স্টাফ রিপোর্টার: প্রধানমন্ত্রী সংসদ নেতা শেখ হাসিনা বলেছেন, খালেদা জিয়া কোনো রাজনৈতিক দলের নেত্রী নন, এখন তিনি জঙ্গি নেত্রীতে পরিণত হয়েছেন। আইন তার নিজস্ব গতিতে চলবে। খালেদা জিয়ার গ্রেফতারি পরোয়ানা ও গুলশান কার্যালয় তল্লাশির জন্য আদালতের নির্দেশ গুলশান থানায় পৌঁছানো মাত্রই পুলিশ যথাযথ ব্যবস্থা নেবে। ধবার জাতীয় সংসদ ভবনে প্রশ্নোত্তর পর্বে এমএ আউয়ালের এক সম্পূরক প্রশ্নের জবাবে শেখ হাসিনা এসব কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রী এ প্রসঙ্গে আরও বলেন, খালেদা জিয়া কেন তার গুলশানের বাড়ি ছেড়ে তার কার্যালয়ে অবস্থান করছেন সেটাই রহস্য। তিনি গুলশান কার্যালয়ে বসে বাংলাদেশকে জঙ্গি রাষ্ট্রে পরিণত করতে চাচ্ছেন।
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী যথাযথ পদক্ষেপ না নিলে বহু আগেই জনগণ তাকে (খালেদা) গুলশান কার্যালয় থেকে বের করে দিত বলেও মন্তব্য করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, বিএনপি-জামায়াত নেত্রী যে দাবি-দাওয়া দিয়েছেন তা সবই তার নিজের এবং তার ছেলের জন্য। দেশের মানুষের কল্যাণের জন্য তার চিন্তাও নেই, দাবিও নেই। তাই জনগণ এখন তাকে একেবারেই সমর্থন করে না। জনগণ তার প্রতি ক্ষুব্ধ। মানুষ ঘৃণাভরে জ্বালাও-পোড়াও এবং পেট্রোল ঢেলে মানুষ হত্যা প্রত্যাখ্যান করেছে।
বিএনপির নেতাকর্মীরা খালেদা জিয়ার সঙ্গে নেই- এমন দাবি করে শেখ হাসিনা বলেন, খালেদা জিয়া আন্দোলনের নামে অফিসে বসে নাশকতামূলক কাজ করছেন। সারা বিশ্বের কাছে বাংলাদেশকে হেয়প্রতিপন্ন করছেন। দেশকে অকার্যকর রাষ্ট্রে পরিণত করার ষড়যন্ত্র করছেন। তিনি বলেন, বিএনপি-জামায়াত নেত্রী দেশের আইন মানেন না। কোর্ট থেকে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি হলে দেশের যে কোনো নাগরিকের দায়িত্ব হচ্ছে কোর্টে আÍসমর্পণ করা। আর দায়িত্বশীল নাগরিক অতি দ্রুততার সঙ্গে আদালতের আদেশ মান্য করবেন এটাই সারা বিশ্বে প্রতিষ্ঠিত। কিন্তু খালেদা জিয়া কোর্টের আদেশ অমান্য করে একটি খারাপ উদাহরণ সৃষ্টি করছেন।
শেখ হাসিনা বলেন, আমি দ্ব্যর্থহীন কণ্ঠে বলতে চাই, আইন তার নিজস্ব গতিতে চলবে, আর আইনকে সমুন্নত রাখা সরকারের দায়িত্ব। এ পর্যন্ত ৬৭ বার খালেদা জিয়ার মামলার শুনানির তারিখ থাকলেও তিনি ৭ বার আদালতে গেছেন। শেষ যেবার গেছেন, সেবার তার নেতাকর্মীরা লাঠিসোঁটা নিয়ে আদালতে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করেছেন। তাদের তাণ্ডবে সংসদ সদস্য ছবি বিশ্বাসও আহত হয়েছেন। আসলে লাঠিসোটা নিয়ে তিনি আদালতকেও ভয়ভীতি প্রদর্শন করতে চেয়েছেন।
সংসদ নেতা বলেন, গত ৫ জানুয়ারি থেকে ৬৪ দিন যাবৎ বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট হরতাল-অবরোধের নামে দেশে চরম নৈরাজ্যের সৃষ্টি করেছে। ক্ষমতার লিপ্সায় অন্ধ হয়ে তারা দরিদ্র খেটে খাওয়া মানুষ, দেশের নিরপরাধ সাধারণ নারী-পুরুষ এমনকি নিষ্পাপ শিশুদেরও আগুনে পুড়িয়ে হত্যা করছে। বিগত ৬৪ দিনে ১১৯ জন মানুষ মৃত্যুমুখে পতিত হয়েছে। তিনি বলেন, এ নৈরাজ্য দীর্ঘদিন চলতে দেয়া যায় না। দেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তৎপর আছে। প্রয়োজনে তারা আরও কঠোর হবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতার ফলে অগ্নিসংযোগ ও নাশকতার মাত্রা অনেক কমে এসেছে। বাস ও ছোট ছোট যানবাহনও স্বাভাবিকভাবে চলছে। তবে দূরবর্তী এলাকার বাস কিছুটা কম চলছে। বর্তমানে হরতাল-অবরোধের মধ্যেও ঢাকাবাসীকে প্রচণ্ড যানজটে পড়তে হচ্ছে।
