নারীর ক্ষমতায়নে যথার্থ উদ্যোগ নিন

বিশ্বে যা- কিছু মহান সৃষ্টি চির-কল্যাণকর, অর্ধেক তার করিয়াছে নারী, অর্ধেক তার নর।’ আমাদের জাতীয় কবির রচনায় নারীর এ বীরত্বগাথায় কোনো বাহুল্য নেই। নারীর ভূমিকা সমাজ-সভ্যতার অগ্রযাত্রার ইতিহাসে সমান্তরাল। গতকাল চুয়াডাঙ্গা-মেহেরপুর ও ঝিনাইদহসহ সারাদেশে আন্তর্জাতিক নারী দিবস পালিত হয়েছে। এ বছরে নারী দিবসে জাতিসংঘের স্লোগান ‘নারীর ক্ষমতায়ন, মানবতার উন্নয়ন’। এ প্রতিপাদ্য বিষয়ই ইঙ্গিত দেয় যে ক্ষমতায়নের বিচারে পুরুষের তুলনায় নারী আজও পিছিয়ে আছে এবং মানবতার অগ্রযাত্রার স্বার্থেই এ বৈষম্যের বিলুপ্তি কাম্য। তুলনামূলক বিচারে বাংলাদেশে নারীর ক্ষমতায়ন উল্লেখযোগ্য মাত্রায় বেড়েছে। নারীর নিরাপত্তায় আইনি সুরক্ষা মজবুত হয়েছে। কিন্তু ধর্ষণ, যৌতুকের দাবিতে নির্যাতন, এসিড নিক্ষেপসহ নানা রকমের সহিংসতা দমনে রাষ্ট্র ও সমাজের ব্যর্থতা ঘোচেনি, বরং ক্ষেত্রবিশেষে তা প্রকট হয়েছে। পথে-ঘাটে ও কর্মক্ষেত্রে তো বটেই; ঘরের ভেতরেও নারীর ব্যক্তিগত নিরাপত্তাহীনতা দূর হচ্ছে না।

আমরা কখনো তলিয়ে দেখি না যে সামাজিক সূচকে বাংলাদেশের বিস্ময়কর সাফল্যের পেছনে নারীর বিরাট ভূমিকা রয়েছে। সামাজিক-সাংস্কৃতিক-মনস্তাত্ত্বিক বৈষম্য ও নিরাপত্তাহীনতা সত্ত্বেও অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে নারীর অংশগ্রহণ বাড়ছে। শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও পুষ্টির সূচকে নারীর অবস্থার উন্নতি হচ্ছে। লিঙ্গসমতা সূচকটিও পার্শ্ববর্তী অনেক দেশের তুলনায় এখন উন্নত। কিন্তু অধিকারের সমতা আজও রয়ে গেছে অধরা। চাকরির ক্ষেত্রে নারী সমান সুযোগ থেকে বঞ্চিত; নিম্ন আয়ের শ্রমজীবী নারী পুরুষের চেয়ে কম মজুরি পান। স্থানীয় সরকার পর্যায়ে নারীর ক্ষমতায়নের চেষ্টা খুব ফলপ্রসূ হচ্ছে না পুরুষ সহকর্মীদের অন্যায্য অহংবোধ ও অসহযোগিতার কারণে। জাতীয় রাজনীতিতেও নারীর সক্রিয় অংশগ্রহণ বাড়েনি, নীতি নির্ধারণ-প্রক্রিয়ায় নারীর কণ্ঠ আজও অল্পশ্রুত। এরপরও আমরা আশাবাদী।

শিক্ষাক্ষেত্রে নারীরা পুরুষের সমান, কখনো বা তারও বেশি মেধার পরিচয় দিচ্ছেন। অধিকার প্রশ্নে নারীরা আজ অনেক বেশি সোচ্চার, তাদের অনেকেই মুখ বুজে অন্যায় মেনে না নিয়ে প্রতিবাদ করছেন। নারীরা এগিয়ে আসছেন, ব্যবধান ঘুচছে এ খবর অবশ্যই আমাদের আশা জাগায়। তবে এ অগ্রযাত্রাকে আরো বেগবান করতে হবে। আমাদের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী, সংসদের স্পিকার ও বিরোধীদলীয় নেতা নারী- এ তথ্যটিও বিশ্বে আমাদের দেশকে নিঃসন্দেহে নতুন মাত্রা দিয়েছে। তবে ক্ষমতায়ন হতে হবে সর্বত্র এবং এ ক্ষেত্রে শিক্ষাই হতে পারে সবচেয়ে বড় হাতিয়ার। কারণ শিক্ষায় ভর করে একজন নারী নিজের পায়ে দাঁড়ায়। পারিবারিক, সামাজিক বা রাষ্ট্রীয় বৈষম্য ও পুরুষতান্ত্রিক কুসংস্কারকে অস্বীকার করারও শক্তি জোগায় শিক্ষা। নারী-পুরুষের মিলিত প্রয়াসে আসবে সর্বজনীন প্রগতি- সে প্রতীক্ষাই করছি।