মহেশপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ল্যাব টেকনিশিয়ানের তিনটি পদশূন্য

 

শাহনেওয়াজ খান সুমন: ঝিনাইদহ মহেশপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ল্যাব টেকনিশিয়ানের তিনটি পদশূন্য প্রায় দু মাস। হাসপাতালের আগত শ শ রোগীর সকল ধরনের পরীক্ষা-নিরীক্ষার কাজ বন্ধ হয়ে গেছে। প্রতিদিন চিকিৎসা নিতে আসা ওই রোগীরা বাড়তি টাকা ব্যয় করে বাইরে থেকে পরীক্ষা করাতে বাধ্য হচ্ছেন। এতে গ্রামাঞ্চল থেকে আসা দরিদ্র ও অসহায় রোগীরা আর্থিকভাবে ভোগান্তির স্বীকার হচ্ছেন। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলছে, বিষয়টি নিয়ে স্বাস্থ্য বিভাগের মহাপরিচালক পর্যন্ত তারা লিখিত দিয়েছেন। ল্যাব টেকনিশিয়ানের জন্য আবেদন করেছেন, কিন্তু কোনো কাজ হয়নি। এ টেকনিশিয়ান না থাকায় হাসপাতালের চিকিৎসাসেবা ভেঙে পড়েছে। অনেকে বাড়তি পয়সায় পরীক্ষা করাতে না পেরে চিকিৎনা না নিয়ে ফিরে যাচ্ছেন।

হাসপাতালের একটি সূত্র জানিয়েছেন, প্রতিদিন ২৫০ থেকে ২৬০ জন রোগী বহির্বিভাগে চিকিৎসা নিতে আসেন। এছাড়া জরুরি বিভাগে চিকিৎসা নেন ৬০ থেকে ৭০ জন রোগী। আর ভর্তি হন ৩০ থেকে ৩৫ জন। যাদের মধ্যে অনেকের নানা পরীক্ষার প্রয়োজন হয়ে পড়ে। প্রতিদিন শতাধিক রোগী নানা পরীক্ষার জন্য নির্দেশ দেন হাসপাতালে কর্তব্যরত চিকিৎসকগণ। যাদের টেকনিশিয়ান থাকা অবস্থায় কম মূল্যে হাসপাতাল থেকে পরীক্ষা করানো হতো। এখন ল্যাব টেকনিশিয়ান না থাকায় বাইরের বিভিন্ন প্যাথলজি থেকে করাতে হচ্ছে। আর এর জন্য রোগীদের বাড়তি টাকা গুনতে হচ্ছে। হাসপাতালের সরকারি সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।

হাসপাতালের এক কর্মচারী নাম প্রকাশ না করে জানান, এখানে ডায়াবেটিক পরীক্ষা করা হয় ৬০ টাকায়। যা বাইরে থেকে রোগীরা করছেন ১২০ টাকায়। ইউরিন পরীক্ষা হাসপাতালে করা হয় ২০ টাকায়, বাইরে করতে হচ্ছে ৮০ টাকায়। সিবিসি পরীক্ষা হাসপাতালে করা হতো ১২০ টাকায়, সেখানে রোগীরা বাইরে থেকে করছেন ৩২০ টাকায়। এভাবে আরো অনেক পরীক্ষা বাড়তি টাকা দিয়ে রোগীরা বাইরে থেকে করতে বাধ্য হচ্ছেন।

গতকাল সরেজমিনে দেখা যায়, মহেশপুর উপজেলার ভাষানপোতা গ্রাম থেকে হাসপাতালে এসেছেন আফতাব আলীর স্ত্রী নেহারন নেছা (৫৫)। তার ডায়াবেটিক পরীক্ষার জন্য ডাক্তার লিখে দিয়েছেন। হাসপাতাল ঘুরে তিনি পরীক্ষা করাতে না পেরে চলে যান বাইরের একটি প্যাথোলজিতে। সেখান থেকে ১২০ টাকা দিয়ে পরীক্ষা করে আসেন। হাসপাতালে হলে তার ব্যয় হতো ৬০ টাকা। সামন্তা গ্রামের ইয়াকুব আলী তার ৬ বছরের মেয়েকে হাসপাতালে নিয়ে এসেছিলেন। তাকেও দুটি পরীক্ষা করতে বলা হয়েছে। তিনিও টেকনিশিয়ান না থাকায় বাইরে থেকে পরীক্ষা করাতে বাধ্য হয়েছেন। হাসপাতালে করালে তার খরচ হতো ২০০ টাকা, বাইরে থেকে করেছেন ৪০০ টাকা খরচ করে। এভাবে প্রতিদিন হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা শ শ দরিদ্র রোগী বাড়তি টাকা গুনতে গিয়ে হিমসিম খাচ্ছেন।

হাসপাতালের অপর একটি সূত্র জানিয়েছেন, এখানে ল্যাব টেকনিশিয়ান পদ ৩টি। কিন্তু কখনও তিনজন এক সাথে যোগদান করেননি। সব সময় দুজন করে দায়িত্ব পালন করেন। সাইদুর রহমান নামের একজন রাজশাহী মেডিকেলে দু বছরের কোর্সে পড়ালেখা করতে গেলে হয়ে যায় একজন। সর্বশেষ সেই একজনও ডিসেম্বর মাসের ১ তারিখে নাটোরে বদলি হয়েছেন। এরপর তিনটি পদই শূন্য রয়েছে।

এ ব্যাপারে মহেশপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. তাহাজ্জেল হোসেনের সাথে কথা বললে তিনি জানান, এ ল্যাব টেকনিশিয়ান না থাকায় সাধারণ রোগীরা ভোগান্তির স্বীকার হচ্ছেন। অনেকে টাকার অভাবে বাইরে থেকে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করাতে পারছেন না। তখন চিকিৎসা দেয়াও কষ্টকর হয়ে পড়ছে। হাসপাতালে দ্রুত ল্যাব টেকনিশিয়ান দেয়ার জন্য বিভিন্ন জায়গায় লিখিত দিয়েছেন বলে জানান। এমনকি স্বাস্থ্য বিভাগের মহাপরিচালক পর্যন্ত তিনি চিঠি লিখেছেন, কিন্তু কোনো কাজ হয়নি। সাধারণ রোগীরা এ ব্যাপারে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়ার জন্য সরকারের দৃষ্টি কামনা করেছেন।