শফিকুল ইসলাম শিমুলের সম্পূরক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা দেশের নতুন প্রজন্মকে তথ্য-প্রযুক্তি ও কারিগরি শিক্ষায় শিক্ষিত করছি। আর বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়া সাইকেল বোমা, পেট্রলবোমা বানিয়ে মানুষ মারার জঙ্গিবাদী শিক্ষা দিচ্ছেন। এসব করে উনি বিদেশেও বাংলাদেশের ভাবমূর্তি নষ্ট করছেন। তিনি বলেন, এই জঙ্গি ও সন্ত্রাসী নেত্রীর চেহারা শুধু দেশেই নয়, বিশ্ববাসীর সামনে উন্মোচিত হয়ে গেছে। উনি এতদিন বসেছিলেন কেউ এসে ক্ষমতার দুয়ার খুলে তাকে নিয়ে গিয়ে বসাবেন, কিন্তু কেউ আসেনি। যেসব বিদেশীদের দিকে উনি চেয়েছিলেন, তারাও এসব জঙ্গিবাদ-সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড বন্ধ করার দাবি জানাচ্ছেন। আরেক সম্পূরক প্রশ্নের জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, অবরোধের নামে যে নাশকতা চলছে তার জন্য কোনো নতুন আইনের দরকার নেই। আমাদের দেশে আইনের অভাব নেই। ট্রাইব্যুনালও আছে। এভাবে মানুষ পুড়িয়ে মারা আর মেনে নেয়া যায় না। অবশ্যই তাদের বিচারের মুখোমুখি করা হবে। শওকত চৌধুরীর প্রশ্নের জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, আপনারাই বিএনপি নেত্রীকে অনুরোধ করুন, বারবার হরতাল-অবরোধ ডেকে কী লাভ, একবারে ডাকলেই তো হয়। তবে দেশের জনগণ আর বিএনপি নেত্রীর হরতাল-অবরোধ মানছেন না। এখন তো আর আন্দোলন নেই, চোরাগোপ্তা হামলা ও বোমা হামলা করা হচ্ছে। এটাও যাতে করতে না পারে সেজন্য দেশবাসীকে এগিয়ে আসতে হবে। এখন জনগণ নাশকতাকারী-জঙ্গিদের ধরে গণধোলাই দিয়ে পুলিশে দিচ্ছে। বাংলাদেশের মাটিতে কোনো জঙ্গি-সন্ত্রাসীদের ঠাঁই হবে না। জঙ্গিবাদ-নাশকতা দমনে সরকারি অভিযান অব্যাহত থাকবে, আদালতের নির্দেশ মতো সরকার কাজ করে যাবে।
নূরজাহান বেগমের প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, জনগণের জানমাল রক্ষায় সরকার যা যা পদক্ষেপ গ্রহণ করা দরকার, তা সবই নেবে। বিএনপি নেত্রী আন্দোলনের নামে গণহত্যার মতো কাজ করেই যাচ্ছেন। দেশবাসীর কাছে অনুরোধ, প্রতিটি পাড়া-মহল্লায় কে কে এসব ঘৃণ্য কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত তাদের ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট থানায় জানান, সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
ক্রিকেট দলের জন্য দোয়া: প্রশ্নোত্তরের শুরুতেই প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের সব খেলোয়াড়, ম্যানেজার, কোচসহ সংশ্লিষ্টদের সব এমপির পক্ষ থেকে অভিনন্দন জানান। দেশবাসীর কাছে ক্রিকেট দলের জন্য দোয়া কামনা করে তিনি বলেন, আপনারা দোয়া করবেন, যাতে আমাদের রয়েল বেঙ্গল টাইগাররা সেমিফাইনালে যেতে পারে। সেদিন বেশি দূরে নয়, আমি আশাবাদী বাংলাদেশ একদিন ক্রিকেট বিশ্বকাপ জিতবে।
দারিদ্র্যমুক্ত শান্তিপূর্ণ অঞ্চল: এম আবদুল লতিফের প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার দক্ষিণ এশিয়াকে দারিদ্র্যমুক্ত ও শান্তিপূর্ণ অঞ্চল গড়তে বঙ্গবন্ধুর প্রণীত পররাষ্ট্রনীতির মূলমন্ত্র সকলের সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারোর প্রতি বৈরিতা নয় অনুসরণ করে দেশ পরিচালনা করে থাকে।
