ঐতিহাসিক মুজিবনগর দিবস আজ

মুজিবনগর প্রতিনিধি: আজ ১৭ এপ্রিল, ঐতিহাসিক মুজিবনগর দিবস। বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রাম তথা মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে এক অবিস্মরণীয় দিন। আজ থেকে ৪৪ বছর আগে ১৯৭১ সালের এই দিনে তত্কালীন কুষ্টিয়া জেলার মেহেরপুর মহকুমার বৈদ্যনাথতলার আম্রকাননে বাংলাদেশ সরকারের প্রথম মন্ত্রিসভা শপথ গ্রহণ করে। রচিত হয় স্বাধীন বাংলাদেশের নতুন ইতিহাস। ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। এর তিন সপ্তা পর বৈদ্যনাথতলা নামে পরিচিত ওই বিশাল আমবাগান এলাকাকেই মুজিবনগর নাম দিয়ে বাংলাদেশের অস্থায়ী রাজধানী ঘোষণা করা হয়েছিলো। বাংলাদেশকে পাক হানাদার বাহিনীর দখলমুক্ত করতে মুজিবনগর সরকারের নেতৃত্বেই পরিচালিত হয় সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধ। মুজিবনগর সরকারের দক্ষ নেতৃত্ব ও পরিচালনায় নয় মাসের সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের সফল পরিণতিতে ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর বিশ্ব মানচিত্রে বাঙালির নিজস্ব আবাসভূমি স্বাধীন-সার্বভৌম গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের অভ্যুদয় ঘটে।

একাত্তরের ১৭ এপ্রিল তাজউদ্দীন আহমদ ও সৈয়দ নজরুল ইসলাম অন্য নেতৃবৃন্দকে সাথে নিয়ে সকাল ৯টার দিকে বৈদ্যনাথতলায় পৌঁছান। গ্রামবাসীর পাশাপাশি দেশি-বিদেশি শতাধিক সাংবাদিক এবং ভারতীয় নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরাও আসেন। তাদের মধ্যে ছিলেন ব্রিটিশ সাংবাদিক মার্ক টালি ও পিটার হেস। বহু প্রতীক্ষিত শপথগ্রহণ অনুষ্ঠান শুরু হয় বেলা ১১টায়। মেজর আবু উসমান চৌধুরীর পৌঁছাতে বিলম্ব হওয়ায় ক্যাপ্টেন মাহবুব উদ্দীন আহমেদ ইপিআর আনসারের একটি ছোট্ট দল নিয়ে নেতৃবৃন্দকে অভিবাদন জানান। অভিবাদন গ্রহণের পর স্থানীয় শিল্পীদের জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশনের মধ্য দিয়ে সৈয়দ নজরুল ইসলাম বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন। গৌরীনগরের বাকের আলীর কোরআন তেলাওয়াত এবং ভবেরপাড়া গ্রামের পিন্টু বিশ্বাসের বাইবেল পাঠের মাধ্যমে শুরু হয় আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে রাষ্ট্রপতি ও সৈয়দ নজরুল ইসলামকে উপরাষ্ট্রপতি, তাজউদ্দীন আহমদকে প্রধানমন্ত্রী এবং ক্যাপ্টেন এম মনসুর আলী ও এএইচএম কামরুজ্জামানকে মন্ত্রিসভার সদস্য করে স্বাধীন বাংলা অস্থায়ী বিপ্লবী সরকার গঠন করা হয়। পাকিস্তানের কারাগারে বন্দী বঙ্গবন্ধুর অনুপস্থিতিতে উপরাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলামকে করা হয় অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি।

বাংলা, বাঙালি, মুক্তিযুদ্ধ ও মুজিবনগর যেন অভিন্ন নাম। ১৭৫৭ সালের ২৩ জুন পলাশীর আম্রকাননে বাংলা, বিহার ও উড়িষ্যার স্বাধীনতার যে সূর্য অস্তমিত হয়েছিলো, বাঙালির সেই স্বাধীনতার সূর্য আবারও উদিত হয়েছিলো ১৯৭১ সালের ১৭ এপ্রিল মেহেরপুরের ভবেরপাড়া গ্রামের বৈদ্যনাথতলার আম্রকাননে। একাত্তরের এই দিনে বাঙালি জাতি নতুন করে আবার জেগে ওঠে, মুছে দেয় পরাজয়ের গ্লানি।

বেশ কয়েকদিন আগে থেকেই আম্রকাননসহ গোটা কমপ্লেক্স জুড়ে চলছে নানা প্রস্তুতি। স্থাপনাগুলো ধোয়া মোছার কাজও চলছে জোরেসোরে। মুজিবনগর দিবসের আলোচনাসভার জন্য প্রস্তুত করা হচ্ছে শেখ হাসিনা মঞ্চ। এছাড়াও বর্ণিল সাজে সাজানো হচ্ছে কমপ্লেক্স। গড়ে তোলা হচ্ছে নিরাপত্তা বলয়। সুষ্ঠু সুন্দরভাবে অনুষ্ঠান সম্পন্ন করার লক্ষ্যে জেলা প্রশাসন ও মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয় নানা কর্মসূচি হাতে নিয়েছে।

বিকেলে অনুষ্ঠানস্থল পরিদর্শন করেন এমপি ফরহাদ হোসেন দোদুল, মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয়ের সচিব এমএ হান্নান, জেলা প্রশাসক মাহমুদ হোসেন, গণপূর্ত অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী আহসান উল্লাহ ও পুলিশ সুপার হামিদুল আলমসহ কর্মকর্তাবৃন্দ।

অনুষ্ঠানমালা: সূর্যোদয়ের সাথে সাথে মুজিবনগর স্মৃতিসৌধে জাতীয় পতাকা উত্তোলন এবং সকাল আটটায় পুষ্পস্তবক অর্পণ। সোয়া আটটায় গার্ড অনার প্রদান ও কুচকাওয়াজ প্রদর্শন। সকাল নয়টায় আনসার ও ভিডিপি কর্তৃক হে তারুণ্য তুমি রুখে দাঁড়াও শিরোনামে উপস্থাপনা। সকাল সাড়ে নয়টায় শেখ হাসিনা মঞ্চে মুজিবনগর দিবসের আলোচনা সভা এবং বিকাল সাড়ে চারটায় মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে। যেখানে সুবির নন্দী, শাকিলা জাফর, স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের শিল্পীবৃন্দসহ দেশের খ্যাতনামা সঙ্গীত শিল্পীরা গান পরিবেশন করবেন।

অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করবেন মুজিবনগর দিবস উদযাপন কমিটির সভাপতি স্বাস্থ্যমন্ত্রী নাসিম। প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তৃতা করবেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এলজিআরডি মন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম। বক্তব্য রাখবেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আমল হানিফ, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ.ক.ম মোজাম্মেল হক, আওয়ামী লীগের কার্য নির্বাহী সদস্য সিমিন হোসেন রিমি এমপি, খাইরুজ্জামান লিটন, মৎস্য ও প্রাণী সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নারায়ণ চন্দ্র চন্দ, যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী অ্যাড. বীরেন শিকদার, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ফরহাদ হোসেন দোদুল এমপি ও সাধারণ সম্পাদক এমএ খালেক।