সরোজগঞ্জ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রায় এক হাজার শিক্ষার্থী গণকোচিঙের

শিকার প্রতিবেদনের প্রতিবাদ এবং প্রতিবেদকের বক্তব্য

 

স্টাফ রিপোর্টার: ‘চুয়াডাঙ্গার সরোজগঞ্জ উচ্চ বিদ্যালয়ের তিনটি শ্রেণির প্রায় এক হাজার শিক্ষার্থী গণকোচিঙের শিকার’ শীর্ষক প্রকাশিত প্রতিবেদনটি মিথ্যা বানোয়াট ও ভিত্তিহীন বলে দাবি করা হলেও প্রতিবাদপত্রেই বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক গণকোচিঙের বিষয়টি স্বীকার করেছেন। প্রতিবাদলিপিতে স্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়েছে, ৭ম শ্রেণির ৪৬৬ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে ২৯৯ জন, ৮ম শ্রেণির ৩৯২ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে ৩৭৯ জন এবং দশম শ্রেণির ১৮৭ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে ১০০ জন অতিরিক্ত ক্লাসের অন্তর্ভুক্ত। অথচ নীতিমালায় স্পষ্টভাবে উল্লেখ রয়েছে, একটি শ্রেণির সর্বোচ্চ ৪০ জন শিক্ষার্থীকে অতিরিক্ত ক্লাস করানো যাবে।

গতকাল ২৩ মার্চ দৈনিক মাথাভাঙ্গা পত্রিকায় ‘এক শিক্ষার্থীর আত্মহত্যার পর অবৈধভাবে গণকোচিং বন্ধের আহ্বান জানানো হলেও কর্ণপাত করেননি কর্তারা, সরোজগঞ্জ উচ্চ বিদ্যালয়ের তিন শ্রেণির প্রায় এক হাজার শিক্ষার্থী গণকোচিঙের শিকার’ শীষক প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। এ প্রতিবেদনের প্রতিবাদ জানিয়েছেন বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মো. আকবর আলী। প্রতিবাদলিপিতে বলা হয়েছে, প্রকাশিত সংবাদটি সম্পূর্ণ মিথ্যা, ভিত্তিহীন ও বানোয়াট। প্রকৃত ঘটনা হচ্ছে, বিদ্যালয়ের জেএসসি ও এসএসসি পরীক্ষার ফলাফলের মানোন্নয়নের লক্ষ্যে ৭ম, ৮ম, ও ১০ম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের অভিভাবকবৃন্দের আবেদনের সূত্রে এবং ম্যানেজিং কমিটির অনুমোদন সাপেক্ষে কেবলমাত্র ইচ্ছুক শিক্ষার্থীদের জন্য অতিরিক্ত ক্লাসের ব্যবস্থা করা হয়েছে। সকল শিক্ষার্থীর জন্য নয়। জেএসসি ও এসএসসি পরীক্ষা কেন্দ্র করায় বিদ্যালয়টিতে দীর্ঘদিন যাবত সাধারণ ক্লাস বন্ধ থাকে। বিষয়টি বিবেচনা করে অভিভাবক ও বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের মতামতের ভিত্তিতেই এ অতিরিক্ত ক্লাসের আয়োজন। ৭ম শ্রেণির ৪৬৬ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে ২৯৯ জন, ৮ম শ্রেণির ৩৯২ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে ৩৭৯ জন ও ১০ম শ্রেণির ১৮৭ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে ১০০ জন অতিরিক্ত ক্লাসের অন্তর্ভুক্ত। অতিরিক্ত ক্লাসের ফিস হিসেবে ৭ম শ্রেণির জন্য ৩শ টাকা, ৮ম শ্রেণির জন্য ৪শ টাকা ও ১০ম শ্রেণির জন্য ৫শ টাকা নির্ধারণ করা হয়। শিক্ষার্থীদের আর্থিক অসচ্ছলতার কথা বিবেচনা করে নির্ধারিত ফিস অপেক্ষা অনেক কম ফিসেও অধ্যয়নের সুযোগ দেয়া হয়।

তাছাড়া প্রতিবেদনে প্রধান শিক্ষকের সাথে কোনো স্টাফ প্রতিনিধি এ বিষয়ে কোনো কথা বলেননি বলেও প্রতিবাদলিপিতে উল্লেখ করে প্রতিবেদনের তীব্র প্রতিবাদ জানানো হয়েছে।

প্রতিবাদের প্রেক্ষিতে স্টাফ রিপোর্টার বলেছেন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের কোচিং বাণিজ্য নীতিমালা-২০১২ এবং সরোজগঞ্জ উচ্চ বিদ্যালয়ে গণহারে কীভাবে কোচিং করানো হচ্ছে তা নিয়েই মূলত প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। নীতিমালায় কোনো শ্রেণির শিক্ষার্থীদের গণহারে অতিরিক্ত ক্লাসের অন্তর্ভুক্ত করার সুযোগ নেই। নীতিমালার ২’র খ’ অনুচ্ছেদে বিষয়ভিত্তিক কতো টাকা করে নেয়া যাবে তা উল্লেখের পাশাপাশি প্রতি ক্লাসে সর্বোচ্চ ৪০ জন শিক্ষার্থীকে অংশগ্রহণ করতে পারবে বলে উল্লেখ করা হয়েছে। তাহলে সরোজগঞ্জ বিদ্যালয়ে কি হচ্ছে? শুধু ৮ম শ্রেণির ৩৯২ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে ৩৭৯ জনই যদি অতিরিক্ত ক্লাসের অন্তর্ভুক্ত হয় তাহলে তা কি গণহারে অতিরিক্ত ক্লাসের অন্তর্ভুক্ত নয়? তাছাড়া প্রতিবেদনে প্রশ্ন তুলে বলা হয়, সকলেই যদি কোচিং করানোর মতো পিছিয়ে পড়া হয়, তাহলে শ্রেণিকক্ষে কি হয়?

তাছাড়া সারাদেশে হরতাল-অবরোধের কারণে চলমান এসএসসি পরীক্ষা নেয়া হয়েছে শুক্র ও শনিবার। তাহলে শ্রেণির স্বাভাবিক পাঠদানের ব্যবস্থা না করে কেন কোচিং? সম্প্রতি স্বয়ং শিক্ষামন্ত্রী এ কারণেই ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেছেন, হরতাল-অবরোধের মধ্যে বিদ্যালয়ে স্বাভাবিক ক্লাসের বদলে কোচিং নিয়ে শিক্ষকরা ব্যস্ত। ক্ষুব্ধ এ মন্তব্য গণমাধ্যমে সম্প্রতি প্রচারিতও হয়েছে।