ৩১ মার্চ আইনের খসড়া নীতিগত অনুমোদন দেয়া হয়েছিলো।

এছাড়া ১৯৭৫ সাল থেকে ১৯৭৯ সালের ৯ এপ্রিল পর্যন্ত সময়ের মধ্যে জারিকৃত কতিপয় অধ্যাদেশ কার্যকরকরণ (বিশেষ বিধান) আইন, ২০১৩’র তফসিল থেকে বাংলাদেশ রেলওয়ের উপযোজন (অ্যাপ্রোপ্রিয়েশন) সংক্রান্ত পাঁচটি অধ্যাদেশ বাতিলের প্রস্তাব অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। এদিকে গৃহকর্মী পাঠানোর বিষয়ে সৌদি আরবের সঙ্গে স্বাক্ষরিত চুক্তির ঘটনা-উত্তর অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। এছাড়া স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম ও বাংলাদেশ প্রতিনিধি দলের ইন্দোনেশিয়া সফর সম্পর্কে মন্ত্রিসভাকে অবহিত করা হয়ে