স্টাফ রিপোর্টার: ফারাক্কার বিরূপ প্রভাবে নদ-নদী খাল-বিলে যেমন পানি নেই। তেমনি ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ায় কুষ্টিয়া শহরে চরম পানির সঙ্কট দেখা দিয়েছে। মাসখানেক শহরের লোকজন পানির অভাবে বিভিন্ন জায়গায় ধর্না দিচ্ছে। পানির স্তর নেমে যাওয়ার ফলে ডিপ টিউবয়েলে পানি উঠছে না। ফলে চাহিদামতো পানি না পাওয়ায় চরম দুর্ভোগ পোয়াচ্ছে কুষ্টিয়া পৌরবাসী। অপরদিকে পানির চাহিদা মেটাতে হিমশিম খাচ্ছে পৌর কর্তৃপক্ষ। এ সমস্যার সমাধানে ৩টি গভীর নলকূপ স্থাপনের প্রকল্প হাতে নেয়ার পরিকল্পনার কথা জানালেন পৌর মেয়র আনোয়ার আলী। পানির অপর নাম জীবন। এই পানি ছাড়া মানুষ, প্রাণী, পশু-পাখি বাঁচতে পারে না। পানির অভাবে থমকে যাচ্ছে জনজীবন। কুষ্টিয়ায় ভূগর্ভস্থ পানি ক্রমশ নিচে নেমে যাওয়ায় পানির কলগুলো বিকল হয়ে পড়ছে। পানি স্তর নিচে নেমে যাওয়ার কারণে নদী এলাকাসহ কুষ্টিয়া শহরের বিভিন্ন স্থানে দেখা দিয়েছে খাবার পানির চরম সঙ্কট। টিউবয়েলে অল্প অল্প পানি উঠলেও পানিতে আর্সেনিক ও লবণাক্ততা বৃদ্ধি পেয়েছে। পানি বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এর প্রধান কারণ ফারাক্কার বিরূপ প্রভাবে পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়া। পানির অভাবেই পদ্মা-গড়াই হারিয়েছে তার যৌবন। একদিকে নদী এলাকায় দেখা দিয়েছে মরুময়তা।
অপরদিকে নলকূপগুলোতে পানি না ওঠায় খাবার পানির চরম সঙ্কট। শুষ্ক মরসুম আসতে না আসতেই বিশুদ্ধ পানির এমন হাহাকার কুষ্টিয়া শহরের বিভিন্ন এলাকায়। পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ায় টিউবয়েলে ঠিকমত পানি উঠছে না। আর পৌরসভা থেকে যে পানি সরবরাহ করা হচ্ছে তাও অপর্যাপ্ত। এমন সঙ্কটে বেকায়দায় শহরাবাসী। কুষ্টিয়া শহরসহ নদী এলাকায় খাবার পানির দেখা দিয়েছে তীব্র সঙ্কট। বিশুদ্ধ পানির অভাবে দূষিত পানি খেয়ে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হচ্ছে শ শ মানুষ। বিশুদ্ধ পানির অভাবে দূষিত পানি খেয়ে শ শ মানুষ ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হচ্ছে। বিভিন্ন ধরনের রোগ ব্যাধিতে আক্রান্ত হচ্ছে। সূত্রমতে, প্রায় ৪৭ বর্গকিলোমিটার আয়তনের কুষ্টিয়া পৌরসভায়, দৈনিক পানির চাহিদা অন্তত ৯০ লাখ লিটার। পৌর এলাকায় ১৪টি পাম্পের মাধ্যমে পানি সরবরাহ করা হয়। কিন্তু পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ার কারণে পানি উঠছে না টিউবয়েলে। পৌর কর্তৃপক্ষও পানি সাপ্লাই দিতে পারছে না। এরপরও উদ্ভুত সঙ্কট নিরসনে হাতে নেয়া হয়েছে ৩টি গভীর নলকূপ স্থাপনের। আকাশে মেঘের আনাগোনা থাকলেও বৃষ্টিপাতহীন রুক্ষ ও বৈরি আবহাওয়া জেঁকে বসেছে কুষ্টিয়ায়। দেশের সর্বত্র পানির তীব্র সঙ্কট দেখা দিয়েছে। নদ-নদী, খাল-বিল, ছড়া, ঝরণা, পুকুর, দীঘি, কুয়া শুকিয়ে তলানিতে গিয়ে ঠেকেছে। অধিকাংশ স্থানেই গভীর ও অগভীর নলকূপ দিয়ে পানি উঠছে না। দেশজুড়ে এখন প্রাক-গ্রীষ্মেই ভূগর্ভস্থ পানির স্তর অনেক নিচে নেমে গেছে। বিশুদ্ধ পানির অভাবে শহর-নগর ছাড়াও গ্রামাঞ্চলে অনেকেই দূষিত পানি পান করতে বাধ্য হচ্ছে।
শহরের বাসিন্দা হাফেজ রফিক উদ্দিন জানান, পানি সমস্যার কারণে শহরের মানুষের জীবনযাত্রার মান চরমভাবে ব্যাহত হচ্ছে। আমরা পানির চাহিদা পূরণ করতে বাইরে থেকে পানি সরবরাহ করছি। এ সমস্যার প্রধান কারণ পানি স্তর নিচে নেমে যাওয়া বলে মন্তব্য করেন বিশেষজ্ঞরা। পানি বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ১৯৭৫ সালের ২১ এপ্রিল ফারাক্কার ব্যারেজ চালু হয় এবং তখন থেকে বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চল আস্তে আস্তে মরুময়তার দিকে ধাবিত হয়।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা জানান, ১৯৭৯ সাল থেকে এ পর্যন্ত প্রায় ২০-২৫ ফুট পানির স্তর নিচে নেমে গেছে কুষ্টিয়া জেলায়। ভূগর্ভস্থ পানি স্তর নিচে নেমে যাওয়ার কারণে টেনডেনসি পরিলক্ষিত হচ্ছে। আর এর ফলে আর্সেনিক বিষের ভয়াবহতা দিন দিন তীব্রতর হচ্ছে। সবমিলে কুষ্টিয়াসহ পশ্চিমাঞ্চল ও উত্তরাঞ্চলে পানির সমস্যা প্রকট আকারে ধারণ করছে। এ সমস্যা সমাধান করা না হলে পানি সমস্যা আরো প্রকট আকার ধারণ করবে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দেশের নদীগুলো সচল রাখতে যাবতীয় উদ্যোগ গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করতে হবে। পানির অপব্যবহার ও অপচয় রোধ করার জন্য জনসাধারণকে সচেতন হতে হবে।