আশুলিয়ায় ডাকাতি : ব্যাংকের কেউ জড়িত থাকতে পারে

স্টাফ রিপোর্টার: আশুলিয়ায় বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংক কাঠগড়া বাজার শাখার ডাকাতির সাথে এই শাখার কেউ জড়িত থাকতে পারে বলে ধারণা করছে পুলিশ। জড়িত সন্দেহে পুলিশ ব্যাংকের নিরাপত্তা কর্মী সোহেল রানাকে বুধবার রাতে আশুলিয়া থেকে আটক করেছে। মঙ্গলবার ঘটনার সময় ব্যাংকের সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজ রহস্যের কোনো কিনারা হয়নি। গ্রেফতারকৃত ডাকাত সাইফুল ও বোরহানের কাছ থেকে পুলিশ নতুন কোনো তথ্য বের করতে পারেনি। বরং তারা ভুল তথ্য দিয়ে পুলিশকে বিভ্রান্তিতে ফেলেছে। ঘটনার পর গণপিটুনিতে নিহত ডাকাতের পরিচয়ও মেলেনি। তার লাশ পড়ে আছে ঢাকা মেডিকেল কলেজ মর্গে। ঘটনা তদন্তে থানা পুলিশের পাশাপাশি ৱ্যাব ও সিআইডি এক যোগে কাজ করছে।

ঢাকা রেঞ্জের ডিআইজি এসএম মাহফুজুল হক নুরুজ্জামান বলেন, ব্যাংকের সিসিটিভি ক্যামেরায় ঘটনার সময়ের কোনো ফুটেজ পাওয়া যায়নি। বিষয়টি দু ধরনের হতে পারে। এক. ব্যাংকের কেউ এ ঘটনা ঘটিয়েছে, দুই. টেকনিক্যাল সমস্যার কারণেও হতে পারে। দুটো বিষয় মাথায় রেখেই তদন্ত চলছে। ব্যাংকের অপর নিরাপত্তা কর্মী সোহেল রানাকে আটক প্রসঙ্গে তিনি বলেন, তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।

মামলার তদন্তে সংশ্লিষ্ট একজন পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, ব্যাংকের সিসিটিভি পরীক্ষা করে দেয়া যায়, ডাকাতি শুরুর পাঁচ থেকে সাত মিনিট আগে থেকে (বেলা ২টা ৩৫ মিনিট) থেকে ব্যাংকের সিসিটিভি বন্ধ ছিলো। সিটিটিভির সেন্ট্রাল সুইচ বাইরে থেকে কারো পক্ষে বন্ধ করা সম্ভব নয়। ডাকাতরা ঘটনাস্থল ত্যাগ করার পরও ব্যাংকের সব কম্পিউটার খোলা ছিলো। আলামত দেখে ধারণা করা হচ্ছে, ডাকাতদের সাথে ব্যাংকের কারোর যোগাযোগ রয়েছে। কারণ ঘটনার সময় অনেকে নামাজ পড়ছিলেন। কেউ কেউ খাবার খাচ্ছিলেন। ব্যাংকে গ্রাহক ছিলো মাত্র দুজন। আর এই মোক্ষম সময়টাতেই ডাকাতরা হানা দেয়।

ৱ্যাবের গোয়েন্দা শাখার প্রধান লে, কর্নেল আবুল কালাম আজাদও বলেন, ডাকাতদের সাথে ব্যাংকের কারোর যোগাযোগ থাকতে পারে। এ বিষয়টি সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত করা হচ্ছে। ঢাকা জেলার পুলিশ সুপার হাবিবুর রহমান বলেন, গ্রেফতারকৃত ডাকাত সাইফুল ও বোরহান পেশাদার অপরাধী। তাদের কাছ থেকে গতকাল পর্যন্ত নতুন কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। সাইফুল আটক হওয়ার পর জানিয়েছিলো তার বাড়ি জয়পুরহাটে, দ্বিতীয় দফায় বলে মুন্সীগঞ্জের শ্রীনগরে। কিন্তু তার দেয়া দুটো ঠিকানাই ভুয়া। গ্রেফতার হওয়া অপর ডাকাত বোরহানের ঠিকানায় নিশ্চিত হওয়া গেছে। সে শিবির কর্মী ও জঙ্গি কর্মকাণ্ডে জড়িত। ঘটনার পরপরই তার স্ত্রী চন্দ্রার ভাড়া বাসা থেকে পালিয়েছে।

