৫ জানুয়ারির নির্বাচন অনুষ্ঠিত না হলে দেশ পাকিস্তান-আফগানিস্তানে পরিণত হতো

চুয়াডাঙ্গা ও মেহেরপুরে বিভিন্ন স্থানে অপরাধ প্রতিরোধ পথসভায় খুলনা রেঞ্জ ডিআইজি এসএম মনিরুজ্জামান

 

মেহেরপুর অফিস: বাংলাদেশ পুলিশের খুলনা রেঞ্জ ডিআইজি এসএম মনিরুজ্জামান বলেছেন, দেশ যখন অর্থনৈতিকভাবে এগিয়ে চলেছে তখন হরতাল অবরোধ দিয়ে একটি গোষ্ঠী দেশকে পেছনের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। যিনি এ হরতালের নায়ক তিনি মানুষ পুড়িয়ে মেরে, রেললাইন উপড়ে ফেলে হাজার হাজার মানুষকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিচ্ছেন। ৫ জানুয়ারির নির্বাচন অনুষ্ঠিত না হলে দেশ পাকিস্তান- আফগানিস্তানে পরিণত হতো। যারা পেট্রোলবোমা নিক্ষেপ করে নিরীহ মানুষকে হত্যা করছে তারা দেশের শত্রু, জাতির শত্রু। তারা সন্ত্রাসী ও জঙ্গিবাদী। তাদেরকে ওই পেট্রোলেই মারতে হবে। দেশকে এগিয়ে নিতে নাশকতা কর্মকাণ্ড সম্মিলিতভাবে প্রতিরোধে দেশবাসীকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান তিনি।

গতকাল বুধবার এক ঝটিকা সফরে মেহেরপুর সদর উপজেলার রাজনগর গ্রামের মোড়ে, মেহেরপুর শহর, মুজিবনগর ও গাংনী বাসস্ট্যান্ডে সন্ত্রাস ও নাশকতা প্রতিরোধে পৃথক চারটি পথসভায় প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি উপরোক্ত কথাগুলো বলেন। তার সফরসঙ্গী হিসেবে অনুষ্ঠানে আরো উপস্থিত ছিলেন বিজিবি কুষ্টিয়া সেক্টর কমান্ডার কর্নেল জাবেদ সুলতান, ৱ্যাব-৬ (খুলনা) অধিনায়ক লে. কর্নেল এনামুল আরিফ সুমন, অতিরিক্ত ডিআইজি দিদার আহম্মেদ ও রফিকুল ইসলাম, মেহেরপুর পুলিশ সুপার হামিদুল আলম, কুষ্টিয়া ৪৭ বিজিবির অপারেশন অফিসার মেজর মেহেদী ও ৱ্যাব-৬ গাংনী ক্যাম্প কমান্ডার এএসপি উৎপল রায়সহ প্রশাসনের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তাবৃন্দ।

মেহেরপুর জেলা স্বাধীনতার উদয়ভূমি উল্লেখ করে ডিআইজি এসএম মনিরুজ্জামান বক্তৃতায় আরো বলেন, একাত্তরে এদেশের স্বাধীনতাকামী নিরস্ত্র মানুষ যুদ্ধ করে পাকিস্তানি হায়েনাদের হটিয়ে স্বাধীনতা ছিনিয়ে এনেছিলেন। আলবদর আল শামস পাকিস্তানি পেত্মারা আবারো এদেশটাকে পাকিস্তান বানাতে নাশকতা সৃষ্টি করছে। বিদেশি প্রভু কিংবা জঙ্গিবাদের কাছে মাথা নত করা হবে না। একাত্তরের মতো নিরস্ত্র বাঙালি নয়, বর্তমান পরিস্থিতি মোকাবেলার জন্য সাধারণ মানুষের পাশে রয়েছে রাষ্ট্রীয় শক্তি। নিজেকে রাজনীতির ঊর্ধ্বে দাবি করে পুলিশের এ কর্মকর্তা আরো বলেন, জনগণের টাকায় সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন হয়। তাই জনগণের জানমালের নিরাপত্তায় যতো কঠোর আইন প্রয়োগ করতে হয় তাই করা হবে।

