বরাদ্দ থাকা সত্ত্বেও বেডশিট মিললেও তিন যুগেও মেলেনি বালিশ ও মশারি

চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীরা দীর্ঘদিন ধরে সুবিধাবঞ্চিত

 

আলম আশরাফ/কামরুজ্জামান বেল্টু/উজ্জল মাসুদ: চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে দীর্ঘদিন ধরে রোগীদের জন্য বেডশিট, বালিশ ও মশারি বরাদ্দ থাকলেও সুবিধাবঞ্চিত হচ্ছেন রোগীরা। মাঝে মধ্যেই নার্স ও রোগীর লোকজনের সাথে বাগবিতণ্ডার সৃষ্টি হয়। ভুক্তভোগীরা অভিযোগ করে বলেন, অনেক সময় বেডশিট পাওয়া গেলেও বালিশ ও মশারি চোখে দেখিনি কোনোদিন। ১০০ শয্যা হাসপাতালে রোগীদের জন্য ৩ গুণ বেডশিট বরাদ্দ রাখা হয়েছে। তার মধ্যে প্রতিবেডে একটি বেডশিট, বালিশ ও মশারি থাকার কথা থাকলেও কিছু বেডে বেডশিট থাকলেও বালিশ ও মশারি চোখে পড়েনি তিন যুগেও।

গতকাল বুধবার সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, বালিশ ও মশারি তো দূরের কথা কোনো কোনো বেডে বেডশিটও নেই। বেড বাদে অতিরিক্ত রোগী মেঝেতে রয়েছে তাদের তো দুর্ভোগের শেষ নেই। অনেক সময় দুর্ঘটনার শিকার হয়ে দ্রুত হাসপাতালে নেয়া হলে বেড পাওয়া না গেলেও একটি বেডশিটও তাদের কপালে জোটে না। খালি মেঝেতে থাকতে হয় তাদের। অজ্ঞাত রোগী হলে তো আর কথা নেই। কে বা তাদের করবে চিকিৎসা কে বা দেবে তাদের বেডশিট? অবহেলায় কয়েকদিন পড়ে থাকার পর মৃত্যুর দৃশ্য চোখে পড়ে। নতুন নয়; এ সমস্যা দীর্ঘদিনের। কবে হবে এর সমাধান? হাসপাতালে ভর্তি হওয়া রোগীদের সাথে কথা বলে জানা যায় অনেক সময় বেডশিট চেয়ে না পেয়ে রাজনৈকি নেতা কিংবা পরিচিত কাউকে দিয়ে নার্সদের কাছে সুপারিশ করলেই মেলে বেডশিট।

দামুড়হুদার দলিয়ারপুর গ্রামের শহিদুল ইসলাম সার্জারি ওয়ার্ডে ৫ দিন আগে ভর্তি হয়েও তার কপালে বেড তো দূরের কথা একটি বেডশিটও জোটেনি। তিনি জানান, নার্সের কাছে একাধিকবার বেডশিট চাওয়া হলে নার্স সাফ জানিয়ে দেন বেডশিট নেই। একই ওয়ার্ডে ভর্তি হওয়া চুয়াডাঙ্গা পৌর এলাকার তালতলা গ্রামের সাইদুর রহমান গত মঙ্গলবার ভর্তি হন। তার চিত্র একই রকম। ওয়ার্ডে দায়িত্বে থাকা স্টাফ নার্সরা জানান, স্টোররুমের চাবি থাকে ইনচার্জের কাছে ইচ্ছা থাকলেও দিতে পারি না।

চুয়াডাঙ্গা জীবননগর বাস্ট্যান্ডপাড়ার শান্তনা খাতুন মেডিসিন ওয়ার্ডে ভর্তি হন কয়েক দিন আগে। তিনি বেড পেলেও তার বেডে নেই বেডশিট। তিনি বলেন, নার্সের কাছে বেডশিট চেয়ে পাইনি।

এ বিষয়ে মহিলা সার্জারি ওয়ার্ড ইনচার্জ শাহানাজ পারভীন জানান, বেডশিট ধোপা শুকুর আলী সপ্তায় একদিন এসে পরিষ্কার করার জন্য নিয়ে যান। সময়মতো ফেরত না আসার কারণে সমস্যার সৃষ্টি হয়। রোগীর লোকজন বেডশিট চাইলে দিতে না পারায় তাদের সাথে বাগবিতণ্ডা বাধে। তিনি আরও জানান, বেডশিট তিন সেট আছে। ধোপা এক সেট ধোলাই করার জন্য নিয়ে যাওয়ার কথা। এক সেট ব্যবহার ও এক সেট স্টোরে থাকার কথা।

এ বিষয়ে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. মাসুদ রানা জানান, হাসপাতালে বেডশিট, বালিশ ও মশারি বরাদ্দ আছে। একাধিকবার নার্সদের দিতে গেলেও তার নিতে রাজি হননি। কারণ ইতঃপূর্বে অনেক রোগীর লোকজন হাসপাতালের বালিশ নিয়ে যায় বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ কারণে নার্সরা নিতে রাজি হন না। তবে আমরা আগামী সপ্তার মধ্যেই এ সমস্যা সমাধান করবো। আজ (গতকাল বুধবার) আমাদের একটি মিটিঙে এ বিষয়ে আলোচনা হয়েছে বলে জানান তিনি।