সীতাকুণ্ডে পাহাড়ে শিবিরের আস্তানা : বিপুল অস্ত্র উদ্ধার

রাজধানীতে বোমা ও বিস্ফোরকসহ তিন ছাত্রদল নেতা গ্রেফতার

 

স্টাফ রিপোর্টার: চট্টগ্রামে তিনটি জঙ্গি আস্তানার পর এবার দুর্গম পাহাড়ে ছাত্রশিবিরের একটি গোপন আস্তানার সন্ধান পাওয়া গেছে। এর অবস্থান জেলার সীতাকুণ্ড পৌর সদরের এয়াকুব নগর গ্রাম থেকে প্রায় ৪ কিলোমিটার পূর্ব দিকে গহিন পাহাড়ি জঙ্গলে। সেখানে পাহাড়ের ওপর কয়েকটি তাঁবুতে শিবিরের গোপন আস্তানা রয়েছে বলে পুলিশকে তথ্য দেয় বিএনপি ও শিবিরের ৩ কর্মী। এসব কর্মীকে শনিবার সীতাকুণ্ডের বিভিন্ন স্থান থেকে আটক করা হয়। তাদের দেয়া তথ্য অনুযায়ী রোববার ভোরে অভিযান চালিয়ে অস্ত্রসহ বিপুল পরিমাণ ককটেল-পেট্রোলবোমা উদ্ধার করে পুলিশ।

এদিকে রাজধানীতে বিস্ফোরক ভর্তি বাইসাইকেল ও বিপুল পরিমাণ বিস্ফোরকসহ তিন সন্ত্রাসীকে তিন ছাত্রদল নেতাকে গ্রেফতার করেছে ৱ্যাব। ৱ্যাবের মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক মুফতি মাহমুদ খান বলেন, একদল নাশকতাকারী অভিনব পন্থায় খুলনা থেকে ঢাকায় বিপুল পরিমাণ বিস্ফোরক সামগ্রী সংগ্রহ করছে। এসব বিস্ফোরক দ্রব্য দিয়ে বড় ধরনের নাশকতা চালিয়ে রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনার ক্ষতিসাধন করাই ছিল মূল উদ্দেশ্য। এমন গোয়েন্দা তথ্যের পর ৱ্যাব-২ শনিবার রাতে কাকরাইলের কর্ণফুলী গার্ডেন সিটি এলাকা থেকে রাকীবুল ইসলাম মণ্ডল (২৫) নামে একজনকে গ্রেফতার করে। পরবর্তীতে তার দেয়া তথ্যে রাতে সূত্রাপুরের কলতা বাজার এলাকার একটি বাসা থেকে আমিনুল ইসলাম রানা ও রিয়াজুল ইসলামকে বিস্ফোরক ভর্তি বাইসাইকেল, ৫৮টি ককটেল, ১টি পাইপ বোমা, ৪৮টি পেট্রোলবোমা, ৫শ গ্রাম সালফার পাউডারসহ গ্রেফতার করতে সক্ষম হয় ৱ্যাব।

মুফতি মাহমুদ খান বলেন, গ্রেফতারকৃতদেরকে তাত্ক্ষণিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা গেছে, চলমান অবরোধ এবং হরতালে গ্রেফতারকৃতরা কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের সাংগঠনিক সম্পাদক (সাবেক কমিটি) আনিসুর রহমান খোকনের নির্দেশে রাজধানীর গুলশান, বাড্ডা, মতিঝিল, কাওরান বাজার এবং ধানমন্ডি এলাকায় বিভিন্ন সময় ককটেল বিস্ফোরণ, অগ্নিসংযোগ, গাড়ি ভাঙচুরের মাধ্যমে নাশকতা চালিয়ে আসছে। খোকনের নির্দেশে রানা এবং রিয়াজ টাকার বিনিময়ে বিভিন্ন সময়ে তিতুমীর কলেজ শাখার ছাত্রদলের নেতাকর্মীদের খোকনের নিকট প্রেরণ করতো। খোকন তার গাড়িতে হাতবোমা ও বিস্ফোরক বহন করে ভাড়াকৃত ছাত্রদল ক্যাডারদের নিকট সরবরাহ করতো এবং খোকনের নির্দেশিত স্থানগুলোতে তারা হাতবোমার বিস্ফোরণ ঘটাতো।

সীতাকুণ্ডের পাহাড়ে শিবিরের আস্তানা থেকে উদ্ধারকৃত অস্ত্রশস্ত্রের মধ্যে রয়েছে ৭০টি পেট্রোলবোমা, ৫০টি ককটেল, ৪টি দেশীয় এলজি, ৩টি জাহাজের সিগন্যাল লাইট, ২৪ রাউন্ড কার্তুজ, ১২টি কিরিচ ও রান্নাবান্নার সরঞ্জাম। অভিযান শেষে আস্তানা পুড়িয়ে ফেলা হয়। এছাড়া গতকাল ভোর থেকে সকাল ৭টা পর্যন্ত পুলিশ সীতাকুণ্ডের বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে জামায়াত-শিবির সন্দেহে ১২ জনকে আটক করে।

