রক্ত ঢেলে ইবি শিক্ষার্থীদের ক্লাস পরীক্ষা চালুর দাবি : প্রশাসন ভবনের সামনে ৩ ঘণ্টা অবস্থান

দু দিনের আল্টিমেটাম

 

সাইফুল ইসলাম রাজ: ক্লাস পরীক্ষা চালুর দাবিতে আন্দোলনে উত্তাল হয়ে উঠেছে কুষ্টিয়ার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়। গতকাল বুধবার ক্লাস পরীক্ষা চালুর দাবিতে শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন ভবনের সামনে প্রায় ৩ ঘণ্টা অবস্থান কর্মসূচি পালন করে। অবস্থান কর্মসূচির এক পর্যায়ে শিক্ষার্থীরা সিরিঞ্জের মাধ্যমে রক্ত সংগ্রহ করে তা প্রশাসন ভবনের সামনে ঢেলে দেন। ক্লাস পরীক্ষা চালুর দাবিতে শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে আগামী শনিবার পর্যন্ত সময়সীমা বেঁধে দিয়েছেন। শনিবার থেকে ক্লাস পরীক্ষা শুরু না হলে ওই দিন থেকে কঠোর কর্মসূচিতে যাবার হুমকি দিয়েছেন শিক্ষার্থীরা।

বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, কুষ্টিয়া ও ঝিনাইদহ জেলার প্রশাসক ও পুলিশ সুপারের সাথে বৈঠকে ক্লাস পরীক্ষা চালুর বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। বিশ্ববিদ্যালয় ও প্রত্যক্ষদর্শীসূত্রে জানা যায়, প্রায় চার মাস ধরে বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ থাকায় ক্লাস পরীক্ষা চালুর দাবিতে গতকাল বুধবার বেলা ১১টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় দু শতাধিক শিক্ষার্থী প্রশাসন ভবনের সামনে অবস্থান নেন। এর আগে গত ১৪ মার্চ শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ে মানববন্ধন কর্মসূচি শেষে ঘোষণা দেয় ১৭ মার্চের মধ্যে ক্লাস পরীক্ষা শুরু না করলে তারা ১৮ মার্চ থেকে আমরণ অনশনে যাবেন। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা ক্লাস পরীক্ষা চালুর দাবিতে প্রশাসন ভবনের সামনে প্রায় তিন ঘণ্টা অবস্থান করেন। অবস্থান কর্মসূচি চলাকালে শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের দু ছাত্র শাহাদাত হোসেন নিশান ও আব্দুর রাজ্জাক রাজের শরীর থেকে দু সিরিঞ্জ রক্ত সংগ্রহ করে তা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন ভবনের সামনে ঢেলে দেয়া হয়। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, অবস্থান কর্মসূচি চলাকালে বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্য অধ্যাপক ড. আবদুল হাকিম সরকার, উপউপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. শাহিনুর রহমান, কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. আফজাল হোসেনসহ প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিরা প্রশাসন ভবনে বৈঠক করছিলেন। বেলা পৌনে ১২টার দিকে উপাচার্য, উপউপাচার্য, কোষাধ্যক্ষ, প্রক্টর অধ্যাপক ড. ত.ম লোকমান হাকিম ও ছাত্র উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. আনোয়ার হোসেন প্রশাসন ভবনের নিচে নেমে এসে শিক্ষার্থীদের সাথে দেখা করেন এবং তাদের উদ্দেশ্যে বক্তব্য রাখেন। উপাচার্য অধ্যাপক ড. আবদুল হাকিম সরকার শিক্ষার্থীদের বলেন, আমরা মনে প্রাণে চাই ক্লাস পরীক্ষা শুরু হোক। একই সাথে আমাদের ছাত্রদের নিরাপত্তার বিষয়টিও ভাবতে হয়। বর্তমান চলমান অবস্থায় বিশ্ববিদ্যালয়ের বাস চলাচল করতে সমস্যা হচ্ছে। এসব কারণে একটি চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে আসতে একটু সময় লাগছে। তবে মিটিঙে একটি ফলপ্রসূ সিদ্ধান্ত আসতে পারে।

