মুষলধারে শিলাবৃষ্টি : আমের মুকুলসহ ফসলের ব্যাপক ক্ষতি

চুয়াডাঙ্গা-মেহেরপুরসহ পার্শ্ববর্তী এলাকায় ৩ ঘণ্টায় ৩০ দশমিক ৬ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড

 

স্টাফ রিপোর্টার/মেহেরপুর অফিস: চুয়াডাঙ্গা-মেহেরপুরসহ পার্শ্ববর্তী এলাকায় দীর্ঘ সময় ধরে মুষলধারে বৃষ্টিসহ কিছু স্থানে ব্যাপক শিলাবৃষ্টি হয়েছে। জীবননগর, দামুড়হুদা ও মেহেরপুরের কিছু স্থানে শিলার চর পড়ে যায়। এতে আমের মুকুলসহ বিভিন্ন ফসলের ক্ষতি দেখে কৃষক সাধারণের মাথায় হাত উঠেছে। চুয়াডাঙ্গা আবহাওয়া অফিস গতকাল বুধবার বিকেল ৪টা থেকে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত ৩০ দশমিক ৬ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করেছে। বৃষ্টিতে মাটির ঘরের দেয়াল ধসে চুয়াডাঙ্গা আলমডাঙ্গার পল্লি পাঁচকমলাপুর বিশ্বাসপাড়ার হাজেরা খাতুন গুরুতর জখম হয়েছেন।

Meherpur pic-1

আবহাওয়া অধিদফতর জানিয়েছে, লঘুচাপের বর্ধিতাংশ গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গ ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থান করছে। স্বাভাবিক লঘুচাপ দক্ষিণ বঙ্গোপসাগরে অবস্থান করছে। কুমিল্লা অঞ্চলসহ রংপুর, রাজশাহী, ঢাকা, খুলনা ও সিলেট বিভাগের দু-এক জায়গায় অস্থায়ী দমকা/ঝড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টি/ বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। এছাড়া দেশের অন্যত্র আকাশ আংশিক মেঘলাসহ আবহাওয়া প্রধানত শুষ্ক থাকতে পারে। চুয়াডাঙ্গায় বিকেল ৪টার দিকে বৃষ্টি শুরু হয়। চুয়াডাঙ্গা শহরে শিলার পরিমাণ তুলনামূলক কম হলেও মেহেরপুরে বৃষ্টির পানির ফোটার চেয়ে কিছু কিছু স্থানে শিলার পরিমাণ ছিলো বেশি। শিলার স্তর দেখে অনেকেই মন্তব্য করতে গিয়ে বলেন, এ ধরনের শিলাবৃষ্টি অনেক দিন দেখা যায়নি। দামুড়হুদা, জীবননগর, আলমডাঙ্গার কিছু স্থানেও ব্যাপক শিলাবৃষ্টি হয়েছে। বৃষ্টিতে মাটির ঘরের দেয়াল ধসে আলমডাঙ্গার খাদিমপুর ইউনিয়নের পাঁচকমলাপুরের আনারুল ইসলামের স্ত্রী হাজেরা বেগম (৩৫) গুরুতর আহত হয়েছেন। তাকে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তার একটি পা গুঁড়িয়ে গেছে। মাথায়ও রক্তাক্ত জখম হয়েছে। গতকাল বুধবার সন্ধ্যায় এ ঘটনা ঘটে।

মেহেরপুর জেলার বিভিন্ন স্থানে গতকাল বুধবার বিকেলে আধা ঘণ্টাব্যাপি শিলাবৃষ্টি হয়েছে। এতে গম, মসুরি, তামাক ও আমের মুকুলসহ উঠতি ফসলের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা করছেন চাষি ও কৃষি বিভাগ। বিকেল চারটার দিকে কয়েকবার বিজলিসহ বজ্রপাত হয়। এরপরেই শুরু হয় বৃষ্টি। প্রায় ২০ মিনিট সময় ধরে শিলাবৃষ্টি পড়ে। এ সময় লোকজনকে শিলাবৃষ্টি কুড়োতে দেখা গেছে। তবে জেলার তিনটি উপজেলার ওপর দিয়েই শিলাবৃষ্টি হওয়ায় ফসলের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে জানান বিভিন্ন এলাকার কৃষকরা। হিজলবাড়িয়া গ্রামের কৃষক এখলাছুর রহমান জানান, শিলাবৃষ্টিতে তার দু বিঘা গম ও এক বিঘা মসুরির ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। কাঁচের বলের মতো সাইজের শিলাবৃষ্টি পড়ে ফসলের ডোগা নুইয়ে পড়েছে। ক্ষেতের বেশির ভাগ জায়গায় মাটির সাথে মিশে গেছে মসুরি। এদিকে জেলার বিভিন্ন বাগানের আমগাছের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। ঝরে পড়েছে বেশির ভাগ গাছের আমের মুকুল। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক জাহিদুল আমিন জানান, উঠতি ফসলের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা করা হচ্ছে। উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তাদের স্ব স্ব ব্লকে খোঁজ নিয়ে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নিরূপণের নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