পেট্রোলবোমায় মানুষ হত্যাকারীদেরকে জনগণের শত্রু উল্লেখ করে তিনি হুঁশিয়ার উচ্চারণ করে বলেন, তাদের হাত থেকে নারী শিশু ও সাধারণ মানুষ রেহাই পাচ্ছে না। একজন মানুষের মৃত্যুর মধ্যদিয়ে তার পরিবারও ধ্বংস হচ্ছে। তাই প্রয়োজনে পেট্রোলবোমা হামলাকারীদের পরিবারের সদস্যদেরকে রেহাই দেয়া হবে না।

রাতের আঁধারে পেট্রোল ও বোমা হামলায় মানুষ মারার ঘটনা জঙ্গিবাদী মানবতাবিরোধী আখ্যায়িত করে তিনি বলেন, তারা ছার পোকার মতো এদেশের শান্তিপ্রিয় মানুষের রক্ত চুষে খাচ্ছে। জনগণ ও প্রশাসন এক হলে তারা পালানোর পথ পাবে না। তারা কাউকে পুড়িয়ে মারলে ছারপোকাগুলোকে টিপে মারতে হবে। ১৯৭১, ২০১৩ এবং ২০১৫ সালের বর্তমান নাশকতার ঘটনা আর চাই না উল্লেখ করে তিনি বলেন, পাড়ায় পাড়ায় মহল্লায় মহল্লায় সন্ত্রাস ও নাশকতাবিরোধী কমিটি গঠন করতে হবে। গুটি কয়েক নাশকতাকারীদের জন্য বিপুল সংখ্যক শান্তিপ্রিয় মানুষ অসহায় হয়ে বসে থাকতে পারে না। সন্ত্রাস ও নাশকতা প্রতিরোধে সর্বস্তরের মানুষের সম্মিলিত প্রতিরোধের আহ্বান জানান তিনি।

ডিআইজির বক্তব্যের সাথে একমত পোষণ করে অন্য বক্তাদের মধ্যে বিজিবি কুষ্টিয়া সেক্টর কমান্ডার বলেন, নাশকতা ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড মোকাবেলায় সর্বদা কাজ করছেন বিজিবি সদস্যরা। ৱ্যাব-৬ (খুলনা) অধিনায়ক বলেন, অজারকতা সৃষ্টিকারীদের কঠোর হস্তে দমন করা হবে। অনুষ্ঠানে আরো বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দ ও জনপ্রতিনিধিবৃন্দ।

মেহেরপুর কমিউনিটি সেন্টার চত্বরের পথসভায় আরো উপস্থিত ছিলেন মেহেরপুর-১ আসনের সংসদ সদস্য ফরহাদ হোসেন দোদুল, জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি আসকার আলী ও সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি গোলাম রসুল, সদর থানার ওসি আহসান হাবীব। গাংনী পথসভায় উপস্থিত ছিলেন মেহেরপুর-২ আসনের সংসদ সদস্য মকবুল হোসেন, উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সাহিদুজ্জামান খোকন, পৌর মেয়র আহম্মেদ আলী, গাংনী থানার ওসি আকরাম হোসেন, জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মকলেছুর রহমান মুকুল, কৃষি বিষয় সম্পাদক শহিদুল ইসলাম শাহ, বিশিষ্ট ব্যবসায়ী আশরাফুল ইসলাম, যুবলীগ সভাপতি মোশারফ হোসেনসহ আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীবৃন্দ। অপরদিকে মুজিবনগরের কেদারগঞ্জ বাজারের পথ সভায় উপস্থিত ছিলেন মুজিবনগর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি জিয়া উদ্দীন বিশ্বাস, সম্পাদক রফিকুল ইসলাম, জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আমাম হোসেন মিলু, বন ও পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক আয়ুব হোসেন প্রমুখ।

দামুড়হুদা প্রতিনিধি জানিয়েছেন, যারা পেট্রোলবোমা ছুড়ে মানুষ মারতে আসবে তাদের ওই পেট্রোল দিয়েই পুড়িয়ে মারা হবে। যারা গাড়িতে ইট নিক্ষেপ করবে তাদের ওই হাত কেটে ফেলা হবে। যারা পেট্রোল বোমা ছুড়ে মানুষ মারছে তারা মানুষ নয় তারা মোনাফেক। কতিপয় কুলাঙ্গারের বাচ্চারা চোরের মতো চোরা গুপ্তা হামলা চালাচ্ছে। এদের সংখ্যাও বেশি না। আপনারা তাদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলুন। রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তাবাহিনী আর জনগণ এ দু শক্তি এক হলে ওই গুটি কয়েক দুর্বৃত্ত পালানোর জাগা পাবে না। গতকাল বুধবার সন্ধ্যায় দামুড়হুদা উপজেলা কমিউনিটি পুলিশিং ফোরামের আয়োজনে দামুড়হুদা মডেল থানার সহযোগিতায় অপরাধ প্রতিরোধ বিষয়ক পথসভায় খুলনা রেঞ্জ ডিআইজি মো. মনিরুজ্জামান উপরোক্ত কথাগুলো বলেন।

