সোয়াইন ফ্লু প্রতিরোধে জোর প্রস্তুতি প্রয়োজন

রোগের নাম সোয়াইন ফ্লু। এর আবির্ভাব শতাব্দীকাল আগে। রোগের বাহক ভাইরাসটি নির্ণয় পূর্বক তার প্রতিরোধে বিজ্ঞানভিত্তিক তত্পরতার ইতিহাস কয়েক বছরের। প্রাণঘাতী সোয়াইন ফ্লু’র জন্য দায়ী এইচ ওয়ান এন ওয়ান ভাইরাসের প্রতিরোধকের রয়েছে তীব্র পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া। সেকারণেই বিশেষজ্ঞরা এর বিরুদ্ধে শক্ত প্রতিরোধ ব্যবস্থা গড়ে তোলার জন্যই জোর পরামর্শ দিয়ে থাকেন।

পড়শি দেশ ভারতের কয়েকটি রাজ্যে এ ভাইরাসের আক্রমণে কয়েক সপ্তার ব্যবধানে সাত শতাধিক মানুষ মারা গেছে। আরও বিপদের বিষয় হলো, দেশের দু দিকে সীমান্ত সংলগ্ন ভারতের রাজ্য পশ্চিমবঙ্গে মৃতের সংখ্যা শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত ছয় জন। রাজ্যটিতে আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা বহু। পশ্চিমবঙ্গের যে এলাকায় এ ভাইরাস ছড়িয়েছে, সে এলাকা চুয়াডাঙ্গা-মেহেরপুর ও কুষ্টিয়া থেকে খুব বেশি দূরে নয়। সীমান্ত পারাপারের ক্ষেত্রে পাসপোর্ট লাগে। পাখপাখালির ক্ষেত্রে? সোয়াইন ফ্লু ওদের মাধ্যমেও ছড়ায়।

বাংলাদেশে সোয়াইন ফ্লু প্রথম শনাক্ত হয় ২০০৯ সালে। সেসময় অন্তত কুড়িজন মানুষ এ ভাইরাসে আক্রান্ত হন। অবশ্য তাদের সকলকেই সুস্থ করে তোলা সম্ভব হয়। কিন্তু ভারতে গত দুমাসেরও কম সময়ে এতো মানুষের মৃত্যু নতুন করে চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। সোয়াইন ফ্লু, ইবোলা বা এইডসের মতো ভয়াবহ রোগ প্রতিরোধই মূল। অন্যান্য রোগের মতো সোয়াইন ফ্লু প্রতিরোধ করাও খুব কঠিন কিছু নয়। মাত্র কয়েকটি বিষয়ে সতর্কতা অবলম্বন করলে রোগটি প্রতিরোধ করা সম্ভব।

ভারতের পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে সরকার ইতোমধ্যেই সোয়াইন ফ্লু প্রতিরোধে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে দেশের সকল জেলা স্বাস্থ্য বিভাগকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। এ নির্দেশনা যেন শুধু কাগজে কলমে না হয়। সেদিকে বিশেষ দৃষ্টি দেয়া দরকার। কারণ, সোয়াইন ফ্লু’র চিকিত্সায় দেশের জেলা স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলোর বর্তমান কাঠামোর মান কিংবা রোগটি সম্পর্কে জনসচেতনতা গড়ে তোলা তেমন ব্যবস্থাও মজবুত নয়। বিমান, জল ও স্থলবন্দরগুলোতে স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য বিশেষ ব্যবস্থা করা জরুরি। কেননা, সোয়াইন ফ্লু আক্রমণ করেছে এমন দেশের বহু নাগরিক নানা কাজেই প্রতিদিন বাংলাদেশে প্রবেশ করছে। দর্শনার জয়নগর-গেদে সীমান্ত দিয়েও ভারতের বহু মানুষের আসা-যাওয়া।

মনে রাখা দরকার, এ ধরনের রোগের ক্ষেত্রে যে দেশের প্রতিরোধ ও দ্রুত চিকিত্সা ব্যবস্থা যতোটা যুগোপযোগী, সেই দেশের মানুষও ততোটা নিরাপদ। ভাইরাসঘটিত রোগ প্রতিরোধ এবং চিকিত্সার জন্য একটি বিশেষায়িত জাতীয় প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার বিষয়টিও সংশ্লিষ্টদের ভেবে দেখা দরকার। চিকিত্সাবিজ্ঞানের আধুনিক এ যুগেও প্রাণঘাতী বহু ভাইরাস উন্নত অনেক দেশের পরিস্থিতিকে দুর্যোগপূর্ণ করে তুলেছে।

সোয়াইন ফ্লু এদেশে আতঙ্ক সৃষ্টি করার বড় কারণ হলো, এজন্য দায়ী ভাইরাসটি দ্রুতই এশিয়ায় ছড়িয়ে পড়ছে। পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে এর এক মহামারীর আকার ধারণ করেছে। কাজেই, সোয়াইন ফ্লু বিষয়ে কোনো অবহেলা করা উচিত হবে না।  জনসচেতনতামূলক কর্মসূচির মধ্যদিয়ে শুরু হতে পারে সোয়াইন ফ্লু’র প্রতিরোধ। দেশের সার্বিক দিক বিবেচনা করে সময় থাকতেই প্রতিরোধে সংশ্লিষ্টদের আন্তরিকতা কাম্য।