পদ্মায় লঞ্চডুবি : আরও এক লাশ উদ্ধার : এখনও নিখোঁজ ১১

স্টাফ রিপোর্টার: পাটুরিয়ায় পদ্মা নদীতে এমভি মোস্তফা-৩ লঞ্চডুবির ঘটনায় মঙ্গলবার আরও একজনের মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। এ নিয়ে লঞ্চ ডুবিতে মৃতের সংখ্যার দাঁড়ালো ৭১-এ। এখনও নিখোঁজ রয়েছেন ১১ যাত্রী। তাদের খোঁজে কখনও পদ্মা পাড়ে, কখনও বিভিন্ন দফতরে হন্যে হয়ে ছুটছেন স্বজনরা। অনেকেই নিজেরা ট্রলার নিয়ে ভাটিতে খুঁজে ফিরছেন। না পেয়ে ভেঙে পড়ছেন কান্নায়। এসব পরিবারে বইছে শোকের মাতম।
সন্ধ্যার পর ফায়ার সার্ভিসের উদ্ধারকর্মীরা পাটুরিয়া ফেরিঘাটের ৩ কিলোমিটার দূরে মান্দ্রাখোলা থেকে শিবালয় উপজেলার বোয়ালিয়া গ্রামের সুবল চন্দ্র সুত্রধরের (৬৫) লাশ উদ্ধার করে। শিবালয় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা একেএম গালিভ খান এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
রোববার ও সোমবার উদ্ধার ৭০ লাশের মধ্যে ৬৯টি পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছিলো সোমবারের মধ্যেই। মঙ্গলবার পর্যন্ত অন্য লাশটি শনাক্ত করতে পারেননি কেউ। এদিন মধ্যবয়সী ওই নারীর মরদেহ আঞ্জুমান মফিদুল ইসলামের মাধ্যমে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে। দুপুর সাড়ে ১২টায় আঞ্জুমানের প্রতিনিধি কামরুল হাসান লাশটি গ্রহণ করেন।
এখনও যারা নিখোঁজ- মানিকগঞ্জের শিবালয় উপজেলার তেওতা গ্রামের মৃত জয়নাল আবেদিনের ছেলে আবুল হোসেন হাসু (৫৫), এলাচিপুর গ্রামের শেখ আফাজ উদ্দিনের ছেলে সোহরাব হোসেন, চরকুশণ্ড গ্রামের হাবিব মোল্লার ছেলে মান্নু পাগলা (৬৫), ঢাকার মহাখালীর ৭৫ নাম্বার বাসার সামাদ হোসেনের ছেলে ব্রাক কর্মকর্তা মোস্তফা মেহফুজ, ঝিনাইদহের শৈলকুপা উপজেলার দলিলপুর গ্রামের নাজমুল হোসেনের মেয়ে মারুফা খাতুন (৫), রাজবাড়ীর পাংশা উপজেলার মুরাদনগর গ্রামের সেকেন আলীর স্ত্রী অজিরুননেসা (৩৮), নড়াইলের লোহাগড়ার হাসেম আলীর স্ত্রী সাহেদা বেগম, কুষ্টিয়া কুমারখালীর যাদবপুর গ্রামের মিলন শেখের স্ত্রী লিপি আক্তার (৪২) ও ফরিদপুরের ভাঙ্গার নুর ইসলামের ছেলে জুয়েল রানা (২৭)।
শিবালয় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা গালিভ খান বলেন, উদ্ধার হওয়া সুবল চন্দ্র সুত্রধর জেলা প্রশাসনের তৈরি নিখোঁজ তালিকার বাইরে ছিলেন। নিখোঁজদের স্বজনরা প্রিয় মানুষকে পেতে হন্যে হয়ে খুঁজছে। স্থানীয় প্রশাসন ছাড়াও তারা পদ্মার ভাটিতে ট্রলার দিয়ে অনুসন্ধান চালিয়ে যাচ্ছেন। নিখোঁজ যাত্রীদের খুঁজতে ঘিওরের ফায়ার সার্ভিসের উদ্ধারকর্মীরাও কাজ করে যাচ্ছেন। এমনটি জানিয়েছেন ইনচার্জ জিহাদ হোসেন।
লঞ্চডুবির ৩ দিনেও ব্র্যাক নিরীক্ষা কর্মকর্তা মোস্তফা মেহেফুজের সন্ধান না পাওয়া গেলেও স্বজনরা পেয়েছে তার অফিসিয়াল পরিচয়পত্র ও হ্যান্ডব্যাগ। মঙ্গলবার সকালে খালাতো ভাই তানভীর আহমেদ হিরা পাটুরিয়া নৌপুলিশের হেফাজতে থাকা হতভাগ্যদের ব্যাগ তল্লাশি করে ভাইয়ের শেষ চিহ্নটুকু পান।
ঝিনাইদহের শৈলকুপার দলিলপুর গ্রামের মারুফা খাতুন (২৫) অনেক দিন দেখেনি তার দাদিকে। দাদিকে দেখার জন্য যাচ্ছিলেন তিনি। কিন্তু তার সে ইচ্ছা পূরণ হয়নি। মারুফার কোনো হদিস পায়নি তার পরিবার। ডুবে যাওয়া লঞ্চের কর্মচারী আবুল হাসেম হাসু ও বাবুর্চি সোহরাব হোসেনসহ অন্য নিখোঁজদের পরিবারেও এখন শুধুই কান্না আর অপেক্ষা।