ভুয়া প্রকল্প দেখিয়ে চুয়াডাঙ্গায় কুতুবপুর ইউনিয়নে কর্মসৃজন ও টিআর কাবিখার কোটি কোটি টাকা লোপাটের অভিযোগ

স্টাফ রিপোটার: চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার কুতুবপুর ইউনিয়নে কর্মসৃজন ও টিআর কাবিখার কোটি কোটি টাকা লোপাটের মহোৎসব চলছে। যে যেমন পাচ্ছেন সরকারি টাকা লুটে নিচ্ছেন। আইনকানুনের কোনো তোয়াক্কা না করে সরকারি বরাদ্দ রীতিমতো হরিলুট চলছে। আর এ লুটপাটের সহায়তা করছেন বলে অভিযোগ উঠেছে জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা প্রকল্প বাস্তবায়ন অফিসারের বিরুদ্ধে। প্রকল্প প্রতি তাদের মাসোহারা দিয়ে সরকারি চাল-গমের কাজ না করেই বিক্রি করে পকেটস্থ করা হচ্ছে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাও এ লুটপাটের ঘটনায় ক্ষুব্ধ ও হতবাক। কুতুবপুর ইউনিয়নের চল্লিশ দিনের কর্মসৃজন কর্মসূচি কাজের ব্যাপক অনিয়ম দুর্নীতি ও হরিলুটের অভিযোগ উঠলেও রহস্যজনক কারণে তদন্ত করে এ পর্যন্ত কারো বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করেছেন এমন নজির তদন্ত তদারকি নেই। ফলে সরকারের এ কর্মসূচি সফলতার চেয়ে বিফলতার পথে গেছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত সাড়ে চার বছর ধরে ভুয়া প্রকল্পের মাধ্যমে কুতুবপুর ইউনিয়নে টিআর, কাবিখা ও কর্মসৃজনের কোটি কোটি টাকা লোটপাট করা হয়েছে। সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার কুতুবপুর ইউনিয়নের কুতুবপুর গ্রামের রাস্তা, হাসানহাটি, ভুলটিয়া, মহাম্মদজমা, শাহাপুর, বোয়ালিয়া, যাদবপুর, জীবনা, শম্ভুনগর, দশমীসহ কয়েকটি রাস্তায় মাটি ভরাটে কর্মসৃজন প্রকল্পের আওতায় প্রায় সাড়ে ১৪ লাখ টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়। কিন্তু ২শ জন শ্রমিক বরাদ্দকৃত মধ্যে শতকরা ৩৩ ভাগ মহিলা শ্রমিক থাকার কথা হলেও পিআইসিরা মহিলা কোটা পূরণ করেনি। কুতুবপুর ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকার হতদরিদ্র মানুষেরা প্রতিদিন এ কাজের বিনিময় হাজিরা ২শ টাকা করে পান। সপ্তায় বৃহস্পতিবার সরোজগঞ্জ সোনালী ব্যাংক শাখা থেকে চেক বইয়ের মাধ্যমে শ্রমিকরা তাদের টাকা উত্তোলন করার সময় পিআইসিরা শ্রমিকদের হুমকি দিয়ে তাদের কাছ থেকে চেক বই নিয়ে সর্দার ও পিআইসি পরস্পর যোগসাজোস করে জাল স্বাক্ষর করে ব্যাংক অ্যাকান্ট থেকে টাকা উত্তোলন করেছে বলে একাধিক অভিযোগ রয়েছে।

