রানা প্লাজা ধসের ২য় বার্ষিকী আজ

স্টাফ রিপোর্টার: ঠিক দুই বছর আগের এই দিনে সাভার বাজারের পাশে ধসে পড়েছিলো রানা প্লাজা। আলোচিত এই ভবন ধসের ঘটনায় প্রাণ দিতে হয়েছিলো ১১ শতাধিক শ্রমিককে। দেশে-বিদেশে উঠেছিলো ঝড়! এর ফলে গত দু বছরে গার্মেন্টস সেক্টরে এসেছে অনেক ইতিবাচক পরিবর্তন। অনেকটাই ভাগ্য ফিরেছে শ্রমিকদের। বেতন প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে। মিলেছে চাকরির অনেকখানি নিশ্চয়তা। তারপরও এখনো এ সেক্টরে সমস্যার অন্ত নেই।

যাদের কারণে এখন আগের চেয়ে ভালো বেতন পাচ্ছেন শ্রমিকরা সেই নিহত শ্রমিকদের পরিবার পায়নি নায্য ক্ষতিপূরণ। জুরাইন কবরস্থানে শতাধিক কবরের শনাক্তকরণ নম্বরও হারিয়ে গেছে। ফলে বেওয়ারিশই থেকে গেলেন এই শ্রমিকরা। ওই দিনের ঘটনায় যে মামলা হয়েছিলো তার চার্জশিট দিতে পারেনি পুলিশ। তবে মূল অপরাধী সোহেল রানাসহ ১২ জন এখনো কারাগারে বন্দি আছে। তার বাবা জামিনে মুক্তি পেয়ে বাইরে ঘুরে বেড়াচ্ছেন।

রানা প্লাজা ধসের পর গার্মেন্ট সেক্টরের ওপর দেশি-বিদেশি চাপ বাড়তে থাকে। বিশেষ করে শ্রমিকদের অসহায় মৃত্যুর বিরুদ্ধে সোচ্চার হয় সারাবিশ্ব। বাধ্য হয়েই সরকার ও গার্মেন্টস মালিকরা বেশ কিছু ইতিবাচক পরিবর্তনে কাজ শুরু করে। আন্তর্জাতিক চাপে ক্রেতা প্রতিষ্ঠানগুলোর উদ্যোগে গঠিত হয় অ্যাকর্ড ও অ্যালায়েন্স। এ দুটি জোট এখন পর্যন্ত অন্তত ১ হাজার ৭শ কারখানা পরিদর্শন করেছে। তারা কারখানা ভবনের কাঠামো, অগ্নি ও বৈদ্যুতিক ত্রুটির বিষয়টি পরীক্ষা করে কী ধরনের সংশোধন কার্যক্রম চালাতে হবে তা ঠিক করে দিচ্ছেন।

রানা প্লাজা ধসের দ্বিতীয় বার্ষিকী উপলক্ষে আন্তর্জাতিক শ্রম মানদণ্ডে বাংলাদেশে পোশাক শ্রমিকদের উন্নত কর্মপরিবেশ, ইউনিয়ন গঠনের অধিকারসহ তাদের আইনসঙ্গত অধিকারসমূহ নিশ্চিতের আহ্বান জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কভিত্তিক আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস ওয়াচ (এইচআরডব্লিউ)। প্রতিষ্ঠানটির এশিয়া বিষয়ক উপপরিচালক ফিল রবার্টসন এক বিবৃতিতে বলেন, বাংলাদেশ যদি রানা প্লাজা বিপর্যয়ের মতো আরেকটি দুর্ঘটনা এড়াতে চায়, তাহলে দেশটির উচিত হবে কার্যকরভাবে শ্রমআইনের বাস্তবায়ন করা।

রানা প্লাজা ধসের পর আন্তর্জাতিক চাপে শ্রমআইন সংশোধন করা হয় ২০১৩ সালে। সংশোধিত আইনে ট্রেড ইউনিয়নের বিষয়টিকে স্বীকৃতি দেয়া হয়। এরপর থেকেই বাড়তে থাকে কারখানায় ট্রেড ইউনিয়নের সংখ্যা। দু বছরে ২৯৮টি ট্রেড ইউনিয়ন নিবন্ধন পেয়েছে। আরো ৬১টি ট্রেড ইউনিয়ন নিবন্ধনের অনুমতি প্রক্রিয়ায় রয়েছে।

এদিকে দু বছরেও এই ঘটনায় দায়ের করা দু মামলার চার্জশিট দিতে পারেনি পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। গত ১৫ এপ্রিল অবহেলাজনিত কারণে মৃত্যু ও ইমারত নির্মাণ আইনে দায়ের করা দুটি মামলার চার্জশিট দাখিল করার পূর্ব নির্ধারিত সময় ছিলো; কিন্তু সিআইডি ওই চার্জশিট দাখিল করতে ব্যর্থ হওয়ায় আদালত ২১ মে দিন ধার্য করেছেন। এ দু মামলায় প্রধান আসামি সোহেল রানাসহ ১২ জন কারাগারে রয়েছেন।

ওই দুর্ঘটনার পর বেশকিছু শ্রমিকের হদিসই পাওয়া যায়নি। মারাত্মক আহত সহস্রাধিক শ্রমিক এখনো বয়ে বেড়াচ্ছেন সেই দিনের ক্ষতচিহ্ন। আহতদের অনেকেই এখনো স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারেননি। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ওই দুর্ঘটনায় আহত শ্রমিকদের অনেকেই এখনো শারীরিক ও মানসিক ট্রমায় আক্রান্ত। আহত শ্রমিকদের একটি অংশ গ্রামে চলে গেলেও বেশিরভাগই সাভার ও এর আশাপাশের এলাকায় থাকেন।

বিজিএমইএ’র সভাপতি আতিকুল ইসলাম বলেন, রানা প্লাজার দুর্ঘটনার পর শ্রমিকদের প্রতি মালিকপক্ষের মানসিকতার পরিবর্তন এসেছে। ঝুঁকিপূর্ণ কারখানার ক্ষেত্রে বিজিএমইএ’র পক্ষ থেকে জিরো টলারেন্স অবস্থান নেয়া হয়েছে। অ্যাকর্ড-অ্যালায়েন্সের পরিদর্শনে এ পর্যন্ত ৩২টি কারখানা বন্ধ হয়েছে। বিজিএমইএ’র একজন পরিচালকের কারখানা বন্ধ করে দেয়া হয়েছে।

Leave a comment