আসছে নিউমোনিয়ার টিকা : যুক্ত হচ্ছে পোলিওর ইনজেকশন

স্টাফ রিপোর্টার: দীর্ঘদিন ধরেই সরকারের পরিকল্পনায় থাকা নিয়মিত টিকা দান কর্মসূচিতে যুক্ত হচ্ছে নিউমোনিয়ার টিকা। এছাড়াও পোলিওর মুখে খাওয়ানোর টিকার বদলে যোগ হচ্ছে ইনজেকশন। স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম আজ শনিবার ঢাকায় আনুষ্ঠানিকভাবে নিউমোনিয়ার প্রতিষেধক নিউমোকক্কাল টিকা ও পোলিও ইনজেকশনের উদ্বোধন করবেন। এ পরিকল্পনার অংশ হিসেবে ২০১৩ সালে দেশে টিকা সংরক্ষণের সক্ষমতা বাড়িয়ে দ্বিগুণ করা হয়।

বাংলাদেশে টিকাদান কর্মসূচিতে সহযোগিতা দিয়ে আসা দ্য গ্লোবাল অ্যালায়েন্স ফর ভ্যাকসিনস অ্যান্ড ইমুনাইজেশন (গ্যাভি), ইউনিসেফ, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) ও গ্লোবাল পোলিও ইরাডিকেশন ইনিশিয়েটিভ (জিপিইআই) শুক্রবার এক যৌথ বিবৃতিতে বলেছে নিউমোনিয়ার টিকা ও পোলিও টিকার ইনজেকশন চালু হলে বাংলাদেশের ৩০ লাখ শিশু এর সুফল পাবে।

২০১৮ সালের মধ্যে বিশ্ব থেকে পোলিও নির্মূল পরিকল্পনার অংশ হিসাবে এ টিকার ইনজেকশন চালুর উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। বাংলাদেশসহ দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার ১১টি দেশকে গতবছরই পোলিওমুক্ত ঘোষণা করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। তবে এ অবস্থা ধরে রাখার জন্য টিকাদান কর্মসূচিতে পোলিও টিকা চালিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেয়া হয়েছে।

ডব্লিউএইচও’র পূর্ব ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চলের দেশ পাকিস্তানে এখনও পোলিওর প্রকোপ থাকায় এবং পাকিস্তানের সাথে ভারতের দীর্ঘ সীমান্ত থাকায় দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার জন্য ঝুঁকি থেকেই যাচ্ছে। বাংলাদেশে এতোদিন পোলিওর মুখে খাওয়ানোর টিকা (ওপিভি) ব্যবহার করা হলেও আন্তর্জাতিকভাবেই এ টিকার ইনজেকশন (আইপিভি) চালুর সিদ্ধান্ত হয়েছে। পোলিও টিকা মুখে খাওয়ানো হলে মাঝে মধ্যে শিশুর এ রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঘটনা দেখা যায়। কিন্তু ইনজেকশন আকারে এ টিকা দেয়া হলে সেই ঝুঁকি থাকে না, যদিও এর খরচ তুলনামূলকভাবে বেশি।

গ্যাভির প্রধান নির্বাহী ডা. সেথ বার্কলে বলেন, বাংলাদেশের ৫ বছরের কম বয়সী শিশুমৃত্যুর ক্ষেত্রে ২২ শতাংশ শিশুর মৃত্যুর কারণ নিউমোনিয়া। এ রোগের টিকা চালু হলে শিশুমৃত্যুর হার কমিয়ে আনার ক্ষেত্রে তা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।

উল্লেখ্য, শিশু মৃত্যুর হার কমানোর জন্য সরকার ১৯৭৯ সালে যক্ষা, পোলিও, ডিপথেরিয়া, হুপিং কাশি, টিটেনাস ও হাম-এ ছয় রোগের টিকা দেয়া শুরু করে। বর্তমানে জাতীয় টিকাদান কর্মসূচির আওতায় এক বছরের কম বয়সী শিশুদের ৯টি রোগের টিকা দেয়া হচ্ছে।

একবছর পূর্ণ হওয়ার আগে নিয়মমাফিক সবগুলো টিকা নেয়া শিশুদের হার বর্তমানে ৮৫ শতাংশ। এ সাফল্যের ফলে আরও পাঁচটি দেশের সাথে বাংলাদেশও সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার নির্ধারিত সময়ের আগেই শিশুমৃত্যুর হার কমিয়ে আনার লক্ষ্য পূরণ করতে পেরেছে।

নিয়মিত টিকা দেয়ার ক্ষেত্রে সাফল্যের স্বীকৃতি হিসাবে বাংলাদেশ দুইবার পেয়েছে গ্যাভি বেস্ট পারফরমেন্স অ্যাওয়ার্ড। ঢাকায় ইউনিসেফের প্রতিনিধি এডোয়ার্ড বিগবেডার বলেন, নিউমোনিয়ার টিকা ও পোলিওর ইনজেকশন চালুর মধ্যদিয়ে বাংলাদেশের টিকা দান কর্মসূচি সঠিক পথেই রয়েছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এ বিষয়ে বাংলাদেশকে সহযোগিতা দিয়ে যাবে বলেও বিবৃতিতে উল্ল্যেখ করেছেন সংস্থার প্রতিনিধি ডা. এন পারানিথরন।

উল্লেখ্য, বাংলাদেশে পাঁচ বছরের নিচে শিশুমৃত্যুর এক-পঞ্চমাংশের কারণ নিউমোনিয়া। এ রোগের টিকা চালুর বিষয়টি দীর্ঘদিন ধরেই সরকারের পরিকল্পনায় ছিলো। আর এ পরিকল্পনার অংশ হিসেবে সরকার এ টিকা চালু করছে।