ইবিতে ক্লাস পরীক্ষা চালুর দাবিতে আন্দোলনে পুলিশের বাধা : শিক্ষার্থীদের আমরণ অনশনের হুমকি

ইবি প্রতিনিধি: ক্লাস পরীক্ষা চালুর দাবিতে আন্দোলনে নেমেছেন ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। ক্লাস পরীক্ষা চালুর দাবিতে তারা গতকাল শনিবার মানববন্ধন ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করলে পুলিশ তাতে বাধা দেয়। ক্যাম্পাস সচল করতে শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে ১৭ মার্চ পর্যন্ত সময় বেধে দিয়েছেন। এ সময়ের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ক্লাস পরীক্ষা চালু না করলে ১৮ মার্চ থেকে আমরণ অনশনে যাওয়ার হুমকি দিয়েছেন শিক্ষার্থীরা। গতকাল শনিবার বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের নিকট ডায়না চত্বরের পাশে মানববন্ধন কর্মসূচি শেষে শিক্ষার্থীরা এ কর্মসূচি ঘোষণা করেন।

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, গত ১ ডিসেম্বর থেকে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস পরীক্ষা বন্ধ রযেছে। শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, বিশ্ববিদ্যালয়ের বন্ধ অবস্থার প্রায় সাড়ে তিনমাস হয়ে গেলেও বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ক্যাম্পাস সচল করতে দৃশ্যমান কোনো উদ্যোগ নিচ্ছে না। ক্লাস পরীক্ষা চালুর দাবিতে শনিবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় দু শতাধিক শিক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসিসির পূর্ব পার্শ্বে অবস্থান নেন। এ সময় শিক্ষার্থীরা প্রশাসন ভবনের দিকে যেতে চাইলে পুলিশ তাতে বাধা দেয়। পুলিশের বাধায় শিক্ষার্থীরা প্রশাসন ভবনের যেতে না পেরে টিএসসিসির পূর্ব পাশের করিডোরে বসে পড়েন। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ঘটনার সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. আবদুল হাকিম সরকার, উপউপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. শাহিনুর রহমান, কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. আফজাল হোসেন ক্যাম্পাসে ছিলেন না। তারা তিনজনেই বর্তমানে ঢাকায় অবস্থান করছেন। পরে বেলা পৌনে ১১টার দিকে প্রক্টর অধ্যাপক ড. ত.ম লোকমান হাকিম ও ছাত্র উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. আনোয়ার হোসেন শিক্ষার্থীদের সাথে দেখা করলে বিশ্ববিদ্যালয়ে কবে থেকে ক্লাস পরীক্ষা শুরু হবে শিক্ষার্থীরা তাদের কাছ থেকে জানতে যান।

এ সময় প্রক্টর ও ছাত্র উপদেষ্টা শিক্ষার্থীদের বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের সাথে কথা হয়েছে। তারা বলেছেন, ক্লাস পরীক্ষা চালু হতে আরও কয়েক সপ্তা সময় লাগতে পারে। একথা শুনে শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ করেন এবং কবে থেকে ক্লাস পরীক্ষা চালু হবে এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে নিশ্চয়তা দাবি করেন। এ সময় বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি সাইফুল ইসলাম, সাধারণ সম্পাদক অমিত কুমার সাহা, সহসভাপতি মিজানুর রহমান মিজু ও এমদাদুল হক সোহাগসহ ছাত্রলীগের ২০-২৫ জন নেতাকর্মী উপস্থিত ছিলেন। পরে ছাত্রলীগের নেতারা সাধারণ শিক্ষার্থীদের সাথে একাত্মতা ঘোষণা করেন। পরে ছাত্রলীগের নেতৃত্বে ক্লাস পরীক্ষা চালুর দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল বের হয়। এ সময় পুলিশ ঘটনাস্থলে থাকলেও বাধা দিতে দেখা যায়নি। মিছিলে এক পর্যায়ে ছাত্রলীগের কর্মীরা দলীয় স্লোগান দেয়া শুরু করলে সাধারণ শিক্ষার্থীরা মিছিল থেকে পৃথক হয়ে যান। পরে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা বিক্ষোভ মিছিল শেষে ক্যাম্পাস ত্যাগ করেন এবং সাধারণ শিক্ষার্থীরা ক্লাস পরীক্ষা চালুর দাবিতে ক্যাম্পাসের অভ্যন্তরীণ ডায়না চত্বর সংলগ্ন সড়কে আলাদাভাবে মানববন্ধন করেন। মানববন্ধন কর্মসূচিতে শিক্ষার্থীরা বলেন, আগামী ১৭ মার্চের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস পরীক্ষা না হলে ১৮ মার্চ থেকে তারা আমরণ অনশনে যাবেন। মানববন্ধনে অংশগ্রহণকারী শিক্ষার্থী তনা রায় বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় প্রায় চারমাস ধরে বন্ধ রয়েছে। হরতাল-অবরোধ স্বত্ত্বেও সব বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস পরীক্ষা চালুর ব্যাপারে ইউজিসি থেকে নির্দেশনা রয়েছে। অথচ বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ সে নির্দেশনা পালন না করে আমাদের শিক্ষাজীবন ধ্বংস করে দিচ্ছে। ক্লাস পরীক্ষা চালু না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে বলে তিনি জানান।

সাধারণ ছাত্রছাত্রীদের কর্মসূচিতে বাধা দেয়ার বিষয়ে ইবি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সফিকুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, ভিসি, প্রোভিসিসহ ঊর্ধ্বতন ব্যক্তিরা ক্যাম্পাসে উপস্থিত না থাকায় ক্যাম্পাসে অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা এড়াতে ও নিরাপত্তার জন্য শিক্ষার্থীদের মিছিল করতে দেয়া হয়নি। এ বিষয়ে প্রক্টর অধ্যাপক ড. ত.ম লোকমান হাকিম বলেন, শিক্ষার্থীদের দাবি বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। তারা এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে। ছাত্রলীগের মিছিলের ব্যাপারে তিনি বলেন, তারা তাদের দলীয় কর্মসূচি পালন করেছে। এটা যেকোনো সংগঠন করতে পারে।

প্রসঙ্গত, গত বছরের ৩০ নভেম্বর বাস চাপায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র নিহতের জের ধরে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে বিশ্ববিদ্যালয় ৩৭ দিন বন্ধ ছিলো। ছুটি শেষে ৭ জানুয়ারি আবাসিক হল ও বিশ্ববিদ্যালয় খুলে দেয়া হলেও ৯ জানুয়ারি শিবিরের সাথে পুলিশের সংঘর্ষের ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ জরুরি সিন্ডিকেট ডেকে আবার বিশ্ববিদ্যালয় অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করে। এরপর থেকে বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ রয়েছে।