অন্যদিকে দুর্নীতিবাজ পিআইসি, ইউপি সচিব, চেয়ারম্যান তারা মনে করেন উপজেলা প্রকল্প ট্যাগ কর্মকর্তা, পিআইওর এবং সাংবাদিক হাতে থাকলে যেকোনো প্রকল্পের অর্থ বদহজম করা যায়। এছাড়া ৪০ দিনের কাজ ৫ দিন করে কাজ করার কথা থাকলেও তাদেরকে ৩ দিন কাজ করিয়ে নিয়ে ৫ দিনের মজুরি উত্তোলন করে। বাকি ২ দিনের টাকাসহ শ্রমিকের মাথাপিছ ৩০ টাকা হারে কর্তন করে হাজার হাজার টাকা ভুয়া শ্রমিক দেখিয়ে আত্মসাৎ করার একাধিক অভিযোগও উঠেছে। তবে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কেএম মামুন উজ্জামান মাঝে মধ্যে ইউনিয়নের কর্মসৃজন কাজ দেখতে গিয়ে কাজে অনিয়ম-দুর্নীতি দেখতে পান। কাজের কাছে শ্রমিক না থাকায় সেদিনের কাজের বেতন বন্ধ করে দেন বলে একটি সুত্রে জানিয়েছে। বর্তমান জেলার বিভিন্ন স্থানে কর্মসৃজনের কাজ কাগজ-কলমে শুরু হলেও বাস্তবে হয়নি। তারপরও ভুয়া কাগজ তৈরি করে কর্মসৃজন প্রকল্পের কাজ কুতুবপুর ইউপিতে যেমনভাবে হওয়ার কথা তেমনভাবে কোনো কাজ হয়নি বলে এলাকার একাধিক ব্যক্তি অভিযোগ করেছেন। তাছাড়া কর্মসৃজন প্রকল্প বাস্তবায়নে অতিদরিদ্রদের আধিক্য দেয়ার সরকারি নির্দেশ পদে পদে লঙ্ঘন করা হয়েছে। ভুয়া শ্রমিক সাজিয়ে হতদরিদ্রদের টাকা পকেটস্থ করতে ব্যাংক ম্যানেজারের সাথে চেয়ারম্যান ইউপি সচিবসহ পিআইসিরা বেশি ব্যস্ততা থাকার অভিযোগ উঠেছে।

শ্রমিকরা বলেন, আমাদের দিয়ে পানবরজে মাটি দেয়া, ধানের বিচুলির পালা দেয়া, ধানের চারা রোপণ ও ধুনিয়ার জমি থেকে ধুনিয়া ওঠানোর কাজ করানোর অভিযোগ করে পিআইসিদের বিরুদ্ধে। সরোজগঞ্জ বোয়ালিয়া এলাকার এক যুবক নিজের নাম প্রকাশ না করার শর্তে সাংবাদিকের কাছে জানান, কুতুবপুর ইউনিয়নে কর্মসৃজন কাজের নামে লোপাটের মহোৎসব চলেছে। কাজের ব্যাপারে সঠিকভাবে তদন্ত তদারকি করলে পিআইসিদের সব অপকর্ম বেরিয়ে আসবে। অন্যদিকে জনসংখ্যা ও ইউনিয়নের আয়তন অনুযায়ী কর্মসৃজনের শ্রমিক বণ্টনের নিয়ম থাকলেও দলীয় ও রাজনৈতিক প্রভাব এবং মুখ চিনে শ্রমিক বণ্টন করা হয়েছে। তথা নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে কর্মসৃজন প্রকল্প বাস্তবায়ন হওয়ায় ইউপি চেয়ারম্যানদের মাঝে চরম ক্ষোভ বিরাজ করছে। এ ব্যাপারে পিআইসিদের দাবি তাদের কাজে কোনো অনিয়ম-দুর্নীতি হয়নি। আমরা যথাসময়ে প্রকল্পের কাজ শেষ করেছি। তবে এর সত্যতা জানার জন্য ৩ নং কুতুবপুর ইউপি চেয়ারম্যান মো. নজরুল ইসলাম নজুর মোবাইলফোনে যোগাযোগ করা হলে মোবাইলফোনটি বন্ধ থাকার কারণে তার বক্তব্য প্রকাশ করা সম্ভব হয়নি।