পৈত্রিক ভিটের হিস্যা নিতে গড়িমসিতে নির্যাতন : অবশেষে লাশ হলেন পারভীনা

নিথর দেহ হাসপাতালে নেয়ার পর চিকিৎসকের কথা শুনে দ্রুত লাশ সরিয়ে নেয় স্বামীর লোকজন

 

স্টাফ রিপোর্টার: পৈত্রিক ভিটের হিস্যা নিতে বিলম্ব করায় স্বামীর নির্মম নির্যাতনের শিকার স্ত্রী সালমা পারভীন ওরফে পারভীনা অবশেষে লাশ হয়েছেন। ঘটনাটি ঘটেছে গতকাল সন্ধ্যায় চুয়াডাঙ্গার সুবদিয়া কাঁচারিপাড়ায়।

স্বামীপক্ষ ঘটনাকে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা বলে দাবি করলেও পারভীনার মাসহ নিকটজনেরা বলেছেন, দিনভর নির্যাতনের পর সন্ধ্যায় হত্যা করে লাশ বাড়ির পাশের গাছে ঝুলিয়ে রেখেছে। পুলিশ বলেছে, মৃতদেহে স্পষ্ট আঘাতের দাগ রয়েছে। সুরতহাল রিপোর্ট প্রণয়ন শেষে গতরাতেই লাশ পুলিশ হেফাজতে নেয়ার প্রক্রিয়া করা হয়। অবশ্য ময়নাতদন্ত ছাড়াই লাশ দাফনের লক্ষ্যে স্বামীপক্ষের লোকজনকে আপস রফার প্রস্তাবের পাশাপাশি অর্থের বিনিময়ে ঘটনা ধামাচাপা দেয়ার পাঁয়তারা করতে দেখা গেছে।

জানা গেছে, চুয়াডাঙ্গার আলুকদিয়া বাজারপাড়ার মৃত আছির উদ্দীনের তিন মেয়ের মধ্যে সালমা পারভীন ওরফে পারভীনা ছোট। আনুমানিক ১৫ বছর আগে জেলা সদরের সুবদিয়া কাঁচারিপাড়ার মৃত মতলেব কেরুর ছেলে উজ্জ্বলের সাথে পারভীনার বিয়ে হয়। দু সন্তানও আসে এদের সংসারে। উজ্জ্বল সিপি বাংলাদেশের গাড়িচালক। গতরাত সাড়ে ৮টার দিকে পারভীনার নিথরদেহ চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে নেয়া হয়। কর্তব্যরত চিকিৎসক দেখে জানান, অনেক আগেই তো মারা গেছে। এ কথার পর কালবিলম্ব না করে মৃতদেহ হাসপাতাল থেকে দ্রুত সরিয়ে নেয়া হয়। অপরদিকে খবর পেয়ে পারভীনার মা দ্রুত হাসপাতালে ছুটে যান। তিনি অভিযোগ করে বলেন, আমার মেয়েকে ওরা মেরে গলায় ফাঁস লাগিয়ে ঝুলিয়ে রেখে এখন আত্মহত্যা বলে চালানোর চেষ্টা করছে।

গতরাত সাড়ে ১০টার দিকে সুবদিয়া কাঁচারিপাড়াস্থ উজ্জ্বলের বাড়িতে গিয়ে দেখা গেছে, সরোজগঞ্জ পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ এসআই সেকেন্দার মৃতদেহের সুরতহাল রিপোর্ট প্রণয়ন করছেন। তিনি বলেছেন, মৃতদেহে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। আত্মহত্যা কি-না তাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। অপরদিকে স্থানীয়রা এ বিষয়ে মুখ খুলতে চাননি। উজ্জ্বল বাড়ি ছিলো না। তার পক্ষের লোকজন বলেছেন, সন্ধ্যার পর বাড়ির পাশের আমড়া গাছে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছে পারভীনা। পারভীনার ১০ বছর ও ৭ বছর বয়সী দু ছেলে রয়েছে। বড় ছেলে বলেছে, সন্ধ্যায় আব্বা তরমুজ কিনে আনে। তরমুজ দাদিকে দিতে যাওয়ার পর কি হয়েছে জানি না। পাশের বাড়ির লোকজন ঘটনার বিষয়ে তেমন কিছু জানিনে বলে জানালে সন্দেহ ঘনীভূত হয়।

সালমা পারভীন ওরফে পারভীনার মাসহ তার আত্মীয়স্বজন বলেছেন, পারভীনারা তিন বোন। ভাই নেই। আলুকদিয়া বাজারপাড়ার তিন কাঠা বাড়ি সংলগ্ন ৪টি দোকান রয়েছে। ওই দোকানের দিকে উজ্জ্বলের লোলুপ দৃষ্টি পড়ে। দোকান পারভীনার নামে করিয়ে নেয়ার জন্য উঠে পড়ে লাগে। তাছাড়া পারভীনার পিতার আদরের নাতিছেলে তথা পারভীনার মেজ বোনের এক ছেলেকে একটি দোকান দেয়া হবে শুনে আপত্তি তোলে উজ্জ্বল। উজ্জ্বলের সাথে পারভীনা একমত না হওয়ায় এবং পারভীনা পৈত্রিক ভিটের দোকান নামে লিখে না নেয়ায় মাঝে মাঝে নির্মমভাবে নির্যাতন করতো উজ্জ্বল। রোববারও সকালে মারধর করেছে। পারভীনার বড় বোনের স্বামী ইব্রাহিমপুরের বিপ্লবের কাছে ফোন করে উজ্জ্বল বলেছে, তোমাদের শালি তোমরা নিয়ে যাও। না হলে আজ মেরেই ফেলবো। সত্যি সত্যিই যে মেরে গাছে ঝুলিয়ে রাখবে তা বুঝিনি।

পুলিশ বলেছে, যেহেতু মৃত্যু রহস্যজনক, সেহেতু ময়নাতদন্তের জন্য মৃতদেহ উদ্ধার করে পুলিশ হেফাজতে নেয়া হচ্ছে। ময়নাতদন্ত রিপোর্টেই জানা যাবে মৃত্যুর কারণ। তার আগে কেউ হত্যা মামলা করলে তাও গ্রহণ করা হবে। হত্যা মামলা না করা হলে আপাতত অস্বাভাবিক মৃত্যু তথ্য অপমৃত্যু মামলা রেকর্ড করে ময়নাতদন্ত রিপোর্টের জন্য অপেক্ষা করা হবে।