বাংলাদেশে সরকার উৎখাতের ছক ছিলো জেএমবির

মাথাভাঙ্গা মনিটর: ভারতের পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমানে বোমা বিস্ফোরণের ঘটনায় দেশটির জাতীয় তদন্ত সংস্থা (এনআইএ) ২১ জনের নাম উল্লেখ করে আদালতে অভিযোগপত্র দিয়েছে। ২১ জনের মধ্যে চারজন বাংলাদেশি। গত বছরের ২ অক্টোবর এ বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে।

গতকাল সোমবার কোলকাতার একটি আদালতে এ অভিযোগপত্র দেয়া হয়। তবে অভিযুক্ত চার বাংলাদেশির নাম জানা যায়নি। অভিযোগপত্রে বলা হয়েছে, বিস্ফোরণের ঘটনায় নিষিদ্ধঘোষিত জামাআতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশের (জেএমবি) সংশ্লিষ্টতা ছিলো। বাংলাদেশে শেখ হাসিনার সরকার উৎখাতের পরিকল্পনাও তাদের ছিলো বলে অভিযোগপত্রে উল্লেখ করা হয়েছে।

দ্য হিন্দুর খবরে আরও বলা হয়েছে, ২১ জনের মধ্যে ১৩ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে, বাকি আটজন পলাতক আছেন। এ ঘটনার সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে এনআইএসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী যে ১৮ জনকে গ্রেফতার করেছিলো তাদের মধ্যে ১৩ জনকে অভিযুক্ত করা হয়েছে।

গত বছরের ২ অক্টোবর বর্ধমানের খাগড়াগড়ের একটি বাড়িতে বোমা বিস্ফোরণে ঘটনাস্থলে মারা যান শাকিল গাজি ও করিম শেখ নামে দু ব্যক্তি। ভারতের কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে গত বছরের ৯ অক্টোবর ঘটনার তদন্তভার হাতে নেয় এনআইএ। তদন্তে এনআইএর গোয়েন্দারা বাংলাদেশ ও ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে জঙ্গি কার্যকলাপের নেটওয়ার্কের কথা জানতে পারে।

এনআইএর এক প্রেসবিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, তদন্তে নেমে ওই বিস্ফোরণের সাথে জেএমবির সংশ্লিষ্টতা খুঁজে পায় তারা। তাদের দাবি, ভারতের যুবকদের প্রশিক্ষণ দিয়ে বাংলাদেশে নাশকতা ঘটানোই লক্ষ্য ছিলো জেএমবির। এজন্য পশ্চিমবঙ্গসহ আসাম ও ঝাড়খণ্ডে প্রশিক্ষণকেন্দ্র গড়ে তোলে জেএমবি। সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক সরকারকে উত্খাত করে সেখানে কঠোর শরিয়াভিত্তিক আইন চালু করার চেষ্টার অংশ হিসেবেই এসব কর্মকাণ্ড চালায় জেএমবি।

বাংলাদেশে লাগাতার জঙ্গিবিরোধী অভিযানে প্রশিক্ষণ শিবির চালানো কঠিন হয়ে পড়ায় তারা বেছে নিয়েছিলো পশ্চিমবঙ্গকে। এনআইএর গোয়েন্দারা জানায়, পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন জায়গায় অবৈধ মাদ্রাসার আড়ালে জিহাদি প্রশিক্ষণ শিবিরও চালাত জেএমবি।

খাগড়াগড়ের বিস্ফোরণে জেএমবির সংশ্লিষ্টতার বিষয়টি উঠে এলে তদন্তের কাজে গত বছরের ১৭ নভেম্বর এনআইএর চার সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল ঢাকায় আসে। এনআইএর মহাপরিচালক শারদ কুমার এ দলের নেতৃত্ব দেন। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব কামাল উদ্দিন আহমেদের নেতৃত্বে গঠিত ছয় সদস্যের একটি কমিটি তাঁদের সঙ্গে আলোচনা করে। এনআইএর দলটি ঢাকায় এসে পুলিশ সদর দপ্তর, ৱ্যাব সদর দপ্তর ও একটি গোয়েন্দা সংস্থার সাথে বৈঠক করে। এ সময় বাংলাদেশের পক্ষ থেকে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত ও যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত ১০ জঙ্গি ও ৪১ শীর্ষ সন্ত্রাসীর তালিকা এনআইএকে দেয়া হয়। অপরদিকে এনআইয়ের পক্ষ থেকে বর্ধমানে বিস্ফোরণের ঘটনায় সন্দেহভাজন পলাতক ১১ জঙ্গির তালিকা দেয়া হয়। এসব তালিকায় থাকা জঙ্গিদের ব্যাপারে বাংলাদেশের কাছে থাকা তথ্য এনআইকে দেয়া হয়। ভারতীয় গোয়েন্দাদের এই সফরের পরপরই বাংলাদেশের সাত সদস্যের একটি গোয়েন্দা প্রতিনিধিদল ২৭ নভেম্বর কোলকাতায় যায়।