সরকারের মেয়াদ পাঁচ বছর জেনেও কেন এ সহিংসতা

স্টাফ রিপোর্টার: প্রধানমন্ত্রী সংসদ নেতা শেখ হাসিনা বলেছেন, পাঁচ জানুয়ারি থেকে এ পর্যন্ত ৫২ দিন যাবত বিএনপি-জামায়াত জোট হরতাল-অবরোধের নামে দেশে এক চরম নৈরাজ্য সৃষ্টি করেছে। ক্ষমতার লিপ্সায় অন্ধ হয়ে তারা আগুনে পুড়িয়ে হত্যা করে দরিদ্র খেটে খাওয়া মানুষ, নিরাপদ সাধারণ নারী-পুরুষ, এমনকি নিষ্পাপ শিশুদেরও। তাদের সহিংসতায় এ পর্যন্ত ১০১ জন মানুষ মৃত্যুমুখে পতিত হয়েছে। এদের অধিকাংশই মারা গেছে আগুনে পুড়ে। তিনি বলেন, পৃথিবীর নিষ্ঠুরতম প্রক্রিয়া হলো আগুনে পুড়িয়ে মানুষ হত্যা করা। সেই প্রক্রিয়ায় ক্ষমতায় আরোহণের চেষ্টা কোনো রাজনৈতিক দলের মতাদর্শ হতে পারে না।

গতকাল বুধবার স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে সংসদ অধিবেশনে টেবিলে উত্থাপিত প্রশ্নোত্তর পর্বে সরকারি দলের যশোর-২ আসনের সংসদ সদস্য মনিরুল ইসলামের এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন।

বর্তমান সরকারের মেয়াদ পাঁচ বছর পূর্ণ করার ইঙ্গিত দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিএনপি-জামায়াত জোট জানে ২০১৪ সালের পাঁচ জানুয়ারির নির্বাচনের মাধ্যমে গঠিত বর্তমান সরকারের মেয়াদ পাঁচ বছর। তা সত্ত্বেও কেন এ নাশকতা? কেউ কেউ এই কার্যক্রমকে রাজনৈতিক হিসেবে অভিহিত করতে চায়। কিন্তু তাদের এ নাশকতার আসল উদ্দেশ্য হচ্ছে যুদ্ধাপরাধী এবং দুর্নীতির মামলায় সাজা থেকে খালেদা জিয়াকে রক্ষা করা। এ কার্যক্রমে কোনো জনসম্পৃক্ততা নেই। শুধু নিজেদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতেই এ নাশকতা চালানো হচ্ছে। এ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন, বিএনপি-জামায়াত পরস্পরের দোসর। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের রায়ে এ পর্যন্ত ১৪ জনের মৃত্যুদণ্ড, দুজনকে আমৃত্যু কারাবাস এবং একজনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে। আন্তর্জাতিক রীতিনীতি অনুসরণ করেই এ বিচার কাজ সম্পন্ন হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিএনপি-জামায়াত হরতাল-অবরোধের নামে পেট্রোলবোমাসহ বিভিন্ন নাশকতায় সহস্রাধিক মানুষ মারাত্মকভাবে আহত হয়েছেন। ১ হাজার ১৭৩টি যানবাহন আগুনে পুড়ে গেছে ও ভাঙচুর করা হয়েছে। অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে ৬টি লঞ্চে। এছাড়া ২৪ দফায় ট্রেনে নাশকতা করা হয়েছে। হরতালের নামে নাশকতা ও ধ্বংসাত্মক কাজে ব্যবসা-বাণিজ্য, রফতানিসহ বিভিন্ন খাতে এ পর্যন্ত দেশের ১ লাখ ২০ হাজার কোটি টাকার আর্থিক ক্ষতি হয়েছে। এসব কার্যক্রম দেশের প্রচলিত আইনে মৃত্যুদণ্ডের উপযোগী অপরাধ।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়া ও তার পুত্রের দুর্নীতির ৯টি মামলা আদালতে বিচারাধীন। শুধুমাত্র জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় ২ কোটি ১০ লাখ ৭১ হাজার টাকা আত্মসাতের বিচার চলছে। এ মামলা বিলম্বিত করার জন্য নানারকম কারণ দেখিয়ে মামলার বারবার সময় নেয়া হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিএনপি নেত্রী সম্প্রতি আন্দোলনের যে ৭ দফা দাবি দিয়েছেন তাতে জনগণের কল্যাণ ও মঙ্গলের জন্য কোনো দাবি নেই। সব দাবি তার ব্যক্তি স্বার্থে। আর এ কারণেই জনগণ তার সাথে নেই।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশের প্রায় ১৫ লাখ এসএসসি পরীক্ষার্থীর ভাগ্য নিয়ে খেলা করা হচ্ছে। নিজের নাতি-নাতনি সন্তানের শিক্ষা ও নিরাপত্তার ব্যবস্থা নিশ্চিত করে সাধারণ নিষ্পাপ কোমলমতি শিশুদের শিক্ষাজীবন নিয়ে ছিনিমিনি খেলার এ প্রক্রিয়া আর চলতে দেয়া যায় না।