উপজেলা কমিউনিটি পুলিশিং ফোরামের সভাপতি সিরাজুল আলম ঝন্টুর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় ৱ্যাব খুলনা-৬’র পরিচালক লে. কর্নেল এনামুল আরিফ সুমন বীর বলেন, নাশকতা সৃষ্টিকারীদের কোনো ছাড় নেই। কারণ রাজনীতি আর নাশকতা এক নয়। যারা নাশকতা সৃষ্টির চেষ্টা করবে ৱ্যাব তাদের বিরুদ্ধে সর্বশক্তি নিয়োগ করবে। উপজেলা কমিউনিটি পুলিশিং ফোরামের সদস্য সচিব ইউপি চেয়ারম্যান এসএএম জাকারিয়া আলমের সঞ্চালনায় পথসভায় আরো বক্তব্য রাখেন চুয়াডাঙ্গা-২ আসনের সংসদ সদস্য আলী আজগার টগর ও ঝিনাইদহ জেলার পুলিশ সুপার মো. আলতাফ হোসেন। উপস্থিত ছিলেন খুলনা রেঞ্জের এডিশনাল ডিআইজি মো. দিদার আহম্মেদ ও মো. রফিকুল ইসলাম, চুয়াডাঙ্গা জেলার পুলিশ সুপার মো. রশীদুল হাসান, চুয়াডাঙ্গা-৬ বিজিবির পরিচালক এসএম মনিরুজ্জামান, সহকারী পুলিশ সুপার (সার্কেল) আবু সুফিয়ান। অনুষ্ঠানটির সার্বিক তত্ত্বাবধানে ছিলেন দামুড়হুদা মডেল থানার ওসি কামরুজ্জামান ও ওসি (তদন্ত) ফকির আজিজুর রহমান।

জীবননগর ব্যুরো জানিয়েছে, জীবননগর থানা কমিউনিটি পুলিশিং ফোরাম কর্তৃক আয়োজিত অপরাধ প্রতিরোধ পথসভায় খুলনা রেঞ্জ ডিআইজি এসএম মনিরুজ্জামান দেশের বর্তমান নৈরাজ্যকর পরিস্থিত, পেট্রোলবোমা মেরে নিরীহ মানুষ হত্যা, যানবাহন ভাঙচুরসহ অগ্নিসংযোগ ও নাশকতার বিরুদ্ধে বক্তব্য রেখেছেন। ডেপুটি ইন্সপেক্টর জেনারেল এসএম মনিরুজ্জামান বলেন, অতীতে অনেক আন্দোলন-সংগ্রাম হয়েছে। প্রতিবাদও জানানো হয়েছে। সে প্রতিবাদ জানানোর ভাষা ছিলো একরকম। কিন্তু বর্তমানে পাকিস্তানের পরাজিত প্রেতাত্মা একটি গ্রুপ প্রতিবাদ জানানোর নামে দেশে নৈরাজ্য সৃষ্টি করে চলেছে। যানবাহন ভাঙচুর করছে। অবরোধের নামে পেট্রোলবোমা ছুঁড়ে নিরীহ মানুষ পুড়িয়ে হত্যা করছে। হরতালের নামে দেশকে পেছনের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। তিনি বলেন, এ সব কুলাঙ্গাররা রেহাই পাবে না। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ সব কুলাঙ্গারদের প্রতিরোধে প্রত্যেকটি ওয়ার্ডে ও গ্রামে প্রতিরোধ কমিটি গড়ে তোলার নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি বলেন, আপনি যদি আক্রান্ত হন, তাহলে তা প্রতিরোধ করতে সংবিধানিকভাবে আপনারও অধিকার রয়েছে। এসব ছারপোকাদের টিপে মারতে হবে। ডিআইজি এসএম মনিরুজ্জামান তার ৩১ মিনিটের বক্তব্যে তিনি দেশের বর্তমান অবস্থা, অর্থনৈতিক অবস্থা, আইনশৃঙ্খলার সার্বিক পরিস্থিতি ও আমাদের সকলের কি করণীয় তা তুলে ধরে দিক নির্দেশনা বক্তব্য রাখেন।