কাঠগড়া শাখায় কর্মকর্তা কর্মচারী ১০ জন: আশুলিয়ার কাঠগড়া বাজারে ২০১৪ সালের ১৫ ডিসেম্বর উদ্বোধন হওয়া বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংকে শাখা ১০ জন স্টাফ নিয়ে পরিচালিত হতো। তারা হলেন ব্যাংক ম্যানেজার ওয়ালিউল্লাহ, সহকারী ব্যবস্থাপক ফরিদুল হাসান, ক্যাশ কর্মকর্তা তরিকুল ইসলাম, অপর কর্মকর্তা আক্তার, ফারুক ও লিয়াকত হোসেন, পিয়ন সাইফুল ইসলাম, গ্যানম্যান বদরুল আলম, নিরস্ত্র গার্ড ইব্রাহিম ও সোহেল রানা। নিরস্ত্র গার্ডদের মধ্যে ইব্রাহিম ও সোহেল রানা শিফটে ডিউটি করতো। এছাড়া লুত্ফা নামের একজন আয়া কাজ করতো। ডাকাতি কালে পিয়ন সাইফুল আলমসহ বেশ কয়েকজন নামাজে ছিলেন। এছাড়া অনেকেই দুপুরের খাবারে ব্যস্ত ছিলেন। আর এ সুযোগেই দুর্বৃত্তরা হানা দেয়।

ব্যাংকের সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট সেলিম হাসান বলেন, কাঠগড়া বাজারে ব্যাংকের শাখাটি ছোট। ভল্টে ৫৫ লাখ টাকা রক্ষিত রাখা হতো। কিন্তু ঘটনার দিন ভল্টে ৩৫ লাখ টাকা রক্ষিত ছিলো। আর প্রতিদিন ১০/১২ লাখ টাকা লেনদেন হতো।

হাসপাতালে ভিড়: ব্যাংক ডাকাতির সময় ডাকাতদের প্রতিরোধে এগিয়ে আসা এলাকাবাসী ও ব্যবসায়ীদের মধ্যে গুলিবিদ্ধ ১৬ জন (সাভারে) এনাম মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে ভর্তি রয়েছে। এর মধ্যে দশ জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। আহতদের দেখতে তাদের আত্মীয়-স্বজন ও বন্ধু-বান্ধবরা প্রতিদিনই হাসপাতালে ভিড় করছে। গত মঙ্গলবার দুপুরে বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংক আশুলিয়া শাখায় ডাকাতের গুলিতে নিহত হয় ম্যানেজার, দারোয়ানসহ ৭ জন। আহত হয় ১৬ জন। বিক্ষুব্ধ জনতার পিটুনিতে মারা যায় এক ডাকাত সদস্য।

গ্রেফতার হওয়া ডাকাত সাইফুলের ঠিকানা খুঁজতে হিমশিম খাচ্ছে পুলিশ ও এলাকাবাসী। সাইফুল তার ঠিকানা জয়পুরহাটের পাঁচবিবি উপজেলার হরেন্দা বাজার গ্রামে বলেছে বলে গণমাধ্যমে প্রচারিত হয়। এরপর থেকে ওই গ্রামে দফায় দফায় পুলিশের তদন্তেও কুলকিনারা পাওয়া যায়নি সাইফুলের ঠিকানা। এলাকাবাসী জানিয়েছে, এই গ্রামে ৩ জন সাইফুল আছে, যারা বাড়িতেই অবস্থান করছেন।