দেশ অচল করতে টার্গেট গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা

স্টাফ রিপোর্টার: বিদ্যুত বিতরণ ও উৎপাদন কেন্দ্র, গ্যাস ফিল্ড, টেলিফোন এক্সচেঞ্জসহ সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় বড় ধরনের হামলার পরিকল্পনা করেছে সরকারবিরোধী দুর্বৃত্তরা। সারাদেশ অচল করতেই এ পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। এরই অংশ হিসেবে নানা তৎপরতাও শুরু করেছে তারা। সম্প্রতি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে এসব তথ্য জানিয়েছে সরকারের একটি গোয়েন্দা সংস্থা।

গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদনের সুপারিশ অনুযায়ী, গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার এবং সেখানে কর্মরত সরকারবিরোধী কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নজরদারির আওতায় আনতে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দিয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় হামলার পরিকল্পনা সংক্রান্ত গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদন পাওয়ার কথা স্বীকার করে স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, বিষয়টি জেনে আমরা সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও বিভাগকে সতর্ক করে চিঠি দিয়েছি। প্রতিটি স্থাপনার সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা-কর্মচারীদেরও সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে। যাতে দুর্বৃত্তরা সরকারি স্থাপনায় কোনো ধরনের নাশকতা চালাতে না পারে। পাশাপাশি সরকারবিরোধী মনোভাবাপন্ন ব্যক্তিরা যাতে কোনো ধরনের অন্তর্ঘাতমূলক কার্মকাণ্ড করতে না পারে সেজন্যও নজরদারি বাড়াতে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদনে বলা হয়, সরকারবিরোধীদের মূল লক্ষ্য হচ্ছে বিদ্যুত খাত। কারণ বর্তমান সরকার ক্ষমতায় এসে বিদ্যুত খাতকে অগ্রাধিকার দিয়ে ব্যাপক উন্নয়ন করেছে। বর্তমানে দেশে ৭০টি বিদ্যুত উৎপাদন কেন্দ্রের ১১৭৩টি ইউনিট রয়েছে। উৎপাদন কেন্দ্রগুলোর মধ্যে ঢাকায় ২০টি, চট্টগ্রামে নয়টি, খুলনায় ১১টি, রাজশাহীতে সাতটি, রংপুরে চারটি, কুমিল্লায় চারটি, বরিশালে তিনটি, ময়মনসিংহে দুটি ও সিলেটে একটি রয়েছে। এসব কেন্দ্রে হামলা চালিয়ে বিদ্যুত খাতের সরকারের সাফল্যকে ম্লান করে সমগ্র দেশকে অচল করার পাঁয়তারা করছে বলে মন্তব্য করা হয় প্রতিবেদনে।

এতে উল্লেখ করা হয়, বিদ্যুত খাতে চাকরিরত সরকারবিরোধী মনোভাবের কর্মকর্তা ও কর্মচারীর সংখ্যা বেশি। এ ধরনের নাশকতামূলক কর্মকাণ্ডে তারা প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে দুর্বৃত্তদের সহযোগিতা করছে বলে জানা গেছে।

দেশের বিভিন্ন স্থানের বিদ্যুত ইউনিটে ইতঃপূর্বে হামলার কথা উল্লেখ করে গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদনে বলা হয়, ৩১ জানুয়ারি বেলা ১টায় নোয়াখালীর সদর উপজেলার দত্তের হাট এলাকার ৩৩/১১ কেবি পিডিবির সাবস্টেশন প্রধান ফটকে তিনটি ককটেল বিস্ফোরণ ঘটানো হয়। একই দিন সন্ধ্যা ৭টায় যশোর সদরের পল্লী বিদ্যুত অফিসের সামনে ৬টি ককটেল নিক্ষেপ করা হয়। এছাড়া ৮ ফেব্রুয়ারি রাত ৯টায় গাজীপুর জেলার টঙ্গী চেরাগ আলী বাসস্ট্যান্ড সংলগ্ন পাউয়ার সাবস্টেশনের দেয়ালের কাছে একটি টাইমবোমা উদ্ধার করা হয়। সর্বশেষ ১২ ফেব্রুয়ারি রাত ১০টায় গাজীপুর জেলা শহরের দক্ষিণে ছায়াবিথী পল্লী বিদ্যুত জোনাল অফিসের অভিযোগ কেন্দ্রের বারান্দায় সন্ত্রাসীরা পেট্রোলবোমা নিক্ষেপ করে। এতে অফিসের বারান্দায় স্তূপাকারে রাখা নষ্ট মিটারগুলোতে আগুন ধরে যায়। এতে ১২ থেকে ১৫টি মিটার পুড়ে যায়।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদন পাওয়ার পর এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে ৮ মার্চ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও বিভাগে চিঠি পাঠানো হয়। ওই চিঠিতে গোয়েন্দা প্রতিবেদনের উদ্ধৃতি দিয়ে বলা হয়, সম্প্রতি সন্ত্রাসীরা দেশের বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় ভাঙচুর-অগ্নিসংযোগের মাধ্যমে সাধারণ জনগণের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি করেছে। এছাড়া দেশব্যাপি গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় বৃহৎ আকারে নাশকতার পরিকল্পনা নিয়ে অগ্রসর হচ্ছে দুর্বৃত্তরা।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের চিঠিতে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দিয়ে বলা হয়, সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের নিয়ন্ত্রণাধীন সংস্থায় চাকরিরত সরকারবিরোধী মনোভাবাপন্ন কর্মকর্তা-কর্মচারীদের চিহ্নিত করে তাদের ওপর সতর্ক দৃষ্টি রাখতে হবে। এছাড়া বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের কাছে পাঠানো স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের আরেক চিঠিতে দেশের সব সরকারি-বেসরকারি গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় নিরাপত্তা ব্যবস্থাপনা আরও জোরদার করতে বলা হয়। পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব নিরাপত্তা বাহিনীকে তৎপর হওয়ার জন্য স্ব-স্ব প্রতিষ্ঠানকে নির্দেশ দেয়ার কথা উল্লেখ করা হয়। আর সংশ্লিষ্ট স্থাপনায় অগ্নিনির্বাপণ সরঞ্জামাদি যাতে সচল থাকে, সে ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে।

Leave a comment