চুয়াডাঙ্গা চেম্বারের নির্বাচন নিয়ে ভোটারদের মধ্যে বিভ্রান্তি

দুটি প্যানেলের নেতাদের পরস্পর বিরোধী বক্তব্য

 

স্টাফ রিপোর্টার: চুয়াডাঙ্গা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির দ্বিবার্ষিক নির্বাচন নিয়ে সাধারণ ভোটারদের মধ্যে বিভ্রান্তি দেখা দিয়েছে। নির্বাচনে অংশ নেয়া গণতান্ত্রিক প্যানেলের পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়েছে প্রতিপক্ষ প্রগতিশীল পরিষদের পক্ষ থেকে নির্বাচনে অংশ নেয়া ১২ জন সদস্য নির্বাচনে অযোগ্য হিসেবে বিবেচিত। এ সংক্রান্ত তাদের ব্যাখ্য হলো বাণিজ্য সংগঠন বিধিমালা ১৯৯৪ এবং বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ২০০২ সালের ৩১ জুলাই জারিকৃত আদেশে ওই ১২ জন আসন্ন নির্বাচনের অযোগ্য হিসেবে বিবেচিত হচ্ছেন। অন্যদিকে প্রগতিশীল পরিষদের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে আগামী নির্বাচন বানচাল করতে প্রতিপক্ষরা ঘোলা পানিতে মাছ শিকারের চেষ্টা করছেন। এজন্য সাধারণ ভোটারদের সজাগ থেকে সকল ষড়যন্ত্র মোকাবেলারও আহ্বান জানানো হয়েছে। তাদের দাবি রাষ্ট্রপতির আদেশক্রমে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের উপসচিব মোশাররফ হোসেন ভুঁইয়া স্বাক্ষরিত ২০০২ সালের ২৮ ডিসেম্বরের সর্বশেষ প্রজ্ঞাপনের আলোকে নির্বাচনে অংশ নিতে কোনো বাধা নেয়।

জানা গেছে, চুয়াডাঙ্গা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির দ্বিবার্ষিক নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে আগামী ২০ মার্চ। ইতোমধ্যে নির্বাচনে অংশ নিয়ে সাধারণ ও সহযোগী পদের জন্য ৩৮ জন প্রার্থী দুটি প্যানেলে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় অংশগ্রহণ করেছে। এদের একটি প্যানেলের নেতৃত্বে আছেন- বর্তমান সভাপতি ইয়াকুব হোসেন মালিক ও সালাউদ্দিন মো. মর্তূজা। যার নাম দেয়া হয়েছে প্রগতিশীল পরিষদ। অন্যটির নেতৃত্বে আছেন- লাভলু-টোকন ও লন্টুর নেতৃত্বাধীন গণতান্ত্রিক প্যানেল। দুটি প্যানেলের সদস্যরাই গত কয়েকদিন ধরে যখন জোর নির্বাচনী প্রচারণায় নেমে পড়েছেন ঠিক তখনই নির্বাচন নিয়ে দেখা দিয়েছে বিভ্রান্তি।

গতকাল বৃহস্পতিবারের একটি স্থানীয় পত্রিকায় বের হওয়া রিপোর্টে বলা হয়েছে, আগামী ২০ মার্চ অনুষ্ঠিতব্য চুয়াডাঙ্গা চেম্বারের দ্বিবার্ষিক নির্বাচনে অংশ নেয়া প্রগতিশীল পরিষদের নেতা ইয়াকুব হোসেন মালিক, সালাউদ্দিন মো. মর্তুজা, সদস্য একেএম সালাউদ্দীন মিঠু, শাহারিন হক মালিক, মঞ্জুরুল আলম মালিক লার্জ, আরিফ হোসেন জোয়ার্দ্দার সোনা, বাবু নীল রতন সাহা, সেলিম আহম্মেদ, তাজুল ইসলাম, সামসুদ্দোহা মল্লিক হাসু, জাহাঙ্গীর হোসেন জোয়ার্দ্দার বাদশা ও নাসির আহাদ জোয়ার্দ্দার নির্বাচনে অযোগ্য হিসেবে বিবেচিত হচ্ছেন। সেক্ষেত্রে ব্যাখ্যা দেয়া হয়েছে, বাণিজ্য সংগঠন বিধিমালা ১৯৯৪ এবং বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ২০০২ সালের ৩১ জুলাই জারিকৃত এক আদেশবলে ওপরে উল্লেখিত ১২ জন আসন্ন নির্বাচনের অযোগ্য হিসেবে বিবেচিত।

