বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের সকলকে অভিনন্দন

বাংলাদেশ ক্রিকেট দল সাবেক বিশ্বচ্যাম্পিয়ন পাকিস্তানকেও ‘হোয়াইট য়াশ’ করেছে! একদিনের আন্তর্জাতিক ক্রিকেট সিরিজে এ নিয়ে বাংলাদেশ প্রতিপক্ষকে ধবলধোলাই করলো দশ-দশবার! হোয়াটওয়াশের বাংলাধবল বা শুভ্রধোলাই যা ‘বাংলাওয়াশ’ নামে খ্যাতি পেয়েছে মূলত ২০১০ সালে। প্রতিপক্ষ ছিলো নিউজিল্যান্ড। এবার ছিলো সাবেক বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন পাকিস্তান।

বিগত দিনে যে ন’বার বাংলাদেশ প্রতিপক্ষকে ‘বাংলাওয়াশ’ করেছে, তাদের মধ্যে নিউজিল্যান্ড (দু দফা) বাদে সকল প্রতিপক্ষ ছিলো তুলনামূলক দুর্বল দল- কেনিয়া, জিম্বাবুয়ে, আয়ারল্যান্ড, স্কটল্যান্ড ও ওয়েস্ট ইন্ডিজ। দুবারের বিশ্বচ্যাম্পিয়ন ওয়েস্ট ইন্ডিজ আবার দুর্বল হলো কবে? এরকম প্রশ্ন কেউ কেউ তুলতেই পারেন। ২০০৯ সালের যে ওয়েস্ট ইন্ডিজ দলটি বাংলাওয়াশের শিকার হয়, সে দলটি ছিলো সেখানকার প্রধান-প্রধান খেলোয়াড়দের বিদ্রোহের প্রেক্ষিতে গড়ে তোলা দল। যা তুলনামূলক দুর্বল ছিলো। সেই কারণে পাঁচ বছর পূর্বে প্রথম বড় প্রতিপক্ষ নিউজিল্যান্ডকে ‘বাংলাওয়াশ’ করা হলে আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকরা দুর্ঘটনা বলে অ্যাখ্যা দেন। যদিও ২০১৩ সালে ওই নিউজিল্যান্ডই পরজয় হয় পুনরায়। এবার পাকিস্তানকে বাংলাওয়াশ করার ঘটনাটিকে কি বিশ্লেষকরা দুর্ঘটনা বলতে পারবেন? যদিও প্রায় ১৬ বছর পর পাকিস্তানের বিরুদ্ধে প্রথম ওয়ানডে ম্যাচ এবং পুরো সিরিজ জয়। এটা যে বাংলাদেশের ক্রিকেটার্জনের মুকুটে অন্যতম উজ্জ্বল পালক তা নতুন করে বলার অবকাশ রাখে না। টি-টোয়েন্টির রেকর্ড টাইগারদের এখনও উজ্জ্বল হয়নি। সফররত পাকিস্তানের সাথে একমাত্র টি-টোয়েন্টি খেলাটি আজ। এ খেলাতেও বাংলাদেশ দল ভালো করবে বলে দেশবাসী আশা করে। বাংলাদেশ দলের খেলোয়াড়রাই এ আশা জাগিয়েছে।

সংবাদসূত্রে জানা গেছে, পাকিস্তানের ক্রিকেটের এ পতনের জন্য দেশটির পার্লামেন্টের বিরোধী সদস্যরা সরাসরি দায়ী করেছেন তাদের ক্রিকেট বোর্ডের দায়িত্বহীন কর্মকাণ্ড ও অপেশাদার পদ্ধতির। অবশ্য পাকিস্তানের এক মন্ত্রী রিয়াল হুসেইন পীরজাদা স্বীকার করেছেন- এ সিরিজে খুব ভালো খেলেছে বাংলাদেশ। বাংলাদেশের ক্রিকেটীয় অবকাঠামো যে বর্তমানে পাকিস্তানের চাইতেও শক্তিশালী তা মানতে হবে। বাংলাদেশ অতীতে হঠাৎ হঠাৎ ভালো করেছে, দিনের পর দিন ব্যর্থও হয়েছে। কিন্তু ‘সমীহযোগ্য’ ক্রিকেট শক্তি বলতে যা বোঝায়, তার প্রথম আভাস পাওয়া যায় সর্বশেষ বিশ্বকাপ ক্রিকেটে। গত মার্চে বিশ্বকাপে ইংল্যান্ডকে সহজে হারায়। এরপর কোয়ার্টার ফাইনালে বাংলাদেশ আম্পায়ারের কিছু ভুল সিদ্ধান্তের কারণে ছিটকে পড়ে। তার পর পর এ সিরিজ। সিরিজের যে বিষয়টি বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য, তা হলো বাংলাদেশ দল প্রতিটি ম্যাচ জিতেছে অনেকটাই সহজভাবে। কোনো ম্যাচে কখনই মনে হয়নি- টাইগাররা বিপদে পড়েছে। জেতার সম্ভাবনা অনিশ্চয়তার মধ্যে ছিলো না বললেই চলে। প্রথম ওয়ানডে ৭৯ রানে, দ্বিতীয় ওয়ানডে ৭ উইকেটে এবং তৃতীয় ওয়ানডে ৮ উইকেটের জয় কতোটা দাপটের তা বলার অবকাশ রাখে না। পাকিস্তান-বাংলাদেশ সিরিজ ক্রিকেট বিশ্বে বাংলাদেশকে এমন এক ‘সমীহযোগ্য’ উচ্চতায় তুলেছে যা ধরে রাখাটাও চ্যালেঞ্জ।

বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের বিগত দিনের হঠাৎ জয় এবং টানা পরাজয়ের রেকর্ডের সাথে বর্তমানকে গুলিয়ে ফেলা বোধ করি ঠিক হবে না। মানতে হবে উন্নতি হয়েছে। এই অবস্থানটি ধরে রাখতে হবে। আমরা আগেও বলেছি, অর্জন অক্ষুণ্ণ রাখা কঠিন। ফলে আরো নিষ্ঠা, আরো শ্রম এবং সাধনার মধ্যদিয়েই এগুতে হবে। দেশবাসী আছে সাথে। বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের সকলকে অভিনন্দন।