মাগুরায় পুলিশের গুলিতে বিএনপি নেতা ও দিনাজপুরে শিবির নেতা নিহত

চুয়াডাঙ্গায় হরতালের সমর্থনে ছাত্রদলের ঝটিকা মিছিল : ঝিনাইদহে মিছিল থেকে আটক ৬

 

স্টাফ রিপোর্টার: বিএনপি-জামায়াত নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের ডাকা টানা অবরোধের ৪১তম ও ৭২ ঘণ্টার হরতালের প্রথম দিনে রোববার মাগুরার শালিখা উপজেলায় পুলিশের গুলিতে কাজী মশিয়ার রহমান নামে বিএনপির ১ কর্মী নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় পুলিশসহ আহত হয়েছেন ৬ জন। এছাড়া রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে ১১টি গাড়িতে আগুন দেয়া হয়েছে। ভাঙচুর করা হয়েছে অন্তত ১০টি গাড়ি। দিনাজপুরে গুলিবিদ্ধ শিবির নেতার ঢাকায় মৃত্যু হয়েছে। ককটেল বিস্ফোরণ ঘটানো হয়েছে শাহবাগের গণজাগরণ মঞ্চ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি, গুলশান, খিলগাঁও, মৌচাক, কাকরাইল, পল্টনসহ বিভিন্ন স্থানে। এছাড়া রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে বিএনপি-জামায়াতের ১৭ নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এদের মধ্যে ৫ শিবিরকর্মী ও ১২ বিএনপিকর্মী। দক্ষিণখান এলাকা থেকে গ্রেফতার করা শিবির নেতা এনামুলের বাসা থেকে ৮টি পেট্রোলবোমা উদ্ধার করা হয়েছে। কোতোয়ালি থানা এলাকা থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য রজ্জব আলীকে।

এদিকে সন্ধ্যায় চুয়াডাঙ্গা জেলা ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা ঝটিকা মিছিল বের করে পুলিশের বাধায় তা পণ্ড হয়ে যায়। ঝিনাহদহ জেলা শহরের খণ্ড খণ্ড মিছিল বের করে হরতাল সমর্থকরা। পুলিশ মিছিল থেক ৬ জনকে আটক করেছে।

জেলা ছাত্রদলের যুগ্ম আহ্বায়ক শামীম হাসান টুটুল স্বাক্ষরিত একপ্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছেন, চুয়াডাঙ্গা জেলা ছাত্রদল চলমান হরতাল ও অবরোধের সমর্থনে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছে। গতকাল সন্ধ্যায় ৭টার দিকে চুয়াডাঙ্গা দৌলাতদিয়াড় টেকনিক্যাল স্কুল ও কলেজের সামনে বিক্ষোভ মিছিলটি শুরু হলে পুলিশের বাধায় পুনরায় সেখানে ফিরে গিয়ে চুয়াডাঙ্গা-মেহেরপুর সড়কের উপর সংক্ষিপ্ত সমাবশে করে।

সমাবেশে চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলা ছাত্রদলের সভাপতি মাসুদুল হক মাসুদের সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন জেলা ছাত্রদলের যুগ্ম আহ্বায়ক শামীম হাসান টুটুল, কলেজ ছাত্রদলের সভাপতি আশিকুল হক শিপলু, সাধারণ সম্পাদক ওয়ালিদ হাসান, পৌর ছাত্রদলের যুগ্ম সম্পাদক রাকিবুল হাসান, সদর উপজেলা ছাত্রদল নেতা ফয়সাল আহাম্মেদ বিদ্যুত প্রমুখ। সমাবেশে বক্ত্যারা বলেন, বেগম খালেদা জিয়ার গুলশানে কার্যালয়ে খাবার নিতে না দিয়ে এ অবৈধ সরকার ভোটারবিহীন স্বৈরাচারী সরকার মানবিকতার শেষ বিন্দুটুকুও বিসর্জন দিয়েছে। এ অবৈধ সরকার যে কত হিংস্র তা এ ঘটনার মাধ্যমে দেশবাসির অবহিত হয়েছে। ছাত্রদল নেতারা আরও বলেন, দেশবাসি তাদের এ হিংস্রতার বিরুদ্ধে জেগে উঠেছে। অচিরেই এ সরকারের পতন হবে। নেতারা জেলা বিএনপির আহ্বায়ক মুহা. অহিদুল ইসলাম বিশ্বাসসহ জেলা ব্যাপি গ্রেফতারকৃত সকল নেতাকর্মীদেরকে নিঃশর্ত মুক্তির দাবী জানিয়ে অবরোধে পাশাপাশ শান্তিপূর্ণ হরতাল পালনের জন্য আহ্বান জানান।

দামুড়হুদা প্রতিনিধি জানিয়েছেন, দামুড়হুদায় উজ্জ্বল (২৮) নামের এক বিএনপি কর্মীকে বিশেষ ক্ষমতা আইনের ১৬’র ২ ধারায় গ্রেফতার করেছে পুলিশ। গতকাল রোববার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে দর্শনা তদন্তকেন্দ্রের আইসি এসআই মিজানুর রহমান ও দামুড়হুদা মডেল থানার এসআই মহাব্বত আলী সঙ্গীয় ফোর্স নিয়ে তাকে উপজেলার সুলতানপুর গ্রাম থেকে গ্রেফতার করেন। সে ওই গ্রামের হাশেম আলীর ছেলে। দামুড়হুদা মডেল থানার ওসি কামরুজ্জামান ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, গ্রামের লোকজনের অভিযোগের প্রেক্ষিতেই তাকে ভাঙচুর মামলায় গ্রেফতার করা হয়েছে।