এ ব্যাপারে গণতান্ত্রিক প্যানেলের অন্যতম নেতা হাবিবুর রহমান লাভলুর সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, চুয়াডাঙ্গা চেম্বারের গঠনতন্ত্রের ৫১’র ৩ ধারায় উল্লেখ ছিলো পরপর তিন বার যারা চেম্বারের পরিচালক পদে নির্বাচিত হবেন তারা পরবর্তী নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে পারবেন না। তিনি দাবি করেন- বর্তমান পরিষদ সম্পূর্ণ নিয়ম বহির্ভূতভাবে এ ধারা বিলুপ্ত করে।

এরপরও বাণিজ্য সংগঠন বিধিমালা ১৯৯৪ এবং বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ২০০২ সালের ৩১ জুলাই জারিকৃত আদেশবলে প্রগতিশীল পরিষদের ১২ জনের আসন্ন নির্বাচনে অংশগ্রহণের কোনো সুযোগ নেই। হাবিবুর রহমান লাভলু আরো দাবি করেন, এ সংক্রান্ত কাগজপত্র আমরা চেম্বারের নির্বাচন কমিশনার অ্যাড. মনিরুজ্জামান ও আপিল বিভাগের প্রধান অ্যাড. আকসিজুল ইসলাম রতনের কাছে জমা দিয়েও কোনো প্রতিকার পাইনি। হাবিবুর রহমান লাভলুর অভিযোগ প্রসঙ্গে প্রগতিশীল পরিষদের নেতা ইয়াকুব হোসেন মালিক জানান, তিনি তো চার চার বার দায়িত্বে ছিলেন। তিনি কোন গঠনতন্ত্রের বলে প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করতেন? কারণ তার সময়ে কোনো গঠনতন্ত্রই তো ছিলো না। থাকলে তিনিই তো ধরা খেতেন।

বাণিজ্য সংগঠন বিধিমালা ১৯৯৪ এবং বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ২০০২ সালের ৩১ জুলাই জারিকৃত আদেশ প্রসঙ্গে ইয়াকুব হোসেন মালিক জানান, উনি হয়তো জানেন না বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ৩১ জুলাইয়ের আদেশের পর একই বছরের ২৮ ডিসেম্বর সর্বশেষ রাষ্ট্রপতির আদেশে উপসচিব মোশাররফ হোসেন ভুঁইয়া স্বাক্ষরিত এক প্রজ্ঞাপনে ওই আদেশের ২১ ধারা বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয়। যার এসআরও নং-৩৬৩-আইন/২০০২।

এ ব্যাপারে চুয়াডাঙ্গা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রধান নির্বাচন কমিশনার অ্যাড. মনিরুজ্জামান জানান, মনোনয়নপত্র বাছাইয়ের শেষ দিনে গণতান্ত্রিক প্যানেলের হাবিবুর রহমান লাভলু, সাইফুল হাসান জোয়ার্দ্দার ও আশাবুল হক মালিক যৌথ স্বাক্ষরিত একটি অভিযোগ করেন। যেটি নির্বাচনী তফশিলের বিধিসম্মত ছিলো না। তিনি জানান, তফশিলের ৯ নং ধারায় স্পষ্ট উল্লেখ রয়েছে বাছাইকৃত মনোনয়নপত্রের ওপর কারো কোনো আপত্তি থাকলে সমিতির অনুকূলে দু হাজার টাকা অফেরযোগ্য ফিস জমা দিয়ে আপত্তি আপিল বোর্ডের কাছে দাখিল করতে হবে। কিন্তু অভিযোগকারীরা সেই নিয়ম মানেননি। সে কারণে নির্বাচন পরিচালনা বোর্ডের সিদ্ধান্ত মোতাবেক অভিযোগটি বিলুপ্ত করে নথিজাত করা হয়। গণতান্ত্রিক প্যানেলের অভিযোগ আপিল বোর্ড তাদের অভিযোগ আমলে নেয়নি এ প্রসঙ্গে আপিল বোর্ডের প্রধান অ্যাড. আকসিজুল ইসলাম রতন জানান, অভিযোগটি সঠিক নয়। কারণ গণতান্ত্রিক প্যানেলের পক্ষে আমার কাছে কেউ কোনো অভিযোগই দাখিল করেননি।

এদিকে চুয়াডাঙ্গা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির দ্বিবার্ষিক নির্বাচন নিয়ে দুটি প্যানেলের নেতাদের পরস্পর বিরোধী বক্তব্য নিয়ে বিভ্রান্তিতে পড়েছেন সাধারণ ভোটাররা। তাদের দাবি সকল ভেদাভেদ ভুলে ব্যবসায়ীদের স্বার্থে আগামী নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু করতে নির্বাচন কমিশন সকল প্রস্তুতি গ্রহণ করবে এমনটাই প্রত্যাশা সাধারণ ভোটারদের।