আমদানি-রফতানি দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে: মাহফুজুর রহমানের প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের ধারাবাহিক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে দেশের আমদানি ও রফতানির পরিমাণ দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে। বর্তমানে চট্টগ্রাম ও মংলা বন্দরের মাধ্যমে দেশের প্রায় ৯৫ ভাগ আন্তর্জাতিক বাণিজ্য সম্পন্ন হয়। তিনি বলেন, বৈদেশিক বাণিজ্যে বাংলাদেশের প্রতিযোগিতামূলক অবস্থানকে আরও সুসংহত করার জন্য বর্তমান সরকার পায়রা সমুদ্র বন্দর এবং সোনাদিয়া গভীর সমুদ্র বন্দর নামে দুটি সমুদ্র বন্দর নির্মাণের উদ্যোগ গ্রহণ করেছে।
আমার মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব আইন বানানো, প্রয়োগ নয়- আইনমন্ত্রী: আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রী অ্যাডভোকেট আনিসুল হক বলেছেন, একজন নেত্রীর (খালেদা জিয়া) গ্রেফতার নিয়ে প্রশ্ন হচ্ছে। গ্রেফতার বা আইনের প্রয়োগ আমার মন্ত্রণালয়ের কাজ নয়। আমার মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব আইন বানানো। আইন প্রয়োগ করার দায়িত্ব স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের। বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার গ্রেফতারি পরোয়ানা এবং গ্রেফতার ইস্যু নিয়ে সংসদে একেএম শামীম ওসমানের সম্পূরক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী এ কথা বলেন।
এর আগে একেএম শামীম ওসমান মন্ত্রীর কাছে জানতে চান, আইন সবার জন্য সমান। কিন্তু একজন নিরপরাধ মানুষকেও অনেক সময় কোমরে রশি বেঁধে টেনে নেয়া হয়। কিন্তু একজন নেত্রী, যার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি আছে, তারপরও কেন ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে না। তাই মন্ত্রীর কাছে জানতে চাই তার বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে কিনা? জবাবে আইনমন্ত্রী বলেন, একজন নেত্রীর কথা বলেছেন। কিন্তু প্রশ্নটি আমার মন্ত্রণালয়কে না করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কাছে করলে এর ভালো জবাব পাওয়া যেত। এছাড়া সংসদে একটু আগেই প্রধানমন্ত্রী বলেছেন- আইন নিজস্ব গতিতে চলবে। তাই আইন অনুযায়ী তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
প্রশিক্ষণ নিতে আগ্রহী নেপালের সেনাবাহিনী : নেপালের সেনাবাহিনী প্রধান বাংলাদেশের সামরিক ইনস্টিটিউটের আন্তর্জাতিক মানের প্রশিক্ষণ কোর্সের প্রশংসা করে বলেছেন, তার দেশ ভবিষ্যতে তাদের সেনাসদস্যদের জন্য এই প্রশিক্ষণ কর্মসূচি অব্যাহত রাখতে আগ্রহী। সফররত নেপালের সেনাপ্রধান জেনারেল গৌরব শামশের জং বাহাদুর রানা বুধবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে তার তেজগাঁও কার্যালয়ে সাক্ষাৎকালে এ কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব একেএম শামীম চৌধুরী বলেন, সফররত সেনাপ্রধান প্রধানমন্ত্রীকে অবহিত করেন, আগামী বছর বাংলাদেশের সঙ্গে তার দেশের যৌথভাবে এভারেস্ট অভিযানের পরিকল্পনা রয়েছে।
সবার জন্য ন্যূনতম স্বাস্থ্যসেবা : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, তার সরকার সবার জন্য ন্যূনতম স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। এ লক্ষ্য অর্জনে কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে গ্রাম-পর্যায় পর্যন্ত স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে দেয়া হচ্ছে। বিশ্ব কিডনি দিবস-২০১৫ উপলক্ষে দেয়া এক বাণীতে তিনি এ কথা বলেন। আজ বিশ্ব কিডনি দিবস। বাংলাদেশেও বিভিন্ন কর্মসূচির মধ্য দিয়ে দিবসটি পালিত হচ্ছে।