চলমান রাজনৈতিক অস্থিরতা ও সহিংসতায় আন্তর্জাতিক উদ্বেগ

দেশের চলমান রাজনৈতিক অস্থিরতা ও সহিংসতায় আন্তর্জাতিক উদ্বেগ অব্যাহত রয়েছে। বাংলাদেশের পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে গত শুক্রবার যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র বিভাগ এক বিবৃতিতে বলেছে, অযৌক্তিকভাবে বাসে আগুন দেয়া, দাহ্য পদার্থ ছোড়া, ট্রেন লাইনচ্যুত করাসহ এ ধরনের হামলায় নিরীহ মানুষ হতাহত হওয়ার ঘটনায় তারা মর্মাহত। বিবৃতিতে এ সহিংসতার তীব্র নিন্দা জানানো হয়। সেই সাথে সব দলের প্রতি আহ্বান জানানো হয়, তারা যেন তাদের নেতাকর্মীকে যে কোনো ধরনের সহিংসতা চালানো থেকে বিরত থাকার নির্দেশ দেন। এর আগে বাংলাদেশের সহিংস পরিস্থিতিতে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে এক বিবৃতিতে ব্রিটিশ হাইকমিশনার রবার্ট গিবসন বলেছেন, গোটা বাংলাদেশে সহিংসতায় এক মাসে ৫০ জন নিহত হওয়া এবং শ শ মানুষ ভয়াবহভাবে আহত হওয়ার ঘটনায় আমি গভীরভাবে শোকাহত। ইতঃপূর্বে ইউরোপীয় পার্লামেন্ট এবং আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালও দেশের চলমান সহিংসতায় উদ্বেগ প্রকাশ করে বিবৃতি দিয়েছে। বস্তুত এ আন্তর্জাতিক উদ্বেগের সাথে দেশবাসীর মনোভাবের কোনো পার্থক্য নেই। এক মাস ধরে দেশে যা ঘটছে তাতে জননিরাপত্তা চরম হুমকির সম্মুখিন। প্রতিদিন মানুষ পেট্রোলবোমা ও ককটেল হামলার শিকার হচ্ছে। কেউ রাস্তায় বেরিয়ে সুস্থ ও অক্ষত দেহে বাড়ি ফিরে যাবে সে নিশ্চয়তা নেই। দেশের অর্থনীতি হয়ে পড়েছে বিপর্যস্ত। ব্যাহত হচ্ছে উৎপাদন। পণ্য সরবরাহে বিঘ্ন ঘটায় ঢাকাসহ বিভিন্ন এলাকায় দেখা দিয়েছে পণ্য ঘাটতি। সবজিসহ পচনশীল দ্রব্যাদি স্থানান্তরিত না হতে পারায় নষ্ট হচ্ছে ব্যাপক হারে। খেটে খাওয়া মানুষ পড়েছে চরম দুর্ভোগে। তারা জরুরি প্রয়োজনেও দূরযাত্রায় যেতে না পারায় দেখা দিচ্ছে নানা সঙ্কট। কয়েক দফা পেছানোর পর গত শুক্রবার এসএসসি পরীক্ষা শুরু হলেও তা আবারও পড়েছে অনিশ্চয়তায়। এ অবস্থা চলতে থাকলে শিগগিরই দেশ সবক্ষেত্রে ভয়াবহ সঙ্কটে নিপতিত হবে। এটা বিদেশিরা বোঝেন, দেশের ব্যবসায়ীরা বোঝেন, কৃষক বোঝেন, শিক্ষার্থীরা বোঝেন, ভুক্তভোগীসহ সবাই বোঝেন। শুধু দেশের রাজনৈতিক নেতারা কেন এটা বুঝতে পারছেন না, তা আমাদের বোধগম্য নয়। তাদের বক্তব্য, বিবৃতি, আচরণে দেখা যায় যতোই দিন যাচ্ছে, তারা ততোই অনমনীয় হয়ে উঠছেন। দেশ ও জনগণের এত ক্ষতির পরও তাদের মানসিকতায় কোনো পরিবর্তন লক্ষ করা যাচ্ছে না। ফলে তীব্রতর হচ্ছে সঙ্কট।

এটা সহজেই বোঝা যায়, বিরোধী পক্ষ যদি অবরোধ প্রত্যাহার করে নেয় এবং সেই প্রেক্ষাপটে সরকার তাদের প্রতি সংলাপের আহ্বান জানায়, তাহলেই পরিস্থিতি শান্ত হতে পারে। কিন্তু এ সামান্য শুভবুদ্ধির উদয় হচ্ছে না কোনো পক্ষের মধ্যেই। বোঝা যাচ্ছে, তাদের কেউই হারতে চাচ্ছে না। বিরোধী পক্ষ মনে করছে, অবরোধ প্রত্যাহার করে নিলে সেটা হবে তাদের জন্য পরাজয় আর সরকারের ধারণা, অবরোধের মধ্যে সংলাপের আহ্বান জানালে প্রমাণ হবে যে তারা পিছু হটেছেন। কিন্তু বাস্তবতা হলো, সহিংসতা বন্ধ এবং একটি রাজনৈতিক সমঝোতা হলে জয়ী হবে জনগণ। তাই সরকার ও বিরোধী উভয় পক্ষের প্রতি আমাদের আবারও নিবেদন- বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থাসহ আমাদের বিদেশি বন্ধুদের উদ্বেগ আমলে নিন। তাদের এবং একই সাথে দেশবাসীর উদ্বেগের প্রতি সম্মান দেখিয়ে সমঝোতার পথে আসুন।