কামারুজ্জামানের রিভিউ আবেদনের শুনানি আজ

স্টাফ রিপোর্টার: একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে মৃত্যুদণ্ডাদেশপ্রাপ্ত জামায়াত নেতা মোহাম্মদ কামারুজ্জামানের আপিলের রায় পুনর্বিবেচনার (রিভিউ) আবেদনটি আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে আজ সোমবার শুনানি হবে। আপিল বিভাগের চেম্বার বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী গতকাল রোববার এ দিন ধার্য করেন। সে ক্ষেত্রে শুনানির জন্য আপিল বিভাগের দৈনন্দিন কার্যতালিকায় এটি থাকবে।

প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহার নেতৃত্বে চার বিচারপতির সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চে শুনানি হবে। বেঞ্চের অন্য সদস্যরা হলেন- বিচারপতি মো. আবদুল ওয়াহহাব মিঞা, বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী ও বিচারপতি এএইচএম শামসুদ্দিন চৌধুরী। বৃহস্পতিবার কামারুজ্জামানের আইনজীবী সর্বোচ্চ আদালতের রায় রিভিউ আবেদনটি সুপ্রিম কোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় দাখিল করেন। এদিকে, রিভিউ আবেদন শুনানির জন্য আসামির পক্ষ থেকে চার সপ্তাহ সময় চাওয়া হয়েছে। মোট ৭০৫ পৃষ্ঠার রিভিউ আবেদনে ৪৪টি যুক্তি তুলে ধরে আসামি কামারুজ্জামানের ফাঁসির আদেশ বাতিল ও খালাস চেয়েছে আসামিপক্ষ।

আদেশের পর অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম সাংবাদিকদের বলেন, জামায়াত নেতা মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত কামারুজ্জামানের পক্ষে রিভিউ পিটিশন দায়ের করা হয়েছে। তা সোমবার আপিল বিভাগের কার্যতালিকায় আসবে। সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আপিল বিভাগে মৃত্যুদ হওয়ার পর রিভিউয়ে তা কমেছে বলে বাংলাদেশে কোনো ঘটনা আমার জানা নেই। তিনি আরও বলেন, এর আগে কাদের মোল্লার রিভিউর রায়ে বলে দেওয়া হয়েছে যে, এটি রিভিউ, আপিল নয়। এখানে বিস্তারিত শুনানির কোনো অবকাশ নেই। আপিল বিভাগের রায়ে যদি কোনো ভুল থাকে, শুধু সে বিষয়ে শুনানি হতে পারে। সে ক্ষেত্রে স্বল্প সময়েই শুনানি শেষ হবে। অ্যাটর্নি জেনারেল জানান, রিভিউ খারিজ হয়ে গেলে আসামি সাত দিনের মধ্যে রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষা চাইতে পারেন। ২৪ ঘণ্টা আগেও আসামি প্রাণভিক্ষা চাইতে পারেন। রাষ্ট্রপতি যে সিদ্ধান্ত দেবেন তাই কার্যকর হবে। তিনি বলেন, রিভিউ আবেদনে আপিল বিভাগের সিদ্ধান্ত বহাল থাকলে রায় কার্যকরের ক্ষেত্রে আর কোনো বাধা থাকবে না। যুদ্ধাপরাধ মামলায় দণ্ড কার্যকরের ক্ষেত্রে কারাবিধি প্রযোজ্য হবে না।

প্রেক্ষাপট: একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের সময় হত্যা, গণহত্যা লুটপাট, অগি্নসংযোগ ও নির্যাতনের দায়ে কুখ্যাত বদর নেতা জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মোহাম্মদ কামারুজ্জামানকে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল ২০১৩ সালের ৯ মে সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দেন। এরপর বেকসুর খালাস চেয়ে আপিল করেন আসামিপক্ষ। পাশাপাশি রাষ্ট্রপক্ষও আপিল করে। ২০১৪ সালের ৩ নভেম্বর চূড়ান্ত রায়ে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ সংখ্যাগরিষ্ঠতার ভিত্তিতে ট্রাইব্যুনালের সাজা (মৃত্যুদণ্ড) বহাল রেখে আপিল নিষ্পত্তি করেন। সোহাগপুরে গণহত্যার দায়ে কামারুজ্জামানকে দোষী সাব্যস্ত করে চূড়ান্ত রায়ে মৃত্যুদণ্ডাদেশ বহাল রাখা হয়। গত ১৮ ফেব্রুয়ারি ৫৭৭ পৃষ্ঠার পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ করা হয়। ওই রায়ের অনুলিপি সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রারের কার্যালয় থেকে বিচারিক আদালত আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে পেঁৗছার পরদিন মৃত্যু পরোয়ানা জারি করা হয়। ওইদিন দুপুরে তা পেঁৗছানো হয় কারা কর্তৃপক্ষের কাছে। আসামি কামারুজ্জামানকে তা পড়ে শোনানো হয়। এদিকে, ময়মনসিংহ অঞ্চলের বদর নেতা কামারুজ্জামানের সাজা স্বাধীনতার মাসেই কার্যকরের প্রত্যাশা করেছেন মুক্তিযোদ্ধা ও শহীদ পরিবারের সদস্যরা।

Leave a comment