পঞ্চদশ সংশোধনী বাতিল করে নির্বাচনের ব্যবস্থা করলেই সঙ্কটের অবসান হবে

সংবাদ সম্মেলনের মধ্যদিয়ে ৫৩ দিন পর গণমাধ্যমের সামনে বেগম খালেদা জিয়া : লিখিত বক্তব্যে ৬ দফা দাবি জানিয়ে বললেন

স্টাফ রিপোর্টার: নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে সকলের অংশগ্রহণে দ্রুত একটি নির্বাচনের আয়োজন করলেই কেবল চলমান সঙ্কটের সমাধান হবে মন্তব্য করে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া বলেছেন, এ নিয়ে ক্ষমতাসীনরা যদি কোনো আলোচনা করতে না চায় তাহলে সমস্যা সমাধানের দায়িত্ব এককভাবে তাদের ওপরেই বর্তাবে। তথাকথিত হলেও একটি সংসদের অধিবেশন চলছে। একতরফাভাবে যে বিতর্কিত পঞ্চদশ সংশোধনী তারা পাস করেছে তা তারা একতরফাভাবে বাতিলও করে দিতে পারে। তাতে নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের পথ খুলবে। এ সংশোধনীর পর বর্তমান ক্ষমতাসীনেরা পদত্যাগ করে নতুন নির্বাচনের ব্যবস্থা করলেই দেশে সঙ্কটের অবসান ঘটবে।

তিনি বলেন, সঙ্কট নিরসনের জন্য ১৯৯৬ সালে আমরা নিয়ম রক্ষার নির্বাচন করে সংবিধান সংশোধনের পর পদত্যাগ করে আমাদের অঙ্গীকার পূরণ করেছিলাম। এখন শেখ হাসিনা অন্তত এবার যদি তার অঙ্গীকার পূরণ করেন তাহলেই দেশে শান্তি, স্বস্তি ও সমঝোতার পরিবেশ ফিরে আসবে। মানুষ মুক্তি পাবে।

বিকেলে গুলশানের কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। এ সংবাদ সম্মেলনের মধ্যদিয়ে ৫৩ দিন পর গণমাধ্যমের মুখোমুখি হলেন তিনি। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পড়ার পর সাংবাদিকদের কাছ থেকে কোনো প্রশ্ন নেননি খালেদা জিয়া।
বিএনপি হত্যার রাজনীতিতে বিশ্বাস করে না উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমরা দৃঢ়ভাবে মনে করি, গণতন্ত্রিক রাজনীতিতে হত্যা ও সন্ত্রাসের কোনো স্থান নেই। তারপরও আমরা লক্ষ্য করেছি যে, জনগণের গণতান্ত্রিক অধিকার আদায়ের বর্তমান আন্দোলন চলাকালে সরকার বিভিন্ন হিংসাত্মক পন্থার আশ্রয় নিয়েছে। সরকারের এ দমন-পীড়ন জাতীয় ঐক্যকে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে এবং দেশকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। এ অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে আমরা মনে করি যে, বিরাজমান সমস্যা সমাধানে জনগণের গণতান্ত্রিক আন্দোলন দমনের উদ্দেশে সারাদেশে যে সব নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছে তাদেরকে অবিলম্বে মুক্তি দিতে হবে। গুম, খুন ও বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড বন্ধ করতে হবে। পুলিশি ও যৌথবাহিনীর হয়রানি বন্ধ করতে হবে এবং নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত হয়রানিমূলক সকল মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার করতে হবে। বিচার বহির্ভূত প্রতিটি হত্যাকাণ্ডের সুষ্ঠু ও বিশ্বাসযোগ্য তদন্ত করে দায়ী ব্যক্তিদের শাস্তি দিতে হবে। সভা-সমাবেশ-মিছিলসহ রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের ওপর আরোপিত সকল প্রকার বিধিনিষেধ অবিলম্বে প্রত্যাহার করতে হবে। সকলের কাছে গ্রহণযোগ্য সরকারের অধীনে সকলের অংশগ্রহণে অনতিবিলম্বে জাতীয় সংসদের অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য সুনির্দিষ্ট তারিখের মধ্যে সংলাপের আয়োজন করতে হবে। আমাদের বিশ্বাস, এ প্রক্রিয়াতেই আমরা সমস্যা সমাধানের পথে এগিয়ে যেতে পারবো। আন্দোলনকে দ্রুত নিয়ে আসতে পারবো শান্তিপূর্ণ সমঝোতার পথে।

তিনি বলেন, স্বাধীনতাকে অর্থবহ করতে, জনগণের স্বাধীনতা এবং মৌলিক ও গণতান্ত্রিক অধিকার পুনপ্রতিষ্ঠা করতে হলে আমাদের জাতীয় ঐক্যের বিকল্প নেই। আজকের সঙ্কট সমাধানের চাবিকাঠি ক্ষমতাসীনদের হাতে। সঙ্কট নিরসনের মাধ্যমে তারা সেই কাঙ্ক্ষিত জাতীয় ঐক্যের পথ খুলে দিতে পারে। তাহলেই আমরা সঙ্কট মুক্ত হয়ে সবাই মিলে ঐক্যবদ্ধভাবে জাতির ৪৫তম স্বাধীনতা দিবস পালন করতে পারবো। আমি আশা করি, ক্ষমতাসীনদের শুভবুদ্ধির উদয় হবে। তারা সমঝোতার পথে ফিরে আসবে। আলোচনার মাধ্যমে বিদ্যমান সঙ্কট দ্রুত নিরসনের উদ্যাগ নেবে।

সংবাদ সম্মেলনে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান, ভাইস চেয়ারম্যান সেলিমা রহমান, চেয়ারপারসনের প্রেসসচিব মারুফ কামাল খান ও বিশেষ সহকারী শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস উপস্থিত ছিলেন।

বিএনপি চেয়ারপারসন ২০ দলীয় জোটের শীর্ষ নেতা বেগম খালেদা জিয়া ৬ দফা দাবি জানিয়েছেন। দাবিগুলো হচ্ছে- ২০ দলের গ্রেফতারকৃত সকল নেতাকর্মীদের মুক্তি। দ্বিতীয়ত- গুম-খুন-হত্যা বন্ধ। তৃতীয়ত- নেতাকর্মীদের নামে দায়ের করা মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার। চতুর্থ দফায় তিনি বলেছেন, সকল হত্যাকাণ্ডের বিশ্বাসযোগ্য তদন্তের মাধ্যমে দায়ীদের শাস্তি দিতে হবে। পঞ্চমে তিনি বলেছেন, সভা-সমাবেশের ওপর থেকে বিধি-নিষেধ প্রত্যাহর করে নিতে হবে এবং শেষ দফায় বলেছেন, সকলের অংশগ্রহণে দ্রুত সংলাপের মাধ্যমে নির্বাচনের ব্যবস্থা করতে হবে। গতকাল শুক্রবার বিকেল ৪টা ৪৫ মিনিটে বিএনপি চেয়ারপারসনের গুলশানের রাজনৈতিক কার্যালয়ে সাংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে তিনি এসব দাবি জানান। গুলশান কার্যালয়ে অবরুদ্ধের পরে এ প্রথম তিনি জাতির সামনে বক্তব্য রাখেন।

গত ৩ জানুয়ারি থেকে তিনি গুলশান কার্যালয়ে অবরুদ্ধ আছেন। ৫ জানুয়ারি পল্টনের জনসভায় যোগ দেয়ার জন্য কার্যালয়ের বাইরে আসার চেষ্টা করলেও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তাকে বের হতে দেয়নি।