মার্সিডিজের মালিক একজন নকল ব্যবসায়ী

স্টাফ রিপোর্টার: শুল্ক ফাঁকি দিয়ে আনা সাত কোটি টাকার মার্সিডিজ বেঞ্জ গাড়ি চালানো সেই বেলায়েত হোসেন একজন নকল পণ্য ব্যবসায়ী। যার সিদ্ধিরগঞ্জের কারখানায় গত মাসে অভিযান চালিয়ে শুল্ক গোয়েন্দারা উদ্ধার করে ২০ কোটি টাকার নকল বিদেশি কসমেটিক্স পণ্য। এরপরই সামনে চলে আসে তার চোরাই মার্সিডিজ কাহিনী।

চব্বিশ ঘণ্টার এক নাটকীয় অভিযান শেষে শুক্রবার রাতে ধানমণ্ডির ৫ নং রোডের ২৩/এ বাড়িতে অভিযান চালিয়ে গাড়িটি আটক করেন শুল্ক গোয়েন্দা। সাত কোটি টাকা দামের গাড়িটি ভুয়া কাগজপত্র দেখিয়ে প্রায় তিন কোটি টাকা শুল্ক ফাঁকি দিয়ে আনা হয়েছিলো। এরপর ২০০৯ সালে ভুয়া বিল অফ এন্ট্রির মাধ্যমে রেজিস্ট্রেশনও করা হয়। এরপর ছয় বছর দাপটের সাথে রাস্তায় চলেছে গাড়িটি। কেউ কোনোদিন কাগজপত্রও চেক করেনি। উল্টো ট্রাফিক সার্জেন্টরা ভিআইপি-সিআইপি মনে করে দেখা মাত্রই স্যালুট দিয়ে রাস্তা পরিস্কার করে দিয়েছে। অথচ গাড়িটি ধরার পর দেখা গেছে এর মালিক একজন মাদকব্যবসায়ী, চোরাকারবারী ও নকল পণ্যের ব্যবসায়ী। এসব করে তিনি হয়েছেন বিপুল বিত্ত বৈভবের মালিক। সদস্য হয়েছেন রাজধানীর বনেদী ক্লাবগুলোতে।

এবারই প্রথম এ ধরনের অভিজাত গাড়ি ধরা পড়েছে শুল্ক গোয়েন্দার অভিযানে। গত শনিবার মগবাজারে অফিসে রাখা মার্সিডিজ গাড়িটি সম্পর্কে যখন তথ্য দিচ্ছিলেন, তখন মহাপরিচালক ডক্টর মইনুল খান নিজেও বিস্ময়ের সাথে প্রশ্ন রেখেছেন, কিভাবে বন্দর দিয়ে গাড়িটি আনা হলো, কিভাবে শুল্ক ফাঁকি দিয়ে আনা গাড়িটি বিআরটিএ-থেকে রেজিস্ট্রেশন পেলো, কেনই বা ট্রাফিক পুলিশ একদিনও গাড়িটির কাগজপত্র চেক করেনি?

শুল্ক গোয়েন্দারা বেলায়েতের অবৈধ সম্পদের খোঁজ নিতে গিয়ে জানতে পারেন, তিনি সিদ্ধিরগঞ্জের সিমরাইলের একজন স্থানীয় বাসিন্দা। তবে থাকেন ঢাকার ধানমণ্ডিতে। সেখানে হানা দিয়েই দেখা যায়, তিনি এ গাড়িটির মালিক। তখন সেটার কাগজপত্র সম্পর্কে অনুসন্ধান করে দেখা যায়, গাড়িটি আনা হয়েছে ২০০৯ সালে। এরপর মিথ্যা ঘোষণায় পদ্মা ওয়েলের নামে একটি বিল অব এন্ট্রির কাগজের নামে গাড়িটি বিআরটিএ-তে রেজিস্ট্রেশন করা হয়।

ডক্টর মইনুল খান জানান, গাড়িটি চোরাইপথে সরাসরি জার্মান থেকে আনা। যার মূল্য ৭ কোটি টাকা। এতে কমপক্ষে ৩ কোটি টাকার শুল্ক ফাঁকি দেয়া হয়েছে। গাড়িটি ২০০৯ সালে ভুয়া বিল অব এন্ট্রি নং সি- ২৫১৩৯-এর মাধ্যমে বন্দর থেকে খালাস করা হয়। প্রতি বছর গাড়িটি বিআরটিএতে নবায়ন করা হয়। এখন কোন বন্দরের কর্মকর্তারা গাড়িটি খালাসে সহায়তা করেছেন সেটা খুঁজে বের করা হবে বলে জানান তিনি।

ডক্টর মইনুল খান বলেন, গাড়িটির মালিক বেলায়েত একজন পেশাদার চোরাচালানকারী। তার কারখানায় এর আগে হানা দিয়ে কোটি কোটি টাকার অবৈধ পণ্য আটকের পর থেকেই তিনি পলাতক। শুক্রবার রাতে র‌্যাব-২’র সহায়তায় তার বাড়িতে হানা দিয়ে গাড়িটি ধরা হয়। তিনি একজন মাদকব্যবসায়ীও। তাকে ধরার জন্য অভিযান অব্যাহত রয়েছে।