মায়াময়ী মাতৃভূমি ভ্রমণে মৃত্যুঞ্জয়ী মামুন

সবুজে ঘেরা আপনভূবন ঘুরে জ্ঞান অর্জনই শুধু নয় সচেতনতা সৃষ্টিও অন্যতম উদ্দেশ্য

 

স্টাফ রিপোর্টার: দুর্বৃত্ত হানায় মৃত্যুর দ্বারপ্রান্ত থেকে ফিরে আসা মামুন খন্দকার নিজেকে শুধু কবি হিসেবেই মেলে ধরেননি, তিনি তার দীর্ঘদিনের লালিত স্বপ্ন বাস্তবায়ন করতে চলেছেন। তারই অংশ হিসেবে তিনি আজ রোববার সকাল ১০টায় চুয়াডাঙ্গা শহীদ মিনার পদদেশ থেকে স্বদেশ ঘুরে দেখার উদ্দেশে যাত্রা শুরু করছেন। ব্যাটারিচালিত তিন চাকার অটোবাইকযোগে সবুজে ঘেরা মায়াময়ী মাতৃভূমি ভ্রমণের প্রাক্কালে চুয়াডাঙ্গাবাসীর দোয়া কামনা করেছেন তিনি। গতকাল শনিবার সকাল সাড়ে ১১টায় চুয়াডাঙ্গা প্রেসক্লাবে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ দোয়া ও সহযোগিতা কামনা করে দেশ ভ্রমণের স্বপ্ন এবং উদ্দেশ্য মেলে ধরেন।

আজ থেকে প্রায় এক যুগ আগে ২০০২ সালে নিজ বাড়ির সামনে তথা আলমডাঙ্গা কলেজপাড়ায় দুর্বৃত্ত হামলায় ক্ষতবিক্ষত হন। গলায় কোপ লাগে। ধরালো অস্ত্রের আঘাতে স্পাইনাল কডও ক্ষতবিক্ষত হয়। দীর্ঘ প্রায় ৯ মাস চিকিৎসা নিয়ে কিছুটা সুস্থতা ফিরে পেলেও স্বাভাবিক চলাচলের ক্ষমতা হারিয়েছেন। তাতে কী? মানুষের অদম্য ইচ্ছে যখন আকাশে ঘর বাধার স্বপ্ন বাস্তবায়নে সহায়ক হয়েছে, তখন মামুন খন্দকার নিজেকে কবি করে তুলতে পারবেন না কেনো? বঙ্গবন্ধুকে নিয়েই তিনি লিখেছেন দু হাজারের অধিক ছড়া কবিতা। ছড়া কবিতা লেখার পাশাপাশি মনের গহিনে লালন করা স্বপ্নটা বাস্তবায়নের জন্য দীর্ঘদিন ধরেই ছটফট করেছেন তিনি। গতকাল চুয়াডাঙ্গা প্রেসক্লাবে তিনি তার এ স্বপ্ন আর স্বপ্ন বাস্তবায়নের আকূলতার কথা জানিয়ে সংক্ষিপ্ত লিখিত বক্তব্যে বলেছেন, নাম- কবি মামুন খন্দকার। চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গা উপজেলা শহরের কলেজপাড়ার বাসিন্দা। পিতা লুৎফর রহমান। মাতা জহুরা খাতুন। ৪ ভাইয়ের মধ্যে ছোট। স্বদেশ সম্পর্কে জ্ঞান অর্জনের জন্য ব্যাটারিচালিত ভ্যানযোগে সমগ্র বাংলাদেশ ভ্রমণ করার উদ্দেশে ৮ ফেব্রুয়ারি রোববার যাত্রা শুরু করবো। ইতোমধ্যে ভ্রমণের জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র চূড়ান্ত সম্পন্ন হয়েছে। ভ্রমণকালে সকল জেলা ও উপজেলার উল্লেখযোগ্য পর্যটন কেন্দ্রগুলো ঘুরে দেখার ইচ্ছে রয়েছে। প্রতিটি জেলার জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার, উপজেলা নির্বহী অফিসার, জনপ্রতিনিধি, সাংবাদিক ও দেশ বরণ্য ব্যক্তিদের সাথেও সৌজন্য সাক্ষাতের চেষ্টা থাকবে।

লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেছেন, অটিজম ও প্রতিবন্ধী, সড়ক দুর্ঘটনা প্রতিরোধ, মাদক ও দুর্নীতিমুক্ত সমাজ গঠনের লক্ষ্যে সামাজিক সচেতনতা ও বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত আত্মজীবন পাঠ করার আহ্বান জানানো হবে দেশ ভ্রমণের অন্যতম উদ্দেশ্য।

সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাবে মামুন খন্দকার বলেন, আমার ওপর যারা নৃশংস হামলা চালিয়েছিলো। যাদের নৃশংসতায় আমি শারীরিক প্রতিবন্ধী তাদের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলাটি এখনও বিচারাধীন। তাদের নৃশংসতায় মৃত্যুর দ্বারপ্রান্ত থেকে ফিরেছি। দেশ ও দশের জন্য কিছু করতে চাই বলেই জ্ঞান অর্জনের জন্য সবুজে ঘেরা মায়ময়ী জন্মভুমিটাকে একটু নয়ন ভরে দেখতে চাই। আমার এ ইচ্ছের কথা জানার পর তা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে চুয়াডাঙ্গা-১ আসনের সংসদ সদস্য জাতীয় সংসদের হুইপ বীর মুক্তিযোদ্ধা সোলায়মান হক জোয়ার্দ্দার ছেলুন ৪০ হাজার টাকার সহযোগিতা করেছেন। অনেকেই সহযোগিতার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। দেশ ভ্রমণকালে অটোরিকশাচালক হিসেবে একজন সহযোগিকে সাথে নিয়েছি। ব্যাটারি ৬ ঘণ্টা চার্জ দিয়ে ১০ ঘণ্টা পথ চলা যাবে ধরে নিয়েই যাত্রা করছি। ঠিক কতোদিনে এ ভ্রমণ সম্পন্ন হবে তা এখনই বলা কঠিন, তবে যতোদিনই লাগুক স্বপ্নটা বাস্তবায়ন করেই ফিরবো বলে নিজের সাথে নিজে প্রতিজ্ঞা করেছি।