পান : বন্ধ দুয়ার খোলার সম্ভাবনা

স্টাফ রিপোর্টার: এক বছরের বেশি সময় ধরে ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত (ইইউ) দেশগুলোতে বন্ধ থাকা পানের রপ্তানি আগামী জুলাই থেকে আবার শুরু হতে যাচ্ছে। এমন আভাসই মিলেছে ইইউর এক চিঠিতে। বাংলাদেশ সরকার ও রপ্তানিকারকেরা পান থেকে ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া স্যালমোনেলা মুক্ত করার পদ্ধতি উদ্ভাবন এবং তা ইইউর জুতসই মনে হওয়ায় রপ্তানির এ বন্ধ দুয়ার খুলতে যাচ্ছে বলে আশাবাদী ব্রাসেলসে বাংলাদেশ দূতাবাসও।

ওই দূতাবাসের কমার্শিয়াল কাউন্সিলর তপন কান্তি ঘোষ গত ৯ ফেব্রুয়ারি সরকারের বিভিন্ন দপ্তরে পাঠানো এক চিঠিতে বলেছেন, বাংলাদেশের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ যদি মানসম্মত পান রপ্তানির নিশ্চয়তা দিতে পারে, তাহলে ২০১৫ সালের জুলাই থেকে বাংলাদেশের পান আমদানির নিষেধাজ্ঞার মেয়াদ না বাড়ানোর বিষয়টি গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করবে ইইউ।

তপন ঘোষের চিঠিটি পাঠানো হয় ইউরোপীয় কমিশনের (ইসি) স্বাস্থ্য ও ভোক্তা সুরক্ষা বিভাগের (ডিজি-স্যানটে) কর্মকর্তা স্টিফেন আন্দ্রের চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে, যা তপন ঘোষকে পাঠানো হয়। ওই চিঠিতে বলা হয়, বাংলাদেশ থেকে যুক্তরাজ্যে পরীক্ষামূলকভাবে পানের চালান পাঠানো যেতে পারে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, গত ৮ ফেব্রুয়ারি পান রপ্তানি নিয়ে ইউরোপীয় কমিশনের ডিজি-স্যানটে এবং খাদ্য ও প্রাণিবিষয়ক কার্যালয়ের (এফভিও) কর্মকর্তাদের সাথে কৃষি মন্ত্রণালয়ে একটি ভিডিও কনফারেন্স অনুষ্ঠিত হয়। কনফারেন্সে রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) ভাইস চেয়ারম্যান শুভাশীষ বসু, অতিরিক্ত কৃষিসচিব আনোয়ার ফারুক এবং বাংলাদেশ ফল সবজি এবং এ-সংক্রান্ত পণ্য রপ্তানিকারক সমিতির (বিএফভিএপিইএ) উপদেষ্টা মনজুরুল ইসলাম ইসি কর্তৃপক্ষকে বোঝাতে সক্ষম হন যে তারা পান থেকে স্যালমোনেলা ব্যাকটেরিয়া দূর করতে পেরেছেন। আবার চুক্তিভিত্তিক চাষ (কন্ট্রাক্ট ফার্মিং) ও ফাইটোসেনেটারি সনদের ভিত্তিতে মানসম্মত পান রপ্তানির নিশ্চয়তা দেওয়া হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতেই মনোভাবে পরিবর্তন এসেছে ইইউর।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বাংলাদেশে ইইউর কার্যালয়ের বাণিজ্য উপদেষ্টা জিল্লুল হাই রাজী বলেন, ওই ভিডিও কনফারেন্সে বাংলাদেশ স্যালমোনেলা ব্যাকটেরিয়া দূর, রাসায়নিক ব্যবহার না করা, চুক্তিভিত্তিক পান চাষ শুরুসহ বেশ কিছু প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। ফলে কনফারেন্সে ইউরোপীয় কমিশনের কর্মকর্তারা ইতিবাচক মনোভাব দেখান। তবে তারা প্রতিশ্রুত বিষয়গুলোর তথ্যাদিও চেয়েছেন। এসব পরীক্ষা-নিরীক্ষা করবেন বিশেষজ্ঞরা। তারপরই সিদ্ধান্ত আসবে। নিষেধাজ্ঞার মেয়াদ বাড়ানো হবে কি না, তা এখনই বলা যাচ্ছে না।

অবশ্য রপ্তানিকারক সমিতির উপদেষ্টা মনজুরুল ইসলাম বলেন, ভিডিও কনফারেন্সের পর ইইউর কাছ থেকে যে চিঠি পেয়েছি, তাতে আমরা আশাবাদী যে আগামী জুলাই থেকে আর রপ্তানি নিষেধাজ্ঞা থাকবে না। প্রাথমিকভাবে আমরা যুক্তরাজ্যে পরীক্ষামূলক চালান পাঠাব। সব ঠিকঠাক থাকলে ইউরোপের সব দেশেই পান রপ্তানি শুরু হবে।

প্রসঙ্গত, ইউরোপে রপ্তানি হওয়া পানের ৮০-৮৫ শতাংশই যায় যুক্তরাজ্যে। স্যালমোনেলা ব্যাকটেরিয়ার অস্তিত্ব পাওয়ায় ইইউর ৱ্যাপিড অ্যালার্ট সিস্টেম ফর ফুড অ্যান্ড ফিড (আরএএসএফএফ) গত বছরের ২৯ জুলাই বাংলাদেশ থেকে পান আমদানির ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। এর মেয়াদ শেষ হবে আগামী ৩০ জুন। এর আগে গত বছরের ১৩ ফেব্রুয়ারি প্রথম দফায় পান আমদানিতে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে ইইউ। মেয়াদ ছিলো সে বছরের ৩১ জুলাই পর্যন্ত। ওই নিষেধাজ্ঞার মেয়াদই পরে বাড়ানো হয়।