ঝিনাইদহ অফিস জানিয়েছে, বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের ডাকা হরতালের প্রথম দিনে ঝিনাইদহে খণ্ড খণ্ড মিছিল করেছে জেলা বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা। গতকাল রোববার সকাল সাড়ে ৭টার দিকে শহরের হামদহ বাসস্ট্যান্ড থেকে জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি সাজেদুর রহমান পপ্পুর নেতৃত্বে একটি মিছিল বের হয়ে পিটিআই’র সামনে গিয়ে শেষ হয়। অপরদিকে সকাল ৮টার দিকে শহরের আরাপপুর বাসস্ট্যান্ড থেকে জেলা বিএনপির ছাত্র বিষয়ক সম্পাদক আশরাফুল ইসলাম পিন্টুর নেতৃত্বে আরো একটি মিছিল বের হয়। এদিকে নাশকতার আশঙ্কায় জেলার বিভিন্ন উপজেলায় অভিযান চালিয়ে বিএনপি ও জামায়াত-শিবিরের ছয় নেতাকর্মীকে আটক করেছে পুলিশ।

ঝিনাইদহের পুলিশ সুপার আলতাফ হোসেন জানান, কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার রিপোর্টের ভিত্তিতে যৌথবাহিনী শনিবার রাতে নিজ বাসা থেকে জেলা বিএনপির প্রচার সম্পাদক মোয়াজ্জেম হোসেনকে আটক করে। নাশকতার আশঙ্কায় ঝিনাইদহ সদর উপজেলা থেকে দু বিএনপি কর্মী, হরিণাকুণ্ডু উপজেলা থেকে দু জামায়াতকর্মী ও মহেশপুর উপজেলা থেকে এক শিবিরকর্মীকে আটক করা হয়েছে। আটককৃতদের আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে।

মাগুরা প্রতিনিধি জানিয়েছেন, মাগুরার শালিখা উপজেলার ছয় ঘরিয়া হাজামবাড়িতে রোববার সন্ধ্যায় পুলিশের গুলিতে কাজী মশিয়ার রহমান নামের এক বিএনপি নেতা নিহত হয়েছেন। পুলিশের দাবি মশিয়ারসহ আরও কয়েকজন টহল পুলিশের গাড়িতে পেট্রোলবোমা নিক্ষেপ করলে পুলিশের ৩ সাব ইন্সপেক্টর ও ২ কনস্টেবল আহত হন। পরিস্থিতি সামাল দিতে পুলিশ শটগানের গুলি ছুড়লে কাজী মশিয়ার রহমান গুলিবিদ্ধ হন। তাকে মাগুরা সদর হাসপাতালে আনা হলে ডা. মমতাজ উদ্দিন তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

শালিখা থানার ওসি বিপ্লব কুমার নাথ জানান, ঘটনাস্থল থেকে ৪টি পেট্রোলবোমা উদ্ধার করা হয়েছে। নিহত মশিয়ার রহমান শালিখার শতখালী ইউনিয়ন ওয়ার্ড বিএনপির সেক্রেটারি বলে ওসি দাবি করেন। তবে এলাকাবাসী জানিয়েছে নিহত মশিয়ারের কোন দলীয় পদ-পদবি নেই। সে বিএনপি কর্মী। এলাকাবাসী জানান, সন্ধ্যায় ওই এলাকার একটি চায়ের দোকানে বসা অবস্থায় মশিয়ার রহমান ও রফিকুল ইসলাম পাটোয়ারী নামের ২ জনকে ওসি বিপ্লব কুমার নাথের নেতৃত্বে পুলিশ ধরে নিয়ে যায়। এর কিছুক্ষণ পরই গুলির আওয়াজ পাওয়া যায়। এ সময় রফিকুল ইসলাম পাটোয়ারীও আহত হয়েছেন বলে এলাকাবাসী জানান। তবে রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত রাত ৮টায় রফিকুল পাটোয়ারীর কোনো সন্ধান পাওয়া যায়নি। পুলিশের ওপর হামলার ঘটনায় শালিখা থানায় ৩০-৪০ জনকে আসামি করে একটি মামলা করা হয়েছে।

দিনাজপুর প্রতিনিধি জানিয়েছেন, পুলিশের গুলিতে আহত ছাত্রশিবির দিনাজপুর চিরিরবন্দর সাংগঠনিক থানা সভাপতি মতিয়ার রহমান ঢাকায় চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন। রোববার সকাল সাড়ে ১০টায় রাজধানীর জাতীয় হৃদরোগ ইন্সটিটিউটে তার মৃত্যু হয়েছে। হাসপাতালের চিকিৎসকরা ওই আসামি মারা যাওয়ার কথা জানিয়েছেন। শনিবার বিকাল ৫টার দিকে রানীরবন্দর বাজার থেকে মতিয়ারের বড় ভাই ডা. খোদাবক্সকে গ্রেফতার করে পুলিশ। প্রতিবাদে তাৎক্ষণিক স্থানীয়রা বিক্ষোভ মিছিল বের করলে পুলিশ নির্বিচারে গুলি চালায়। এতে হাত ও পায়ে গুলিবিদ্ধ হয়ে মারাত্মক আহত হন মতিয়ার। উন্নত চিকিৎসার কথা বলে হাসপাতাল থেকে ডিবি কার্যালয়ে নিয়ে শিবির নেতা মতিয়ারকে ঠাণ্ডা মাথায় গুলি করে হত্যা করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছে ছাত্রশিবির। গুলির পর চিকিৎসা থেকে তুলে নিয়ে নির্মমভাবে এ হত্যার নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় সভাপতি আবদুল জব্বার ও সেক্রেটারি আতিকুর রহমান।