জানা গেছে, কবে নাগাদ ক্লাস পরীক্ষা চালু হবে এ বিষয়ে শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে তাদক্ষণিক কোনো সিদ্ধান্ত না পাওয়ায় তারা প্রশাসন ভবনের সামনে অবস্থান করতে থাকেন। এ সময় আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা জানান, কবে নাগাত ক্লাস পরীক্ষা শুরু হবে এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে সুনির্দিষ্ট বার্তা থাকতে হবে। নইলে তারা অবস্থান কর্মসূচি চালিয়ে যাবেন। পরে প্রক্টর অধ্যাপক ড. ত.ম লোকমান হাকিম শিক্ষার্থীদের বলেন, গতকাল বুধবার সন্ধ্যায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সাথে কুষ্টিয়া ও ঝিনাইদহ জেলা জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপারদের বৈঠক রয়েছে। ওই বৈঠকেই ক্লাস পরীক্ষার একটি চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত আসতে পারে। প্রক্টরের এ আশ্বাসের পর শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে আগামী শনিবার পর্যন্ত সময়সীমা বেঁধে দেন। শনিবার থেকে ক্লাস পরীক্ষা চালু না হলে ওই দিন থেকে আবার কঠোর কর্মসূচিতে যাওয়ার ঘোষণা দেন তারা। পরে দুপুর দুইটার দিকে শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাস ত্যাগ করেন। আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী সোলায়মান কবির ও হাফিজ বলেন, বৈঠকে কী সিদ্ধান্ত হয় সেটা দেখবো আমরা। বৈঠকে ইতিবাচক কোনো সিদ্ধান্ত না এলে শনিবার থেকে আবার আমরা কঠোর কর্মসূচিতে যাবো।

এদিকে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের বিভিন্নভাবে হয়রানি করা হয়েছে বলে জানা গেছে। হিসাববিজ্ঞান ও তথ্য পদ্ধতি বিভাগের ছাত্রী সোনিয়া সুলতানা বলেন, ব্যানার, ফেস্টুন নিয়ে প্রধান ফটক দিয়ে ক্যাম্পাসে ঢোকার সময় ছাত্র উপদেষ্টা স্যার ব্যানার ফেস্টুন প্রথমে কেড়ে নেন। পরে আবার ফেরত দেয়া হয় বলে তিনি জানান। এছাড়া প্রধান ফটক দিয়ে ক্যাম্পাসে ঢোকার সময় পরিচয়পত্র দেখার নাম করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন পুলিশ দিয়ে বিভিন্নভাবে হয়রানি করেছেন বলে কয়েকজন আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী অভিযোগ করেছেন।

এ বিষয়ে ইবি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সফিকুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, বহিরাগত ও অছাত্ররা যেন ক্যাম্পাসে না ঢুকে পড়ে সেজন্য পরিচয়পত্র দেখাতে বলা হয়েছে। তবে কাউকে হয়রানি করা হয়নি বলে তিনি জানান।

উপাচার্য অধ্যাপক ড. আবদুল হাকিম সরকার বলেন, দু জেলার আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী কর্তৃপক্ষের সাথে বৈঠক ডাকা হয়েছে। ওই বৈঠকে ক্লাস পরীক্ষা চালুসহ সার্বিক বিষয়ে আলোচনা হবে। আশা করি আমরা অচিরেই একটি ফলপ্রসূ সিদ্ধান্ত পৌছাতে পারবো বলে আমি মনে করছি।

প্রসঙ্গত, গত ১ ডিসেম্বর থেকে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস পরীক্ষা বন্ধ রযেছে। গত বছরের ৩০ নভেম্বর বাস চাপায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র নিহতের জের ধরে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে বিশ্ববিদ্যালয় ৩৭ দিন বন্ধ ছিলো। ছুটি শেষে ৭ জানুয়ারি আবাসিক হল ও বিশ্ববিদ্যালয় খুলে দেয়া হলেও ৯ জানুয়ারি শিবিরের সাথে পুলিশের সংঘর্ষের ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ জরুরি সিন্ডিকেট ডেকে আবার বিশ্ববিদ্যালয় অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করে। শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, বিশ্ববিদ্যালয়ের বন্ধ অবস্থার প্রায় সাড়ে তিনমাস হয়ে গেলেও বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ক্যাম্পাস সচল করতে দৃশ্যমান কোনো উদ্যোগ নিচ্ছেন না।