যক্ষ্মা হলে রক্ষা নেই। এখন আর এ কথার ভিত্তি নেই। আগে যক্ষ্মায় হলে মৃত্যু প্রায় অবধারিত বলে মনে করা হতো। বাস্তবেও তেমনটিই ছিলো। সময় বদলেছে। বর্তমানে যক্ষ্মা মোটেও অনিরাময়যোগ্য কোনো রোগ নয়। চিকিত্সাও ব্যয়বহুল নয়। চিকিত্সাসেবা এখন সহজেই মেলে। সরকারিভাবে বিনামূল্যে এ রোগের চিকিত্সা দেয়া হয়। জেলা সদরে সরকারি হাসপাতালে তো বটেই, উপজেলা হাসপাতালেও চিকিত্সা পাওয়া যায়। কোনো কোনো বেসরকারি সেবা সংস্থাকেন্দ্রেও এর চিকিত্সাসেবা দেয়ে হয়। চিকিত্সকের পরামর্শ অনুযায়ী পূর্ণ মেয়াদে ওষুধ সেবন করা হলে যক্ষ্মা সম্পূর্ণ নিরাময় হয়। তা হলে দুশ্চিন্তা কেন? সময় মতো চিকিৎসা না নেয়া এবং যক্ষ্মা সম্পর্কে অসচেতনতার পাশাপাশি পুষ্টিহীনতা দূর করতে না পারাটাই মূলত দুশ্চিন্তার কারণ। এ কারণেই সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে নানা কর্মসূচি পালন করা হয়।
নতুন করে বলার অবকাশ নেই যে, এ রোগটি সম্পূর্ণ নিরাময়যোগ্য হলেও এখন পর্যন্ত আমাদের দেশে প্রধান জনস্বাস্থ্য সমস্যা হিসেবে রয়েছে গেছে। বিশ্বে বছরে ৯০ লাখ মানুষ যক্ষ্মায় আক্রান্ত হয়, এর মধ্যে ৩০ লাখ রোগীই থেকে যান চিকিত্সাসেবার বাইরে। প্রতি বছর এ রোগে মারা যায় ১৪ লাখ মানুষ। বিশ্বে যতো যক্ষ্মারোগী আছেন, তার চল্লিশ শতাংশের বসবাস দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোতে।
পরিসংখ্যানে জানা যায়, বিশ্বের যে বাইশটি দেশে যক্ষ্মার প্রকোপ বিপজ্জনকভাবে বেশি, বাংলাদেশ অন্যতম। এ তালিকায় বাংলাদেশের অবস্থান ষষ্ঠ। বিষয়টি দুশ্চিন্তার নয় কি?
যক্ষ্মার সাথে দারিদ্র্য এবং জীবনযাপন পদ্ধতির সম্পর্ক খুবই নিবিড়। তামাক সেবন যক্ষ্মার অন্যতম প্রধান কারণ। কিন্তু এটাই একমাত্র কারণ নয়। অপুষ্টি, ব্যক্তিগত ও পারিপার্শ্বিক অপরিচ্ছন্নতাও এ রোগ জন্ম দেয়। শহরাঞ্চলের বস্তি এলাকায় বা ঘিঞ্জি পরিবেশে যারা বসবাস করেন, তাদের মধ্যে এ রোগের বিস্তার অধিক। পুষ্টিহীনতার প্রধান কারণ দারিদ্র্য। এক্ষেত্রে অসচেতনতার দায়ও কম নয়। সাধারণ শাকসবজি ও ছোট মাছের মধ্যেও প্রচুর পুষ্টিগুণ আছে। কিন্তু এসব খাদ্য কিভাবে এবং কী পরিমাণে খাওয়া হচ্ছে, তার ওপর বহুলাংশে নির্ভর করে একজন মানুষ দৈনিক কতোটা পুষ্টি গ্রহণ করতে পারছে। এ ব্যাপারে নিম্ন আয়ের নিরক্ষর মানুষের মধ্যে সচেতনতার অভাব থাকাটাও একটি কারণ।
গ্রামাঞ্চলে তো বটেই, শহরেও বাসিন্দাদের মধ্যে প্রত্যাশিত মাত্রায় সিভিকসেন্সের বিকাশ ঘটেনি। বস্তি ও তুলনামূলকভাবে কম উন্নত শহর-জনপদে নালা-নর্দমা পরিষ্কার রাখা হয় না। পারিবারিক ও ব্যক্তিগত জীবনযাপনেও অনেকে এ ব্যাপারে সচেতন নন। পরিণামে রোগের আক্রমণ ঘটতে পারে সহজেই। পুষ্টিহীনতার সমস্যায় যারা ভোগেন, তাদের দেহ তো ডেকে আনার জন্যই যেনো প্রস্তত থাকে। তা হলে যক্ষ্মাই কেন বসে থাকবে?
গতকাল ছিলো বিশ্ব যক্ষ্মা দিবস। আর এ দিবসের প্রতিপাদ্য ছিলো, যক্ষ্মা খুঁজবো ঘরে ঘরে, সুস্থ করবো চিকিত্সা করে। এ স্লোগানের মধ্যে একইসঙ্গে অঙ্গীকার ও তাগিদ রয়েছে। মাঠপর্যায়ের স্বাস্থ্যকর্মী ও সচেতন মানুষ যারা, তাদের জন্য এ সংকল্প ও তাগিদটি যে বেশি প্রযোজ্য, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। সকলে সচেতন ও আন্তরিক হলে যক্ষ্মার প্রকোপ লাঘব অসম্ভব নয়। পুষ্টিহীনতা দূর করতে দরকার দারিদ্র্য দূরকরণে বাস্তবমুখি পদক্ষেপ। দেশে রাজীতির যে হাল তাতে ওই পথ যে দিন দিন দূরে সরে যাচ্ছে তা বালাই বাহুল্য। ফলে সব কিছুর মধ্যেই এখন যে বিষয়টি উঠে আসছে তা হলো দেশের রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা।