আলমডাঙ্গার তিয়রবিলার বাবুল-নজরুল গঙের বিরুদ্ধে রামদা ও পিস্তুল উঁচিয়ে হত্যা অপচেষ্টার অভিযোগ

 

আলমডাঙ্গা ব্যুরো: আলমডাঙ্গার তিয়রবিলার ওল্টুকে একই গ্রামের বাবলু-নজরুল গঙের বিরুদ্ধে রামদা ও পিস্তল উঁচিয়ে তাড়িয়ে হত্যা অপচেষ্টার অভিযোগ উঠেছে। এ সময় বাজারের সাধারণ মানুষ গ্যাং গ্রুপের দুজনকে তাড়িয়ে ধরে পুলিশের হাতে তুলে দেয়। একই গ্রামের গৃহবধূ রওশনারাকে অপহরণ করে ধর্ষণ ও মুক্তিপণের টাকা আদায়ের ঘটনায় মামলার প্রস্তুতি নেয়ায় ক্ষুদ্ধ হয়ে অভিযুক্তরা এ হত্যা অপচেষ্টা চালায় বলে এলাকাবাসী অভিযোগ করেছে।

জানা গেছে, তিয়রবিলা গ্রামের রুহুল আমিনের স্ত্রী রওশন আরা (৪০)। রওশন আরা জানিয়েছেন, একই গ্রামের রবির ছেলে ফারুক তাকে বিভিন্ন সময়ে কুপ্রস্তাব দিতো। গত ৪ মার্চ রাত ১১টার দিকে নিকটবর্তী মুন্সির বাড়িতে ধর্মীয় সভা শুনে তিনি একা বাড়ি ফিরছিলেন। সে সময় লুৎফরের বাড়ির সামনে থেকে ফারুক হোসেন ও একই গ্রামের লুৎফর রহমানের ছেলে নজরুল ইসলাম আরও কয়েকজনের সহযোগিতায় তাকে অপহরণ করে মাইক্রোবাসে তুলে চুয়াডাঙ্গার এক বাড়িতে ৮-৯ দিন আটকে রেখে জোরপূর্বক উপর্যুপরি ধর্ষণ করে। পরে মোবাইলফোনে তার স্বামীকে ডেকে ১ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে। দর কষাকষির এক পর্যায়ে তার স্বামীর নিকট থেকে ৪০ হাজার টাকা নিয়ে তাকে মুক্তি দেয়।

এ ঘটনায় গত রোববার রাতে অপহরণ-ধর্ষণের অভিযোগ তুলে ভুক্তভোগী রওশন আরা ফারুক ও নজরুলের বিরুদ্ধে আলমডাঙ্গা থানায় এজাহার দায়ের করতে যান। পরে অভিযুক্তদের ভয়ে ওই রাতে এজাহার না করেই ফেরত যান। নির্যাতিত গৃহবধূ এ বিষয়ে প্রশাসনের সহযোগিতার জন্য মানবাধিকার সংস্থার নিকট যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। নির্যাতিতা গৃহবধূ রওশনারাকে আইনগত সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেন সংশ্লিষ্ট ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান তাফসির আহমেদ লাল।

এদিকে এ অপহরণ, ধর্ষণ ও মুক্তিপণের টাকা আদায়ের ঘটনায় আইনের আশ্রয় গ্রহণের প্রস্তুতিতে ক্ষুদ্ধ হয়ে ওঠে প্রভাবশালী অভিযুক্তরা। গ্রামের অনেকে অভিযোগ করেছে এ প্রভাবশালী অভিযুক্তরা বর্তমান ইউপি চেয়ারম্যানের আশ্রয়-প্রশ্রয় পাচ্ছে। যেহেতু নির্যাতনের শিকার মহিলার পাশে রয়েছেন সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান সে কারণে অভিযুক্ত গ্যাংকে প্রশ্রয় দিচ্ছেন বর্তমান চেয়ারম্যান। গতপরশু রাত থেকে সাবেক ও বর্তমান চেয়ারম্যানদের দ্বন্দ্ব তুঙ্গে ওঠে। গতকাল বিকেলে সাবেক চেয়ারম্যানের লোক বলে পরিচিত তিয়রবিলা গ্রামের ঝড়ু মণ্ডলের ছেলে ওল্টু তিয়রবিলা বাজারের মিনাজ আলীর চায়ের দোকানে বসে ছিলো। এ সময় প্রধান অভিযুক্ত ফারুকের ভাই বাবলু ও অন্যতম অভিযুক্ত নজরুলের নেতৃত্বে কিছু লোকজন আকস্মিকভাবে ওল্টুকে রামদা হাতে তাড়া করে। প্রত্যক্ষদর্শী অনেকে অভিযোগ করেছেন, সেই মুহূর্তে নজরুল পিস্তল উঁচিয়ে ওল্টুকে গুলি করার অপচেষ্টা করে। ওল্টু বিপদ বুঝে লাফ দিয়ে দ্রুত পাশের টানু মিয়ার কাপড়ের দোকানে ঢুকে পড়েন। দোকানি দ্রুত দোকান বন্ধ করে দিলে প্রাণে বেঁচে যান ওল্টু। অন্যদিকে এ ঘটনায় ক্ষুদ্ধ বাজারের সাধারণ মানুষ হামলাকারী নজরুল-বাবলু গ্যাংকে ধাওয়া করে। ধাওয়া খেয়ে অন্যরা পালিয়ে গেলেও ধরা পড়ে দুজন। এরা হলো- তিয়রবিলা গ্রামের মহৎ আলীর ছেলে শাহজাহান আলী (৪০) ও একই গ্রামের দুবা মালিথার ছেলে শহিদুল (৪৫)। স্থানীয়রা দু হামলাকারীকে পিটিয়ে ফাঁড়ি পুলিশের হাতে তুলে দেয়। পরে সংবাদ পেয়ে আলমডাঙ্গা থানা অফিসার ইনচার্জ মামুন-অর রশিদ সঙ্গীয় অফিসার ও ফোর্সসহ ঘটনাস্থলে পৌঁছেন। পরে আটক দুজনকে চিকিৎসার জন্য চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এ ঘটনার পর থেকে নির্যাতনের শিকার রওশন আরা ও তার স্বামী রুহুল আমিন জীবনের নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন।