অবরোধ-হরতালের দু মাস : আর কতোদিন এ অনিশ্চয়তা?

 

অনিশ্চিত যাত্রা। গন্তব্য জানা নেই কারো। আগুনে পুড়ে মারা যাচ্ছে নিরীহ মানুষ। ব্যবসা-বাণিজ্যে দেখা দিয়েছে চরম মন্দা। মানুষের মনে স্থায়ী হতে বসেছে আতঙ্ক। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের একাডেমিক সময় নির্ঘণ্ট লণ্ডভণ্ড। এসএসসি পরীক্ষা নেয়া হচ্ছে ছুটির দিনে। এইচএসসি পরীক্ষা নিয়েও দেখা দিয়েছে অনিশ্চয়তা। হরতাল-অবরোধের মতো রাজনৈতিক কর্মসূচিতে সর্বক্ষেত্রেই বেহাল দশা।

পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদনের তথ্যমতে, গত দু মাসে আর্থিক খাতে ক্ষতি এক লাখ ৬২ হাজার কোটি টাকা। ৩০ জেলায় ভাঙচুর বা আগুন দেয়া হয়েছে এক হাজার ৯শ গাড়িতে। এক হাজার ৪শটি নাশকতার মামলায় গ্রেফতার হয়েছে ১৫ হাজার জন। রেলে ৮০ স্থানে নাশকতা হয়েছে। নৌপথও বাদ যায়নি নাশকতা থেকে। রাজধানীতে জীবনযাত্রা একেবারেই স্বাভাবিক। ঢাকার বাইরেও ফিরে এসেছে স্বাভাবিকতা। কিন্তু তার পরও অবরোধ-হরতালের মতো রাজনৈতিক কর্মসূচি বহাল রয়েছে। আগুনে পুড়ে মানুষের মৃত্যু, হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে দগ্ধ মানুষের আহাজারি, নিহতদের স্বজনদের অসহায়ত্ব, সম্পদহানি- কোনো কিছুই রাজনীতিকে অনড় অবস্থা থেকে বিচ্যুত করতে পারেনি। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত কর্মসূচি চালিয়ে যেতে দৃঢ়সংকল্প এক পক্ষের। সরকারও বিন্দুমাত্র ছাড় দিতে নারাজ। মাঝখানে অবরোধ-হরতালের মতো রাজনৈতিক কর্মসূচির আভিধানিক অর্থই যেন পাল্টে গেলো। রাজনীতিও যেন মানুষের কাছে ভিন্ন অর্থ বহন করছে এখন। কর্মসূচি পালনে বাধ্য করতে গিয়ে সন্ত্রাস-নাশকতার আশ্রয় নেয়ার এমন নজির আগে কখনো দেখা যায়নি। চলমান সন্ত্রাস-নাশকতায় কেবল দেশের মানুষ যে আতঙ্কিত তা নয়, অনেক বন্ধু রাষ্ট্রেরও শঙ্কা বাংলাদেশের ভবিষ্যত নিয়ে। জাতিসংঘের মহাসচিবও বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতি উত্তরণে রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। বিদেশি রাষ্ট্রদূতরা বৈঠক করেছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপারসনের সাথে। তারা এ অবস্থা থেকে উত্তরণের তাগিদ দিয়েছেন। কিন্তু এখন পর্যন্ত কোনো ফল লাভ হয়নি।

অবরোধ-হরতাল বা রাজনৈতিক কর্মসূচির নামে দেশে চলছে সন্ত্রাস-নাশকতা। এতে গণতন্ত্রের ধারা যে ব্যাহত হচ্ছে তা বলার অপেক্ষা রাখে না। এক দশক ধরে বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৬ শতাংশের ওপরে। মাথাপিছু জাতীয় আয় এক হাজার ১৯০ মার্কিন ডলার। ৩০ বিলিয়ন ডলারের বেশি হয়েছে রফতানি আয়। বৈদেশিক মুদ্রার মজুদ ছাড়িয়ে গেছে ২২ বিলিয়ন ডলার। কমেছে দারিদ্র্যের হার। সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনেও অনেক এগিয়েছে বাংলাদেশ। এ অবস্থায় রাজনৈতিক কর্মসূচির নামে চলতে থাকা অবরোধ-হরতালের আড়ালে চলমান সন্ত্রাস-নাশকতা দেশের অগ্রযাত্রাকে যেমন পিছিয়ে দিচ্ছে, তেমনি এ সন্ত্রাস-নাশকতার আড়ালে দেখা দিচ্ছে উগ্রবাদী জঙ্গি উত্থানের আশঙ্কা। এ আশঙ্কা সত্যি হলে তার পরিণতি হবে ভয়াবহ। প্রগতিশীল মানবিক বাংলাদেশকে তখন আর খুঁজে পাওয়া যাবে কি?

সরকার ও আন্দোলনরত রাজনৈতিক দল বা জোটকে দায়িত্বশীলতার পরিচয় দিতে হবে। জনগণের কল্যাণের দিকে তাকিয়ে আন্দোলনরত জোটকে এ প্রাণঘাতী কর্মসূচি ত্যাগ করতে হবে। এ অচলাবস্থা থেকে বিরোধীপক্ষ বেরিয়ে আসতে চাইলে সরকারের উচিত সেখানে সহযোগীর ভূমিকা পালন করা। তাদের এ কর্মসূচি ছেড়ে বেরিয়ে আসার পথ করে দিতে হবে সরকারকেই। উভয়পক্ষের শুভবুদ্ধির উদয় হোক সময় থাকতে।