জাতীয় পার্টির (জাপা) এমএ হান্নানের প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশের রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা সরকারকে নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে বাধাগ্রস্ত করবে। তদুপরি চলমান পরিকল্পনার আলোকে উন্নয়নের অন্তরায়সমূহ দূরীভূত করে উন্নয়ন কার্যক্রমকে আরো চাঙ্গা করতে বিভিন্ন পদক্ষেপ বাস্তবায়ন করা হচ্ছে।

সংসদ সদস্য মাহফুজুর রহমানের প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সকলের সাথে বন্ধুত্ব, কারোর প্রতি বৈরিতা নয়, সকল বিরোধের শান্তিপূর্ণ সমাধানই হবে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র নীতির মূলমন্ত্র। বিশ্ববাসীর কাছে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল রাখতে আওয়ামী লীগ সরকার নিরলসভাবে কাজ করছে এবং এ কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে ইনশাল্লাহ।

সরকারি দলের আরেক সংসদ সদস্য আবদুর রহমান বদির এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী জানান, ২০০৬ সালে দেশের ৪৩ ভাগ লোক বিদ্যুত সুবিধা ভোগ করতো যা বর্তমানে ৭০ ভাগে দাঁড়িয়েছে।

সহিংসতার ক্ষতিগ্রস্ত ১৪৬ জন গাড়ি মালিককে অর্থ অনুদান প্রদান: গতকাল সকাল ১০টায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার কার্যালয়ে গত ৫ জানুয়ারির পর থেকে বিএনপি জোটের সহিংসতায় ক্ষতিগ্রস্ত পরিবহন মালিকদের আর্থিক সহায়তা তুলে দেন। প্রথম পর্যায়ে ১৪৬ পরিবহন মালিকের ক্ষতি হওয়া ১৫৬টি গাড়ির জন্য মোট চার কোটি ২২ লাখ টাকার অনুদান দেয়া হয়।

অনুষ্ঠানে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, চলমান অবরোধ হরতালে ১ হাজার ৮শ গাড়িতে অগ্নিসংযোগ ও ভাঙচুর করা হয়েছে। এরমধ্যে প্রধানমন্ত্রীর অনুদানের জন্য আবেদন করেছেন ৮২৩টি গাড়ির মালিক; যার মধ্যে আগুনে পুড়েছে ২৮৭টি এবং ভাঙচুর হয়েছে ৫৩৬টি গাড়ি।

অনুষ্ঠানে নৌ-পরিবহন মন্ত্রী শাহজাহান খান, প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক উপদেষ্টা এইচটি ইমাম, প্রধানমন্ত্রী তথ্য উপদেষ্টা ইকবাল সোবহান চৌধুরী, এলজিআরডি ও সমবায় প্রতিমন্ত্রী মশিউর রহমান রাঙ্গা, প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব মো. আবুল কালাম আজাদ, প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের সচিব সুরাইয়া বেগম, প্রেসসচিব একেএম শামীম চৌধুরী,  বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন সমিতির সভাপতি খোন্দকার এনায়েত উল্লাহ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। প্রধানমন্ত্রীর সহকারী একান্ত সচিব সাইফুজ্জামান শিখর অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করেন।