স্টাফ রিপোর্টার: দিনের আলোয় সাভারের আশুলিয়ায় বেসরকারি ব্যাংক বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংকে গুলি, গ্রেনেড হামলা চালিয়ে ব্যাংকের ম্যানেজারসহ ৭ জনকে খুন করে ডাকাতি, গত বছরের প্রথমদিকে কিশোরগঞ্জের কিছুদিন পর বগুড়া সোনালী ব্যাংকের শাখায় কয়েক কোটি টাকা চুরির পর স্বভাবতই প্রশ্ন উঠেছে চুয়াডাঙ্গার রাষ্ট্রায়ত্ব এবং বেসরকারি ব্যাংকের বিভিন্ন শাখার নিরাপত্তা নিয়ে।
চুয়াডাঙ্গায় রাষ্ট্রায়ত্ব ও বেসরকারি ব্যাংকের শাখা অফিসগুলোর কার্যক্রম চালানো হচ্ছে ব্যক্তি মালিকানায় গড়ে ওঠা মার্কেটের ভাড়া করা ফ্লোর অথবা আবাসিক ভবনে। নিরাপত্তা ব্যবস্থা বলতে সংশিষ্ট ব্যাংকের নিজস্ব নিরাপত্তারক্ষী। সরকারি কিংবা বেসরকারি ব্যাংকের নিরাপত্তা রক্ষীদের সম্বল বলতে সেকেলে দোনলা বন্দুক অথবা ৪০-৪৫ বছরের পুরানো সাব মেশিন কার্বাইন (এসএমসি)। ২১ এপ্রিল মঙ্গলবার দুপুরে আশুলিয়ায় ব্যাংক ডাকাতির পর দেশের গুরুত্বপূর্ণ জেলা শহরে অবস্থিত বিভিন্ন ব্যাংকের শাখার নিরাপত্তা বাড়ানোর বিষয়টি নতুন করে ভেবে দেখার সময় এসেছে বলে মত দিয়েছেন সাধারণ গ্রাহক থেকে শুরু করে বিশেষজ্ঞরা।
এই যেমন, দেশের সবচেয়ে বড় রাষ্ট্রয়াত্ব ব্যাংক সোনালি ব্যাংকের চুয়াডাঙ্গা ও মেহেরপুর জেলার আঞ্চলিক অফিসের কার্যক্রম শহরের চৌরাস্তার মোড়ে অবস্থিত বহু পুরোনো একটি ভবনে চলছে দীর্ঘদিন ধরে। দিনের বেলায় রাস্তায় লোকজনের ভিড় ও কয়েকজন সশস্ত্র পুলিশ প্রহরা থাকলেও রাতে যেভাবে ব্যাংকের নিরাপত্তার কাজ চলছে তা নিয়ে যথেষ্ট উদ্বেগ দেখা গেছে সাধারণ মানুষের মধ্যে।
আঞ্চলিক এ কার্যালয়ে তিন শিফটে ৮ জন সশস্ত্র পুলিশ দায়িত্ব পালন করেন। প্রায় ৮০ বছরের পুরোনো ভবনের আশপাশ ঘিরে গড়ে উঠেছে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, আবাসিক ভবন যেগুলো ব্যাংকের নিরাপত্তা ব্যবস্থাকে প্রশ্নের মুখে ফেলেছে। কর্তৃপক্ষ বলেছে অচিরেই এ ভবন ভেঙে তৈরি হচ্ছে নতুন বিল্ডিং। ইতোমধ্যে নকশাও অনুমোদন করা হয়েছে।
আর চুয়াডাঙ্গা শহরে যে কয়টি বেসরকারি ব্যাংকের শাখা রয়েছে সেগুলোর সবকটি চলছে ভাড়া করা ভবনে। নিরাপত্তা বলতে ওই সিসি ক্যামেরা আর জনা কয়েক নিরস্ত্র নিরাপত্তাকর্মী। কয়েকটি ব্যাংকের শাখা শহরের এমন অংশে রয়েছে, যে সেখান থেকে যেকোনো সময়ে অঘটন ঘটিয়ে নির্বিঘ্নে পালিয়ে যেতে পারবে দুর্বৃত্তরা। দেশের বিভিন্ন স্থানে ভল্ট ভেঙে টাকা চুরির ঘটনা শুরু হলে গত বছরের ফেব্রুয়ারি-মার্চ মাসে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশে নিরাপত্তা ব্যবস্থার বাড়ানোর নামে শুরু হয় কড়াকড়ি। যা ছিলো অনেকটা লোক দেখানো আর গ্রাহক ভোগান্তি ছাড়া আর কিছু নয়। কয়েকদিন পরেই ব্যাংকগুলোর নিরাপত্তা আবার আগের মতো হয়ে যায়, এখনও সেই ঢিলেঢালা ভাবেই চলছে।