চুয়াডাঙ্গা পুলিশ সুপার রশীদুল হাসানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত পথসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন চুয়াডাঙ্গা-২ আসনের সংসদ সদস্য হাজি আলী আজগার টগর। তিনি তার বক্তব্যে বলেন কয়েক দিন আগে জীবননগরে দাঁড়িয়ে থাকা বাসে আগুন দেয়া হয়েছে। আর যদি কোনো যানবাহনে আগুন দেয়া হয় তাহলে তাদেরকে চি‎হ্নিত করে তাদের বাড়ি আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেয়া হবে। এছাড়াও বক্তব্য রাখেন চুয়াডাঙ্গা-৬ বিজিবি ব্যাটালিয়ন কমান্ডার লে. কর্নেল এসএম মনিরুজ্জামান। এছাড়াও মঞ্চে খুলনার অতিরিক্ত ডিআইজি (প্রশাসন) দিদার আহমেদ, অতিরিক্ত ডিআইজি (ক্রাইম) খন্দকার রকিবুল ইসলাম, খুলনা আরআরএফ কমান্ডেন্ট ড. নাজমুল করীম, জীবননগর উপজেলা চেয়ারম্যান আবু মো. আ. লতিফ অমল, উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান হাজি হাফিজুর রহমান ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান আয়েশা সুলতানা লাকিসহ পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। উল্লেখ্য, বিকেল ৩টার দিকে জীবননগরে পথসভা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা থাকলেও ব্যস্ততার কারণে অতিথিবৃন্দ রাত ৮টার দিকে সভাস্থলে উপস্থিত হন।

সরোজগঞ্জ প্রতিনিধি জানিয়েছেন, গতকাল বুধবার রাতে চুয়াডাঙ্গার সরোজগঞ্জ বাজারে অবরোধ প্রতিরোধ বিষয়ক মতবিনিময় সভার প্রধান অতিথি খুলনা রেঞ্জের ডিআইজি এসএম মনিরুজ্জামান বলেছেন, মুষ্টিমেয় কিছু অসাধু ব্যক্তি নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে। সাধারণ মানুষ জেগে উঠলে ওদের দাঁড়ানোর স্থান থাকবে না। আর যারা এসব অপকর্ম করে মানুষের জানমালের ক্ষতি করছে তাদেরকে আমাদের নিকট তুলে দিন। পুলিশের পক্ষ থেকে যা যা করা দরকার এখন থেকে তাই করবে পুলিশ। বক্তব্য রাখেন- খুলনা বিভাগীয় পুলিশের অতিরিক্ত ডিআইজ দিদারুল আহম্মেদ, খন্দকার রফিকুল ইসলাম, চুয়াডাঙ্গা বিজিবি-৬ পরিচালক এসএম মনিরুজ্জামান, আরআরএফ’র খুলনা বিভাগীয় অফিসার ড. নাজমুল করীম, চুয়াডাঙ্গা পুলিশ সুপার রশীদুল হাসান, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার বেনজীর আহাম্মদ, সদর উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান আজিজুল হক হয়রত, সরোজগঞ্জ বাজার কমিটির সভাপতি হাজি আব্দুল্লা শেখ, পদ্মবিলা ইউপি চেয়ারম্যান আবু তাহের বিশ্বাস, কুতুবপুর ইউপি চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম, তিতুদহ ইউপি চেয়ারম্যান আক্তার হোসেন, শঙ্করচনদ্র ইউপি চেয়ারম্যান আ. রহমান, সাবেক চেয়ারম্যান আবু তাহের বিশ্বাস, চুয়াডাঙ্গা সদর থানার ওসি আসাদুজ্জামান মুনসী, ওসি (তদন্ত) কামরুজ্জামান খান, জেলা কৃষকদলের সভাপতি আজিজুল হক, চুয়াডাঙ্গা সদর থানা ছাত্রলীগের সাবেক সম্পাদক আলী আহম্মদ হাসানুজ্জামান মানিক, সভাপতি জুয়েল রানা প্রমুখ।