সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে আমাদের অবস্থান স্পষ্ট

স্টাফ রিপোর্টার: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সকল প্রকার সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে তার সরকারের দৃঢ় অবস্থানের কথা পুনর্ব্যক্ত করে বলেছেন, দেশের সেনাবাহিনীকে এ আদর্শ সামনে রেখে এগিয়ে যেতে হবে। তিনি বলেন, সশস্ত্র বাহিনী দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের মূর্ত প্রতীক। সশস্ত্র বাহিনীর উন্নয়ন ও কল্যাণের জন্য যা করার দরকার, আমরা সবই করব ইনশাল্লাহ।

গতকাল সকালে মিরপুর ক্যান্টনমেন্টে সামরিক বাহিনী কমান্ড ও স্টাফ কলেজের ২০১৪-১৫ কোর্সে স্নাতক ডিগ্রি প্রদান অনুষ্ঠানে বক্তৃতাকালে প্রধানমন্ত্রী এ কথা বলেন। শেখ হাসিনা বলেন, আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠায় আমরা অঙ্গীকারবদ্ধ। বিশ্বশান্তি রক্ষা এবং সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে আমাদের অবস্থান অত্যন্ত স্পষ্ট। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ১৯৯৬ সালে তার প্রথম সরকারের মেয়াদে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ১৯৭৪ সালের ডিফেন্স পলিসির অনুসরণে সশস্ত্র বাহিনীর সম্প্রসারণ ও আধুনিকায়নে অনেকগুলো ইউনিট প্রতিষ্ঠিত হয়।

তিনি বলেন, তার সদ্য সমাপ্ত বিগত সরকারের মেয়াদে ফোর্সেস গোল ২০৩০’র আওতায় সশস্ত্র বাহিনীর উন্নয়ন ও আধুনিকায়নে বহু উল্লেখযোগ্য কাজের বাস্তবায়ন হয়েছে। এবারও সরকার গঠনের পর উন্নয়নের এই ধারাবাহিকতা চলছে। শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের সম্পদ সীমিত। আর এ সীমিত সম্পদ দিয়েই আমরা একটি যুগোপযোগী, দক্ষ ও শক্তিশালী সশস্ত্র বাহিনী গড়ে তুলতে চাই। এ লক্ষ্য অর্জনে উন্নত প্রশিক্ষণ ও অনুশীলনের ওপর বেশি গুরুত্ব দিতে হবে। স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব রক্ষাসহ জাতিগঠনে সশস্ত্র বাহিনীর ভূমিকার প্রশংসা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনের অধীনে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে শান্তিরক্ষা, গণতন্ত্রে উত্তরণ, সামাজিক উন্নয়ন, স্বাস্থ্য ও শিক্ষা ব্যবস্থাপনাসহ পুনর্গঠন কার্যক্রমে বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যরা অত্যন্ত তাত্পর্যপূর্ণ অবদান রাখছেন। তাদের সাফল্যে সারাবিশ্বে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি আরো উজ্জ্বল হয়েছে।

শেখ হাসিনা বলেন, বিশ্বের সাথে সঙ্গতি রেখে দেশের প্রত্যেক প্রতিষ্ঠান উন্নত ও আধুনিক হবে। তার সরকারের মূল লক্ষ্য হচ্ছে জাতীয় জীবনের সব পর্যায়ে সুশাসন প্রতিষ্ঠা করে সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রার মান উন্নত করা। তিনি বলেন, অনিয়ম-দুর্নীতি প্রশ্নে সরকার কাউকেই ছাড় দেয়নি, দেবেও না। দেশের সর্বত্র ডিজিটাল প্রযুক্তির বিস্তার ঘটিয়ে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা হচ্ছে। ২০২১ সালের আগেই বাংলাদেশকে মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত করা হবে। আমরা ২০২১ সালে ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত দেশ হিসেবে স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী উদযাপন করতে চাই।

সশস্ত্র বাহিনীতে নারীর অংশগ্রহণ আরো বাড়ানোর ওপর গুরুত্বারোপ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি বিশ্বাস করি, একটি দেশ যদি উন্নতি করতে চায় তাহলে অবশ্যই তার মাঝে নারী-পুরুষ সবাইকেই সমানভাবে অবদান রাখতে হবে। গ্রাজুয়েটদের অভিনন্দন জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমার বিশ্বাস এ প্রশিক্ষণ আপনাদের ওপর অর্পিত দায়িত্ব দক্ষতার সাথে পালনে এবং যে কোনো চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় আরো আত্মপ্রত্যয়ী হতে শেখাবে।

সশস্ত্র বাহিনীর দেশি-বিদেশি ২১৪ জন অফিসার এবার কৃতিত্বের সাথে ডিগ্রি সম্পন্ন করেন। এ বছর বাংলাদেশ সেনাবিহিনীর ১২০ জন, নৌবাহিনীর ২৩ জন, বিমানবাহিনীর ১৯ জন ও ৫২ জন বিদেশি অফিসার ডিগ্রি অর্জন করেন। এরমধ্যে ১২ নারী কর্মকর্তাও রয়েছেন। তারা প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে সনদপত্র গ্রহণ করেন। অনুষ্ঠান শেষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তিন বাহিনীর প্রধান ও সেনা কর্মকর্তা, বিরোধীদলীয় নেতা, বিভিন্ন দেশের কূটনীতিকদের সাথে কুশল বিনিময় করেন।

অনুষ্ঠানে সামরিক বাহিনী কমান্ড ও স্টাফ কলেজের কমান্ড্যান্ট মেজর জেনারেল সাজ্জাদুল হক স্বাগত বক্তব্য রাখেন। এ সময় অন্যান্যের মধ্যে মন্ত্রিসভার সদস্যবৃন্দ, প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টাগণ, জাতীয় সংসদে বিরোধী দলীয় নেতা রওশন এরশাদ, প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূত এইচএম এরশাদ, সংসদ সদস্যবৃন্দ, তিন বাহিনীর প্রধান, মার্সিয়া স্টিফেনস ব্লুম বার্নিকাটসহ বিভিন্ন দেশের কূটনীতিক এবং পদস্থ সামরিক ও বেসামরিক কর্মকর্তাবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।