এসব নিয়ে অবশ্য চিন্তিত নন সোনালী ব্যাংক, চুয়াডাঙ্গা আঞ্চলিক কার্যালয়ের উপমহাব্যবস্থাপক আমির হোসেন। এ ব্যাংক কর্মকর্তার দাবি, তাদের নিরাপত্তা ব্যবস্থা সন্তোষজনক। বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে নিরাপত্তা বিষয়ক প্রজ্ঞাপন জারি হওয়ার পর চুয়াডাঙ্গা সোনালী ব্যাংকের নিরাপত্তা কয়েক স্তরে বাড়ানো হয়েছে বলেও জানালেন উপমহাব্যবস্থাপক আমির হোসেন। নিরাপত্তা নিয়ে সন্তোষ প্রকাশ করে একই কথা বললেন সোনালি ব্যাংক শাখার উপমহাব্যবস্থাপক মো. শওকত আলী (একই ভবনে দুটি শাখা)। অথচ ঠিক তখনই এ ব্যাংকের সামনে দেখা গেলো উত্তরা ব্যাংকের জন্য সোনালী ব্যাংক থেকে টাকা তুলে সেই টাকা ভর্তি ট্রাঙ্ক তোলা হচ্ছে ইজিবাইকে। নিরাপত্তারক্ষী হিসেবে ৩ জন আনসার সদস্য, তাদের কাছে একটি একনলা বন্দুক।
প্রাচীন এ ভবনটিতে চুয়াডাঙ্গা জেলার ট্রেজারি শাখার মালামাল (চুয়াডাঙ্গা জেলার অন্য ব্যাংকের টাকা, সোনার গয়নাগাটিসহ, মূল্যবান সামগ্রী ও নথিপত্র) রাখা হয়। ব্যাংকের সিসিটিভি রেকর্ডারটি (ডিভিআর) দেখা গেলো খোলা স্থানে বসানো হয়েছে। আর বেসরকারি ব্র্যাক ব্যাংকের চুয়াডাঙ্গা শাখায় অস্ত্রধারী কোনো নিরাপত্তাকর্মী নেই বলে স্বীকার করেছেন সেখানকার ব্যবস্থাপক মাহফুজ হায়দার। এসএমই ক্যাটাগরির এ ব্রাঞ্চের ভল্টে ৩ কোটি টাকা মজুদ রাখার ব্যবস্থা আছে বলে জানিয়েছেন ব্র্যাক ব্যাংক চুয়াডাঙ্গা শাখার ব্যবস্থাপক। বেসরকারি সিকিউরিটি কোম্পানির আগ্নেয়াস্ত্রবিহীন সদস্যদের দিয়ে দায়সারা নিরাপত্তা ব্যবস্থাসহ অন্য সকল তথ্য দিতে ব্র্যাকসহ বেসরকারি ব্যাংকের কর্মকর্তাদের চরম অনীহা। এ সবের জন্য নাকি ওপর মহলের অনুমতি লাগে। নিরাপত্তা ব্যবস্থার নাজুক অবস্থা দেখা গেছে শহরের অন্য বেসরকারি ব্যাংকের শাখা এবং এটিএম বুথগুলোতে।
আশুলিয়ায় ৭ জনকে খুন করে ব্যাংক ডাকাতির ঘটনার পর শুধু সোনালী ব্যাংক নয় চুয়াডাঙ্গা জেলায় অবস্থিত সরকারি-বেসরকারি ব্যাংকগুলোর নিরাপত্তা ব্যবস্থায় যথেষ্ট উদ্বিগ্ন সাধারণ গ্রাহকরা। জেলার বেশ কয়েকটি ব্যাংকের শাখায় ঘটে যাওয়া প্রতারণা করে অন্যের টাকা হাতিয়ে নেয়াসহ যেকোনো ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা এড়াতে ব্যাংক কর্তৃপক্ষের কাছে তারা দাবি করলেন যতোদ্রুত সম্ভব কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য।