জেলায় চলতি মরসুমে গম ১৭ হাজার ৪১৩ হেক্টর, মসুরি ৫ হাজার হেক্টর, সরিষা ৮ হাজার ৮১৫ হেক্টর, আলু ১ হাজার ২৫ হেক্টর, ভুট্টা ২ হাজার ৯৫০ হেক্টর, পেঁয়াজ এক হাজার ৭৯০ হেক্টর জমিতে চাষ হয়েছে। এছাড়া জেলায় ২ হাজার ৬৫ হেক্টর জমিতে আমবাগান রয়েছে।

জীবননগর ব্যুরো জানিয়েছে, জীবননগর উপজেলার উথলী ইউনিয়নে গতকাল বুধবার বিকেলে শিলাবৃষ্টি হয়েছে। একই সময়ে বৃষ্টি হয়েছে জীবননগর শহরে। শিলাবৃষ্টির ঘটনায় উথলী ইউনিয়নের উথলী, একতারপুর, সেনেরহুদা, মৃগমারী, দেহাটি, কাশিপুর, খয়েরহুদা, সন্তোষপুর, মনোহরপুর, শিংনগর, রাজাপুর, ধোপাখালী ও মানিকদাহ আশপাশের গ্রামের মাঠের উঠতি ফসলের ব্যাপক ক্ষতিসাধন হয়েছে। রাতে শিলাবৃষ্টি হয়েছে জীবননগরে। রাত আনুমানিক পৌনে ৯টায় জীবননগরে বৃষ্টির সাথে শিলাপাতের ঘটনা ঘটে। বিশেষ করে এ ইউনিয়নের আমচাষিরা ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়েছেন। খয়েরহুদা গ্রামের আমচাষি রফিউল ইসলাম জানান, তাদের ২০ বিঘা জমিতে আম্রপালি, মল্লিকা ও হাইব্রিড জাতীয় আমবাগান রয়েছে। গাছে এবার ব্যাপক মুকুল এসেছে; কিন্তু বিকেলের শিলাপাতে আমের মুকুলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে বলে তিনি জানান।

আলমডাঙ্গা ব্যরো জানিয়েছে, গতকাল বুধবার দুপুরের হঠাৎ আকাশে হালকা মেঘ দেখা দেয় এবং শুরু হয় বিদ্যুত চমকানো। সন্ধ্যার পর হালকা বৃষ্টির সাথে আলমডাঙ্গা শহরবাদে আশপাশের গ্রামগুলোসহ উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে শুরু হয় শিলাবৃষ্টি। আর হঠাৎ শিলাবৃষ্টিতে কৃষকের ক্ষেতের ফসলের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। বিশেষ করে মসুরি, গম, তামাক, ধান, ভুট্টাসহ বিভিন্ন ধরনের ফসলের ক্ষতি হয়েছে।

দামুড়হুদা প্রতিনিধি জানিয়েছেন, দামুড়হুদায় শিলাবৃষ্টিতে মাঠে থাকা সব ধরনের ফসলের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। ফলে দিশেহারা হয়ে পড়েছে এলাকার ক্ষতিগ্রস্ত চাষিরা। গতকাল বুধবার বিকেল ৫টার দিকে আচমকা হালকা ঝড়ের পরই শিলাবৃষ্টি শুরু হয়। দামুড়হুদা দশমীর আলুচাষি নাসির উদ্দিন বলেন, মাঠে থাকা সব ধরনের ফসলেই ব্যাপক ক্ষতি হয়ে গেলো। বিশেষ করে মসুরি, গম, আলু, ভুট্টা, তামাকসহ সব ধরনের ফসল। ২০ মিনিট ধরে শিলাবৃষ্টিতে পিচরোডে শিলার চর পড়ে যায়। দামুড়হুদা বাস্তপুরের চাষি জামাল উদ্দিন বলেন, মাঠে থাকা সব ধরনের ফসলের ক্ষতি হয়েছে। তবে সব চেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে আম আর পানবরজে। এ শিলাবৃষ্টিতে আমের অধিকাংশ মুকুলই নষ্ট হয়ে যাবে। সব মিলিয়ে এলাকার চাষিরা বড় ধরনের ক্ষতির মুখে পড়লো।

ডিঙ্গেদহ প্রতিনিধি জানিয়েছেন, অবিরাম শিলাবৃষ্টিতে চুয়াডাঙ্গা সদরের শঙ্করচন্দ্র ইউনিয়নের ফুলবাড়ি গ্রামে ফসলের ব্যাপক ক্ষতি সাধিত হয়েছে। এ ব্যাপারে ফুলবাড়ি গ্রামের কৃষকেরা জানান, গতকাল বুধবার বিকেল ৫টায় হঠাৎ করে ব্যাপক শিলাবৃষ্টিতে পান ও তামাকের পাতা ছিড়ে নষ্ট হয়েছে। এছাড়াও মাটির সাথে মিশে গেছে পাকা মসুরি। ভেঙে পড়েছে আমের মুকুল। এর ফলে আর্থিকভাবে ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখিন হয়েছে গ্রামের কৃষকেরা।

মুন্সিগঞ্জ প্রতিনিধি জানিয়েছেন, গতকাল বিকেলের শিলাবৃষ্টিতে মাঠে থাকা সব ধরনের ফসলের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। মুন্সিগঞ্জ, মোমিনপুর, বোয়ালমারী, পাঁচকমলাপুর, হাজরাহাট, তালতলাসহ পার্শ্ববর্তী এলাকার পান ও তামাকের পাতা ছিঁড়ে নষ্ট হয়েছে।