ঢাকা থেকে যাত্রী নিয়ে চুয়াডাঙ্গায় ফেরার একদিন পর মালিক-চলকের বিরোধ : পাল্টাপাল্টি অভিযোগ
স্টাফ রিপোর্টার: মাইক্রোবাস মালিকের সাথে চালকের বিরোধের জের ধরে গতকাল সোমবার মারপিট ও নার্সিং হোম ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে। মাইক্রোবাস চালককে দুপুরে ধরে নিয়ে হাসপাতাল কম্পাউন্ডে নির্মমভাবে নির্যাতন করা হয়। বিকেল ৫টার দিকে মাইক্রোবাস মালিক সাইদুর রহমানের নিরাময় নাসিং হোমে হামলা চালিয়ে তছনছ করা হয়। এ ঘটনায় উভয়পক্ষ থানায় পাল্টাপাল্টি অভিযোগ করেছে।
জানা গেছে, চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের অদূরবর্তী নিরাময় নার্সিং হোমের পরিচালক সাইদুর রহমানের মাইক্রোবাসচালক হিসেবে কাজ করে আসছিলেন রুহুল আমিন। তিনি দামুড়হুদা মদনা-পারকৃষ্ণপুর ইউনিয়সের সড়াবাড়িয়া গ্রামের বাবর আলী শাহর ছেলে। মাইক্রোর ভাড়া নিয়ে চালক ঢাকায় যান। গত শনিবার ফেরেন। ফেরার পথে একাধিক যাত্রী গাবতলী থেকে তুলে চুয়াডাঙ্গার উদ্দেশে রওনা হন। যাত্রীদের একজনের নিকট থেকে মেমোরিকার্ড নিয়ে গানও শোনেন মাইক্রোচালকসহ সকলে। বিষয়টি জানার পর মাইক্রোবাসের মলিকের সাথে চালকের বিরোধ দানা বাধে।
হাসপাতাল এলাকার একাধিক ব্যক্তি জানান, মাইক্রোবাসযোগে ফেরা দর্শনার এক নারী যাত্রীর সাথে মোবাইলফোনে চালকের কথা হয়। চালক নিজেকে স্বপন ড্রাইভার বলে পরিচয় দিয়ে মোবাইলফোনে কথা বললে নারী যাত্রীর এক নিকটাত্মীয় চুয়াডাঙ্গা কলোনিপাড়ার বাসিন্দা ক্ষুব্ধ হন। মোবাইলফোনে আপত্তিকর কথা বলা হয় বলে অভিযোগ তুলে তিনি স্বপন ড্রাইভারকে খুঁজতে শুরু করেন। গতপরশু রোববার হাসপাতালের অ্যাম্বুলেন্স চালক স্বপনের সাথে উত্তপ্ত বাক্য বিনিময়ও করেন। এক পর্যায়ে যাত্রীর লোকজন জানতে পারেন ঢাকা থেকে ফেরা মাইক্রোটি ছিলো নিরাময় নার্সিং হোমের সাইদুরের। তারা মাইক্রোবাসচালকের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেন।
মাইক্রোবাসচালক অবশ্য নারী যাত্রীর সাথে মোবাইলফোনে কথা বলার বিষয়টি অস্বীকার করে বলেছেন, ঢাকা থেকে ফেরার সময় দুজন যাত্রী নিয়ে ফিরছিলাম। ওদের একজনের মেমরি কার্ড নিয়ে গান শুনতে শুনতে ফিরি। ওই কার্ড না নিয়ে দর্শনার যাত্রী দর্শনায় চলে যান। পরে আমি-ই মোবাইলফোনে মেমরিকার্ড ফেরত নেয়ার জন্য তাদেরকে বললে ওরা খুঁজতে এসে মাইক্রোবাস মালিকের নিকট মিথ্য অভিযোগ করে। এরই এক পর্যায়ে ১০-১২ জন লোক দুপুরে ধরে নিয়ে হাসপাতাল এলাকায় আটকে হকিস্টিক দিয়ে বেদম পিটিয়ে আহত করে। বেলা ২টার দিকে সেখান থেকে মুক্ত হলে চিকিৎসা নিয়ে মাইক্রোস্ট্যান্ডে ফিরে অভিযোগ করতে থানায় যাই। মাইক্রোবাসের মালিকই তার লোকজন দিয়ে আমাকে নির্মমভাবে নির্যাতন করেছে।
পক্ষান্তরে মাইক্রোবাসমালিক চালকের কথা সঠিক নয় বলে দাবি তুলে বলেছে, ওকে কারা ধরে নিয়ে মেরেছে জানি না। ঢাকা থেকে ফেরার সময় যাত্রীও আনতে বলেনি, কোনো যাত্রীকে উত্ত্যক্তও করতে বলেনি। অথচ বিকেলে নিরাময় নাসিং হোমে হামলা চালিয়ে তছনছ করেছে। কাউন্টারে থাকা টাকাও ছিনিয়ে নিয়ে গেছে। নাসিং হোমের এক্স-রেসহ আসবাবপত্র ভেঙে তছনছ করেছে মাইক্রোচালক রুহুল আমিনও তার লোকজন। মাইক্রোবাসের চালকদেরও অনেকেই ছিলো। এ বিষয়ে গতরাতে সদর থানায় লিখিতভাবে অভিযোগ করা হয়েছে।
চুয়াডাঙ্গা মাইক্রোবাস চালক-শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি টোকন মিস্ত্রির সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেছেন, মাইক্রোবাসমালিক সাইদুর অন্যায়ভাবে চালক রুহুল আমিনকে মারপিট করেছেন। নির্যাতনের পর চালক রুহুল আমিন চিকিৎসা নিয়ে সদর থানায় মামলা করে। বিকেলে নিরাময় নাসিং হোমে কে বা কারা ভাঙচুর করেছে তা আহত চালক জানবে কীভাবে? তাছাড়া ওই সাইদুরের অনেক প্রতিপক্ষ রয়েছে তারাই সুযোগ বুঝে ভাঙচুর করেছে কি-না তা খতিয়ে দেখতে হবে।
পুলিশ বলেছে, ঘটনার আড়ালে অনেক ঘটনা রয়েছে। উভয়পক্ষেরই বক্তব্য শুনেছি। প্রাথমিক তদন্তপূর্বক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।