ঝিনাইদহে ছাত্রাবাস থেকে পুলিশ পরিচয়ে তুলে নেয়ার সাতদিনের মাথায় ছাত্রদল নেতার গুলিবিদ্ধ লাশ চুয়াডাঙ্গায় উদ্ধার

দু জেলার সীমান্তবর্তী খাড়াগোদা-বদরগঞ্জ সড়ক সংলগ্ন মাঠে মৃতদেহ দেখে চমকে উঠে খবর দিলেন স্থানীয় কৃষকরা : প্রথমে পরিচয় অজ্ঞাত থাকলেও পরে শনাক্ত

 

স্টাফ রিপোর্টার: চুয়াডাঙ্গা জেলা সদরের তিতুদহের খাড়াগোদা রাস্তা সংলগ্ন চন্নতলা মাঠ থেকে এক যুবকের গুলিবিদ্ধ লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। গতকাল বুধবার সকালে চুয়াডাঙ্গা সদর থানা পুলিশ লাশ উদ্ধার করে। এ সময় নিহতের পরিচয় অজ্ঞাত থাকলেও পরে জানা যায়, তিনি ঝিনাইদহ কাঞ্চননগরের জনাব আলীর ছেলে মিরাজুল ইসলাম মির্জা। তিনি ঝিনাইদহ জেলা ছাত্রদলের আহ্বায়ক কমিটির সদস্য ছিলেন।

মির্জার পরিবারের সদস্যদের অভিযোগ, গত ১৭ মার্চ রাত ৮টার দিকে মিরাজুল ইসলামকে একটি ছাত্রাবাস থেকে শাদা পোশাকে ৫-৬ জন ব্যক্তি মাইক্রোযোগে তুলে নিয়ে যায়। এ সময় শাদা পোশাকধারীরা নিজেদেরকে পুলিশ বলে পরিচয় দেয়। পরে ঝিনাইদহ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বিপ্লব কুমার নাথ জানান, মিরাজুল ইসলাম মির্জা নামের তেমন কাউকে পুলিশ ধরেনি। এ বিষয়ে গত ১৮ মার্চ দৈনিক মাথাভাঙ্গা পত্রিকায় একটি প্রতিবেদনও প্রকাশিত হয়।

বাড়ি থেকে পুলিশ পরিচয়ে অপহরণের ৭ দিন পর গতকাল বুধবার সকালে চুয়াডাঙ্গা-ঝিনাইদহের সীমান্তবর্তী খাড়াগোদা গ্রামের সড়ক সংলগ্ন চন্নতলা মাঠের মহাবুল ইসলামের একটি আবাদি জমি থেকে মৃতদেহ উদ্ধার করা হলো। সকালে স্থানীয় কৃষকরা যখন মৃতদেহ দেখতে পান, তখনও ঝরছিলো তাজা রক্ত। খবর পেয়ে সাথে সাথে চুয়াডাঙ্গা সদর থানার ওসি আসাদুজ্জামান মুনসি, তিতুদহ পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ এসআই আব্দুল কাইয়ুম, সিঁন্দুরা পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ এএসআই বায়েজিদ সঙ্গীয় ফোর্স নিয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছান। সকাল সাড়ে ৯টার দিকে ঘটনাস্থলে পৌছান চুয়াডাঙ্গার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার গোলাম বেনজির। তিনি স্থানীয়দের নিকট বর্ণনা শোনেন।

স্থানীয়রা লাশ দেখে বলেছে, হাতে কিছু দিয়ে বেঁধে রাখার স্পষ্ট দাগ থাকলেও লাশে রশি বা অন্য কিছু অবশ্য বাধা ছিলো না। মাথার ডানপাশ দিয়ে কানের নিকট গুলি করে খুন করা হয়েছে। পুলিশেরই মন্তব্য, খুব কাছে থেকে পিস্তল দিয়ে কে বা কারা হত্যা করেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। ঘটনাস্থল থেকে অজ্ঞাত পরিচয়ের লাশ হিসেবেই উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য মৃতদেহ চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালমর্গে রাখা হয়। বেলা বাড়ার সাথে সাথে গুলিবিদ্ধ মৃতদেহ উদ্ধারের খবর আশে পাশে ছড়াতে থাকে। এরই মাঝে গুঞ্জন ওঠে সম্প্রতি বাড়ি থেকে তুলে নেয়া ঝিনাইদহ কাঞ্চননগরের ছাত্রদল নেতা মির্জারই লাশ এটি। বিকেল সাড়ে তিনটার দিকে নিহতের বড় ভাই ইয়াদ আলী মর্গে গিয়ে লাশ শনাক্ত করেন।

নিহতের ভাই ইয়াদ আলী অভিযোগ করেন, মিরাজুলকে পুলিশ তুলে নিয়ে যাওয়ার পর তিনি ঝিনাইদহ সদর থানায় যোগাযোগ করেন। কিন্তু তারা কোনো তথ্য দিতে পারেনি। ইয়াদ আলী দাবি করেন, বিএনপির রাজনীতি করার কারণেই তার ভাইকে পরিকল্পিতভাবে খুন করা হয়েছে।

মিরাজুল ইসলামের মা বুলবুলি খাতুন জানান, ১৭ মার্চ মঙ্গলবার রাত আটটার দিকে তার ছেলে (মিরাজুল) বাড়ির পাশের একটি ছাত্রাবাসে বসে গল্প করছিলো। সে সময় একটি শাদা রঙের মাইক্রোবাসে চার-পাঁচজন লোক এসে ছাত্রাবাসে ঢোকে। ওই ব্যক্তিরা নিজেদের পুলিশ পরিচয় দিয়ে তার ছেলেকে তুলে নিয়ে যায়। এর পর থেকে অনেক খোঁজাখুঁজি করেও তাঁকে পাওয়া যায়নি।

মির্জার বোন চামেলী খাতুন জানান, প্রায় দেড় বছর আগেও তার ভাইকে (মিরাজুল) একইভাবে উঠিয়ে নিয়ে গিয়েছিলো পুলিশ। তখন ১৭ দিন পর একটি বোমা হামলা মামলায় গ্রেফতার দেখানো হয় তাকে। তিনি আরও জানান, সেই সময়ও প্রথমে আটকের কথা অস্বীকার করেছিলো পুলিশ।

চুয়াডাঙ্গা সদর থানার ওসি আসাদুজ্জামান মুনসি বলেন, কারা মিরাজুলকে ধরে নিয়ে গিয়ে খুন করেছে, তা এখনই বলা যাচ্ছে না। তবে খুনের কারণ এবং খুনিদের শনাক্ত করতে পুলিশের তৎপরতা চলছে। ঝিনাইদহ সদর থানার ওসি বিপ্লব কুমার নাথ জানান, মির্জার নিখোঁজের ব্যাপারে তাদের কিছুই জানা নেই। এ ব্যাপারে থানায় কেউ অভিযোগ করেনি বলেও দাবি করেন তিনি। নিহতের বড় ভাই ইয়াদ আলী বাদী হয়ে চুয়াডাঙ্গা থানায় একটি হত্যা মামলা রুজু করেছেন।

ঝিনাইদহ জেলা যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক মীর ফজলে এলাহী জানান, মিরাজুল ইসলাম দলের সক্রীয় নেতা হওয়ায় তার বিরুদ্ধে রাজনৈতিক হয়রানিমূলক একাধিক মামলা দেয়া হয়েছে।