রাজনৈতিক অস্থিরতায় উত্পাদন ক্ষতি ৪৯০০ কোটি টাকা

স্টাফ রিপোর্টার: দেশে রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে মধ্য মার্চ পর্যন্ত প্রায় আড়াই মাসে ৪ হাজার ৯০০ কোটি টাকা উত্পাদন ক্ষতি হয়েছে। এমনটিই দাবি করেছে বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ-সিপিডি। বাজেট পূর্ব অর্থনৈতিক পর্যালোচনা উপস্থাপন উপলক্ষে গতকাল রোববার সকালে রাজধানীর ব্র্যাক ইন সেন্টারে সিপিডি আয়োজিত সাংবাদিক সম্মেলনে এ দাবি করা হয়েছে।

অনুষ্ঠানে সিপিডির ডিসটিংগুইশড ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, বর্তমানে দেশের সামষ্টিক অর্থনীতিতে নানা ইতিবাচক দিক থাকা সত্ত্বেও ব্যক্তিখাতের বিনিয়োগে তেজী ভাব নেই। এর কারণ হলো রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা এবং প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কারের অভাব। আগামী অর্থ বছরের বাজেটে বেসরকারি বিনিয়োগ বাড়িয়ে অর্থনীতির গতিকে বেগবান করাই হবে মূল চ্যালেঞ্জ। এছাড়া বাজেটে রাজস্ব আয় বৃদ্ধি এবং রেমিট্যান্স আয় বাড়াতে অধিকতর গুরুত্ব দিতে হবে।

সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ড. মুস্তাফিজুর রহমান এবং অতিরিক্ত গবেষণা পরিচালক ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। এতে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সিপিডির রিসার্চ ফেলো তৌফিকুল ইসলাম খান। তিনি বলেন, গত ৫ জানুয়ারি থেকে ১৭ মার্চ পর্যন্ত হরতাল ও অবরোধে বিভিন্ন খাতের উত্পাদন ব্যাহত হয়েছে। যার বাজারমূল্য প্রায় ৪ হাজার ৯০০ কোটি টাকা। এ ক্ষেত্রে মোট ক্ষতি বেশি হলেও দ্বৈত হিসাবায়ন বিবেচনায় নিয়ে নিট উত্পাদন ক্ষতি ধরা হয়েছে। এ ক্ষতির ফলে চলতি অর্থ বছরের জিডিপি প্রবৃদ্ধি শূন্য দশমিক ৫৫ শতাংশ কমবে।

খাতগুলোর মধ্যে কৃষিতে ৩৯৮ কোটি টাকা, পোলট্রিতে ৬০৬ কোটি, চিংড়ি ও হিমায়িত খাদ্যে ৭৪১ কোটি, গার্মেন্টস খাতে ১ হাজার ৩১৮ কোটি, প্লাস্টিক খাতে ২৪৪ কোটি, যোগাযোগ ও পরিবহন খাতে ৭৪৪ কোটি, পর্যটনে ৮২৫ কোটি, ব্যাংক ও বীমা খাতে ১৫৬ কোটি এবং পাইকারি ও খুচরা বিক্রি খাতে ৪৪৮ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। তবে সম্পদের ক্ষতি এই হিসাবের মধ্যে নেই। সম্পদের ক্ষতি যোগ হলে মোট ক্ষতি আরো বাড়বে।

রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা সরকারের রাজস্ব আদায়ে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে উল্লেখ করে তৌফিকুল ইসলাম বলেন, চলতি অর্থ বছরের প্রথম ৮ মাসে আয়কর, মূসক ও শুল্কসহ রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) আয় ও এনবিআর বহির্ভূত আয় লক্ষ্যমাত্রা থেকে অনেক দূরে রয়েছে। বছর শেষে সরকারের রাজস্ব আয়ে ২৫ হাজার কোটি টাকা ঘাটতি থাকতে পারে। বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) বাস্তবায়নও অনেক কম। ৮ মাসে এডিপির মাত্র ৩৮ দশমিক ৫ শতাংশ বাস্তবায়ন হয়েছে।

অর্থনীতির সার্বিক দিক নিয়ে ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, বর্তমানে দেশের মূল্যস্ফীতির হার, বাণিজ্যিক সুদের হার এবং মুদ্রা বিনিময় হার স্থিতিশীল রয়েছে। বৈদেশিক আয়-ব্যয়ে উদ্বৃত্ত রয়েছে। বিশ্বব্যাপি তেলের দাম কমায় ভর্তুকির চাপও কম। তাই সামষ্টিক অর্থনীতি স্থিতিশীল রয়েছে; কিন্তু এসব সুযোগ থাকার পরও ব্যক্তিখাতের বিনিয়োগ খুব কম। তিনি বলেন, বর্তমানে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ৬ শতাংশের ফাঁদ থেকে বের করে আনতে হলে ৬ষ্ঠ পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা বাস্তবায়ন জরুরি হয়ে পড়েছে।

ড. মুস্তাফিজুর রহমান বলেন, রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার মধ্যেও অর্থনীতির বেশ কয়েকটি সূচক ইতিবাচক রয়েছে। তবে বিশ্বব্যাপি তেলের দাম কমায় মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর অর্থনীতি কিছুটা চাপে রয়েছে। এর প্রভাব আমাদের রেমিট্যান্স আয়ে পড়তে পারে। সিপিডির প্রবন্ধে বলা হয়েছে, আগামী বছর টাকার চাহিদা বাড়বে। কারণ সরকারি চাকরিজীবীদের বেতন কাঠামো বাস্তবায়ন করতে হলে এ খাতে বাড়তি ২২ হাজার কোটি টাকা লাগবে। তবে ইতিবাচক দিক হলো- বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দাম কমায় এবার সরকারের ভতুর্কি কমবে। ধারণা করা হচ্ছে, আগামী অর্থ বছরেও জ্বালানি তেলের দাম বাড়বে না।

এদিকে বাজেট ঘাটতি অর্থায়নে সরকারের ব্যাংকের ওপর নির্ভরশীলতা কমলেও সঞ্চয়পত্রের মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ অর্থ নেয়া হচ্ছে। পুরো অর্থ বছরে সরকারের সঞ্চয়পত্র বিক্রির লক্ষ্যমাত্রা ছিলো ৯ হাজার ৫৬ কোটি টাকা। তবে জুলাই থেকে জানুয়ারি পর্যন্ত ৭ মাসে সরকার ১৫ হাজার ৭৪৭ কোটি টাকার সঞ্চয়পত্র বিক্রি করেছে। তবে ব্যাংক থেকে যে পরিমাণ ঋণ নেয়ার লক্ষ্যমাত্রা ছিলো, বছর শেষে তা কম থাকবে। এছাড়া ঘাটতি বিবেচনায় নিয়েই নতুন বছরের লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করতে হবে। কর বহির্ভূত আয়ের দিকে আরো জোর দিতে হবে। পাশাপাশি ভ্যাট আইন চূড়ান্ত করে তা কার্যকর করা প্রয়োজন বলেও প্রবন্ধে উল্লেখ করা হয়েছে।