গত মাসে মাত্র ৯ দিনের ব্যবধানে চট্টগ্রাম জেলা ও মহানগরীর বিভিন্ন স্থানে তিনটি জঙ্গি আস্তানার সন্ধান পায় ৱ্যাব। এসব আস্তানা থেকে বিপুল বিস্ফোরক, গ্রেনেড, গোলাবারুদ ও সেনাবাহিনীর প্রশিক্ষণ সরঞ্জাম উদ্ধার করা হয়। গত ১৯ ফেব্রুয়ারি জেলার হাটহাজারি উপজেলার একটি মাদ্রাসা থেকে জঙ্গি সন্দেহে আটক ১২ জনের স্বীকারোক্তি অনুযায়ী গত ২১ ফেব্রুয়ারি জেলার বাঁশখালীর লটমনি পাহাড়ে জঙ্গি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে অভিযান চালায় ৱ্যাব। সেখান থেকে বিপুল পরিমাণ অস্ত্র, গোলাবারুদ ও প্রশিক্ষণ সামগ্রীসহ জঙ্গি সন্দেহে ৫ জনকে আটক করা হয়। এক সপ্তাহ পর নগরীর হালিশহরের গোল্ডেন কমপ্লেক্স আবাসিক এলাকার একটি বাসায় অভিযান পরিচালনা করে বিপুল বিস্ফোরক, দেশীয় প্রযুক্তিতে তৈরি গ্রেনেডসহ ৪ জঙ্গিকে গ্রেফতার করা হয়। এসব জঙ্গির সাথে সীতাকুণ্ডে আটক বিএনপি-শিবির কর্মীদের কোনো যোগসূত্র রয়েছে কি-না সে ব্যাপারে পুলিশ নিশ্চিত করে কিছু বলতে পারেনি।

চট্টগ্রামের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শহীদুল ইসলাম জানান, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের সীতাকুণ্ড এলাকায় বিভিন্ন সময় নাশকতা ঘটায় দুর্বৃত্তরা। এ কাজে পাহাড়ি এলাকায় অস্ত্রগুলো মজুদ রাখা হতো। তিনি সাংবাদিকদের জানান, শনিবার ২ জন শিবির কর্মী ও ১ জন বিএনপি কর্মীকে সন্দেহজনকভাবে আটক করার পর তাদের স্বীকারোক্তি মতে আমরা পাহাড় থেকে অস্ত্রশস্ত্রগুলো উদ্ধার করি। তিনি তদন্তের স্বার্থে আটককৃতদের নাম জানাতে অপারগতা প্রকাশ করেন।

উল্লেখ্য, সীতাকুণ্ডের এয়াকুব নগর শিবির অধ্যুষিত গ্রাম হিসেবে পরিচিত। ২০১৩ সালে সরকার বিরোধী আন্দোলনের সময় সীতাকুণ্ড উপজেলায় প্রায় দু শতাধিক গাড়ি পুড়িয়ে নাশকতা সৃষ্টি করে জনজীবন অতিষ্ঠ করে তুলেছিলো নাশকতাকারীরা।

এদিকে পুলিশের পৃথক অভিযানে চট্টগ্রাম নগরীর হালিশহর থানার বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার একটি বাসা থেকে মহানগর জামায়াতের ভারপ্রাপ্ত আমির অধ্যাপক আহসানউল্লাহকে গ্রেফতার করেছে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ। একই অভিযানে হালিশহর থানা শিবিরের স্কুল বিষয়ক সম্পাদক শফিকুল মাওলা শোভনকে গ্রেফতার করা হয়। গতকাল রবিবার ভোরে এ অভিযান পরিচালনা করা হয়। সিএমপির অতিরিক্ত উপকমিশনার (গোয়েন্দা) তানভীর আরাফাত জানান, অধ্যাপক আহসানউল্লাহর বিরুদ্ধে নগরীর বিভিন্ন থানায় ভাংচুর ও নাশকতার মামলা রয়েছে। বাকলিয়া থানার একটি মামলায় তার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা রয়েছে। অন্যদিকে শিবির নেতা শোভন হালিশহর থানায় দায়ের হওয়া নাশকতার একাধিক মামলার এজাহারভুক্ত আসামি।

অস্ত্র উদ্ধারের ঘটনায় দু মামলা: সীতাকুণ্ডে শিবিরের আস্তানা থেকে অস্ত্র উদ্ধারের ঘটনায় বিশেষ ক্ষমতা আইন ও অস্ত্র আইনে পৃথক দুটি মামলা হয়েছে। উভয় মামলায় ২০ জন করে ৪০ জনকে আসামি করা হয়েছে। আসামিদের মধ্যে স্থানীয় বিএনপি-জামায়াতের নেতাকর্মী রয়েছেন। চট্টগ্রামের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (উত্তর) মো. মোস্তাফিজুর রহমান এসব তথ্য জানান। অন্যদিকে নগরীর হালিশহর থেকে গ্রেফতারকৃত মহানগর জামায়াতের ভারপ্রাপ্ত আমীর অধ্যাপক আহসানউল্লাহ ও হালিশহর থানা ছাত্র-শিবির স্কুল শাখার সম্পাদক শফিকুল মাওলা শোভনকে কোতোয়ালী থানায় দায়ের হওয়া বিস্ফোরক আইনের একটি মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ১০ দিনের  রিমান্ড চেয়ে আদালতে আবেদন করেছে পুলিশ। সিএমপির অতিরিক্ত উপকমিশনার (প্রসিকিউশন) এ তথ্য জানান।

Leave a comment